Friday, December 5, 2025

জেনেভা ক্যাম্পে মাদক ব্যবসায়ীদের কৌশল বদল,ব্যবহার করছে শিশু ও বৃদ্ধদের

জেনেভা ক্যাম্পের মাদক ব্যবসায়ীরা,পুলিশের সহানুভূতি পেতে ব্যবহার করছে শিশু ও বৃদ্ধদের!

রাজধানীর মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্পের মাদক ব্যবসায়ীরা দিন দিন কৌশল পাল্টে নতুন রূপ ধারণ করছে। গ্রেফতার হওয়ার পর তারা সাধারণ মানুষ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহানুভূতি পেতে নিজের শিশুসন্তান ও পরিবারের অসুস্থ বৃদ্ধ কিংবা স্ত্রীকে ব্যবহার করছেন।

এমন বেশ কয়েকটি ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। যা বেশ আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।

‎অনুসন্ধানে যা জানা গেল

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, এক শিশু তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। এসময় শিশুটির বাবাকে কয়েকজন পুলিশ সদস্য ধরে রেখেছেন। এর মধ্যে একজন এসে ওই ব্যক্তির গালে চড় বসিয়ে জিজ্ঞেস করছেন, আর মাদক আছে কি না?

বাবাকে জড়িয়ে ধরে শিশুর কান্নার ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বেশ সমালোচনা শুরু হয়। সরব হন ফেসবুক ব্যবহারকারীরা। শিশুসন্তানের সামনে বাবার গালে চড় মারায় অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

এ ঘটনায় আটক করে রাখা ব্যক্তির নাম রুস্তম কসাই। তিনি জেনেভা ক্যাম্পের বাসিন্দা ও মাদক বিক্রেতা। তার বাবার নাম জানে আলম কাল্লু।

‎ঘটনার অনুসন্ধানে জানা যায়, বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় জেনেভা ক্যাম্পের ভেতর মূল সড়কে ময়লার ভাগাড়ের পাশে দাঁড়িয়ে ইয়াবা ট্যাবলেট বিক্রি করছিলেন রুস্তম কসাই। এ সময় জেনেভা ক্যাম্পের ভেতর পুলিশের অভিযানে তাকে আটক করা হয়। তখন তার পকেটে থাকা প্রায় ৫০টির বেশি ইয়াবা ট্যাবলেট জব্দ করা হয়।

তবে রুস্তমকে আটকের সঙ্গে সঙ্গে তার ৮ বছর বয়সি শিশুসন্তানকে কাছে ডেকে নিয়ে আসেন তিনি। তার বাবাকে পুলিশ ধরে রেখেছে, এটা দেখে শিশুটি কান্না করতে থাকে। ততক্ষণে পুলিশ তার থেকে মাদক জব্দের চেষ্টা করছিল। ওই সময় রুস্তম কসাইকে পাশ থেকে একজন চড় মেরে তার কাছে লুকিয়ে রাখা আরও ইয়াবা বের করতে বলে। এ ঘটনার পর শিশুটি তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে আরও বেশি কান্না শুরু করে। এরপর পাশ থেকে একজন এসে শিশুটিকে নিয়ে যায়। রুস্তম কসাই ওই সময় পুলিশকে বলেন, তাকে ইয়াবা বিক্রির পাশাপাশি প্রতিদিন চারটা করে ইয়াবা সেবনও করতে হয়।

63
জেনেভা ক্যাম্পে প্রকাশ্যে মাদক কেনাবেচার কিছু চিত্র। ছবি- সংগৃহীত

 

জানা যায়, রুস্তম কসাই জেনেভা ক্যাম্পের একজন খুচরা মাদক কারবারি। তিনি পাইকারদের কাছ থেকে মাদক সংগ্রহ করে মূল সড়কের ময়লার ভাগাড়ের সামনে দাঁড়িয়ে বিক্রি করেন। এছাড়া তিনি গত কয়েক বছর মোহাম্মদপুর, মিরপুর, শেরে বাংলা নগর থানাসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মাদক বিক্রি করতে গিয়ে পুলিশের হাতে মাদকসহ বেশ কয়েকবার গ্রেফতারও হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় প্রায় ১৭টির বেশি মামলা রয়েছে।

‎জেনেভা ক্যাম্পের বাসিন্দারা বলছেন, শিশুকে সামনে নিয়ে আসা এবং পরিবারের বৃদ্ধ অসুস্থ ব্যক্তিকে সামনে নিয়ে এসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহানুভূতি পাওয়া রুস্তমের একটি কৌশল মাত্র। মাদক কারবারিরা তাদের এ কৌশল অবলম্বন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা পেতে চায়।

‎একই দিনে অভিযানে গ্রেফতার করা হয় ইসতেখার নামে আরেক ব্যক্তিকে। ইসতেখার প্রথমে গণমাধ্যমের কাছে দাবি করেন, তিনি শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে এসেছেন। তবে তথ্য বলছে, তিনি জেনেভা ক্যাম্পের ‘বি’ ব্লকের ১৬২ নম্বর বাসার স্থায়ী বাসিন্দা। তার বাবার নাম মৃত ওজির। তার শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে আসার দাবি একেবারেই মিথ্যা।

‎জেনেভা ক্যাম্পের বাসিন্দা ও মাদক বিক্রেতা এসকে নাসিম বলেন, ‘ইসতেখার আগে মাদক বিক্রি করতো। কয়েক বছর ধরে সে মাদক পাইকারি বিক্রি শুরু করে। জেনেভা ক্যাম্পের বিভিন্ন জায়গায় মাদকের খুচরা বিক্রেতাদের ইয়াবা সাপ্লাই দিতেন। সে গ্রেফতারের দিন আল ফালাহ মেডিকেলের গলিতে রুহী নামে এক নারীর কাছে মাদক সাপ্লাই দিতে এসে গ্রেফতার হন। সে এর আগেও বেশ কয়েকবার পুলিশের হাতে মাকদসহ গ্রেফতার হয়েছে।’

‎মোহাম্মদপুর থানা পুলিশের তথ্য বলছে, গ্রেফতার হওয়া ইসতেখার এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত মোহাম্মদপুর থানায় প্রায় ৭-৮ টির বেশি মাদক মামলা রয়েছে।

‎এ দুটি ঘটনায় শিশু ও বৃদ্ধ নারীকে ব্যবহার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহানুভূতি পেতে চেয়েছেন মাদক কারবারিরা। তাদের গ্রেফতারের পর পুলিশকে বিব্রত করতে তারা নানা ধরনের মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন।

‎এ বিষয়ে তেজগাঁও বিভাগের মোহাম্মদপুর জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) জুয়েল রানা বলেন, ‘মাদক কারবারিরা নতুন কৌশল হিসেবে শিশু ও অসুস্থ বৃদ্ধ নারীদের সামনে ঠেলে দিয়ে সহানুভূতি পেতে চায়। তারা নিজেদের নির্দোষ সাজাতে এমন কৌশল অবলম্বন করছে।’

এডিসি জুয়েল রানা আরও বলেন, ‘আমরা মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়ে তাদেরকে আদালতে পাঠিয়েছি। এছাড়া যেসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোর তদন্ত করছি।’

রাতদিন ডেস্ক/জয়-

আরো পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত

এই বিভাগের আরো খবর