Friday, December 5, 2025

তামিল সিনেমার প্রথম সুপারস্টারের অন্ধকার মুখোশ

তিনি ছিলেন তামিল সিনেমার প্রথম সুপারস্টার। ভক্তরা তাকে আক্ষরিক অর্থেই দেবতার আসনে বসিয়েছিল। কিন্তু সেই দেবতার মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে ছিল এক ঠান্ডা মাথার অপরাধীর চেহারা। বলা হচ্ছে এম. কে. ত্যাগরাজা ভাগবথার— বা এমকেটি— সেই কিংবদন্তি অভিনেতার কথা, যিনি তার আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তাকে কলঙ্কিত করেছিলেন এক সাংবাদিকের রক্তে।

১৯৩৪ সালে পাভালক্কোডি ছবির মাধ্যমে অভিনয়জগতে প্রবেশ। এরপর চিন্তামণি (১৯৩৭), অম্বিকাপতি (১৯৩৭) এবং হরিদাস (১৯৪৪)— একের পর এক সুপারহিট ছবিতে অভিনয় করে এমকেটি তামিলনাড়ুর অবিসংবাদিত চলচ্চিত্র আইকনে পরিণত হন। তার হরিদাস ছবিটি মাদ্রাজের একটি থিয়েটারে টানা ১১৪ সপ্তাহ প্রদর্শিত হয়— যা সে সময়ের জন্য এক রেকর্ড। সাধারণ মানুষ তাকে ভালোবাসতেন, এমনকি পূজাও করতেন। কিন্তু সেই সম্মানিত তারকার নামই জড়িয়ে গেল এক নৃশংস হত্যাকাণ্ডে।

সি. এন. লক্ষ্মীকান্তন হত্যা: ভারতের ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য সাংবাদিক হত্যার নজির

সি. এন. লক্ষ্মীকান্তন ছিলেন একজন বিনোদন সাংবাদিক। তিনি তারকা–সেলিব্রিটিদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে গসিপ, অনুমাননির্ভর তথ্য ও সমালোচনামূলক লেখা প্রকাশ করতেন। ফলে তিনি চলচ্চিত্র অঙ্গনের বহু প্রভাবশালী ব্যক্তির রোষানলে পড়েছিলেন।

১৯৪৪ সালের ৮ নভেম্বর, এক প্রকাশ্য রাস্তায় লক্ষ্মীকান্তনকে নির্মমভাবে ছুরিকাঘাত করা হয়। এটি কোনো আকস্মিক হামলা ছিল না; ছিল সুপরিকল্পিত একটি হত্যাকাণ্ড। মৃত্যুর আগে দেওয়া তার জবানবন্দিতেই রহস্যের জট খুলে যায়। তিনি স্পষ্ট করে অভিযোগ করেন— এই হামলার পেছনে ছিলেন সুপারস্টার এমকেটি, কৌতুক অভিনেতা এন. এস. কৃষ্ণান এবং প্রযোজক এস. এম. শ্রীরামুলু নাইডু।

পুলিশি তদন্তে উঠে আসে ভীতিকর তথ্য— এ হত্যার জন্য সুপারস্টার এমকেটি ২,৫০০ টাকা কন্ট্রাক্ট দিয়েছিলেন। প্রমাণস্বরূপ পাওয়া যায় একটি চিঠি এবং সংশ্লিষ্ট সাক্ষ্য। পরবর্তীতে এমকেটিকে গ্রেপ্তার করা হয়। আদালত তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন, যদিও তিনি প্রায় ৩০ মাস কারাভোগের পর মুক্তি পান।

মুক্তির পর এমকেটি আবার অভিনয়ে ফেরার চেষ্টা করেন। কিন্তু আর আমজনতার সেই আগের ভালোবাসা পাননি। একসময় যিনি ছিলেন তামিল চলচ্চিত্রের প্রথম সুপারস্টার, তিনি ধীরে ধীরে হারিয়ে যান ইতিহাসের আড়ালে।

অনলাইন ডেস্ক/আর কে-০৫

আরো পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত

এই বিভাগের আরো খবর