ড. আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী: বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামে এবং সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ছাত্ররা অগ্রণী ও গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করেছে। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে ছাত্রদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো আন্দোলনই সফল হয়নি।
২০২৪ সালে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে অতীতের গণ-আন্দোলনগুলোর মিল থাকলেও একটি ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট ভিন্নতা লক্ষ করা গেছে।
অতীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে শামিল হলেও আন্দোলন শেষে তারা পুনরায় তাদের শিক্ষাঙ্গন তথা ক্লাসরুমে ফিরে গেছে। কিন্তু ২০২৪ সালের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের পর শিক্ষার্থীরা তাৎক্ষণিকভাবে ক্লাসে ফিরে যায়নি, বরং বারবার বিভিন্ন দাবিতে তারা রাস্তায় নেমে এসেছে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মাঝে আন্দোলনের সময় যে দৃঢ় ঐক্য গড়ে উঠেছিল, তা এরই মধ্যে অনেকটা ফিকে হয়ে গেছে।
জুলাই আন্দোলনের পর এক বছর গত হয়েছে, কিন্তু এখনো শিক্ষাঙ্গনে স্বস্তি এবং শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ ফিরে আসেনি।
শিক্ষাঙ্গনে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। ছাত্রদের একাংশ নানা অজুহাতে যখন-তখন আন্দোলনের নামে রাস্তায় নেমে আসছে। শিক্ষার্থীরা তাদের নিজস্ব দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলন করবে, এতে দোষের কিছু নেই। তাদের দাবি পূরণের জন্য উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ আছে।
সেই কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি উত্থাপন করা যেতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে বিশ্বের জ্ঞানভাণ্ডার। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান কাজ হলো জ্ঞান বিতরণ, জ্ঞানচর্চা ও জ্ঞান সৃষ্টি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পবিত্র অঙ্গনে এই কর্মকাণ্ডকেই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে।
অশান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্ঞানচর্চা সম্ভব নয়বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের প্রধান কাজ হলো পাঠদানের পাশাপাশি গবেষণাকর্মে নিয়োজিত থাকা।
যে শিক্ষক গবেষণাকাজে যত বেশি সম্পৃক্ত থাকেন, তিনি পেশাজীবনে তত সফল বলে বিবেচিত হন। পশ্চিমা বিশ্ব জ্ঞান-বিজ্ঞানে আমাদের চেয়ে অনেক উন্নত। তাই তাদের সেই উন্নত জ্ঞান আহরণ এবং নিজ দেশের কল্যাণে তা ব্যবহার করার কোনো বিকল্প নেই। জ্ঞান ব্যক্তিপরম্পরায় সঞ্চারিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে যাঁরা শিক্ষকতা করেন, তাঁদের বলা হয় সিনিয়র স্কলার। আর যারা শিক্ষা গ্রহণ করে, তারা হচ্ছে জুনিয়র স্কলার। এভাবেই তাদের মধ্যে মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে জ্ঞান সঞ্চারিত হয়। জ্ঞানের প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করা ঠিক নয়। ছাত্র-শিক্ষকদের যৌথ প্রচেষ্টায় নতুন নতুন জ্ঞানের উদ্ভাবন ও সৃষ্টি হয়।
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে বিদ্যমান সম্পর্কে অবনতি ঘটেছে বলে প্রতীয়মান হয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে জ্ঞানার্জনের উপযোগী পরিবেশ কতটা বিদ্যমান, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় হওয়া উচিত শান্ত-সমাহিত একটি নিরিবিলি প্রতিষ্ঠান, যেখানে গমন করলে স্বস্তিতে প্রাণ ভরে উঠবে। কিন্তু বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা সব সময়ই নানা ইস্যুতে উত্তপ্ত থাকছে।
১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এই বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞানচর্চা, জ্ঞান আহরণ, বিতরণ ও জ্ঞান সৃষ্টির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। বিগত শতাব্দীর ষাটের দশক পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে প্রশংসনীয় অবদান রেখেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান ছিল অত্যন্ত উন্নত। এ কারণে একসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হতো। কিন্তু এখন বিশ্বের এক হাজার উন্নত বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালনের নাম খুঁজে পাওয়া যায় না। ষাটের দশকের প্রথমার্ধে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম। পরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যখন যোগদান করি, তখনো এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার গুণগত মান ছিল ঈর্ষণীয় পর্যায়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং পরবর্তী সময়ে শিক্ষক হিসেবে নিজেকে গৌরবান্বিত মনে হতো। আজ আমার জীবদ্দশায়ই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার যে মান প্রত্যক্ষ করছি, তা মর্মবেদনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মানের অবনতি এবং দুর্দশা শুরু হয় স্বাধীনতার পর থেকে। সেই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতির নামে দলীয় রাজনীতিচর্চা শুরু হয়। ছাত্ররা রাজনীতির নামে জাতীয় রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি শুরু করে। ছাত্রদের মাঝে অর্থবিত্ত অর্জনের আকাঙ্ক্ষা জাগ্রত হয়। আইয়ুব খানের স্বৈরাচারী শাসনামলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ন্যাশনাল স্টুডেন্ট ফেডারেশনের (এনএসএফ) গুণ্ডারা সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাত। তারা সাধারণত হকি স্টিক এবং অন্যান্য দেশীয় অস্ত্র নিয়ে প্রতিপক্ষের ওপর আক্রমণ করত। কিন্তু স্বাধীনতার পর আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারি দলের ছাত্রসংগঠনের সন্ত্রাসীরা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাতে শুরু করে। ১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেন্ট্রাল স্টুডেন্ট ইউনিয়ন (ডাকসু) নির্বাচনের সময় সরকার সমর্থিত ছাত্রসংগঠনের সন্ত্রাসীরা অস্ত্রের মুখে ব্যালট বাক্স ছিনিয়ে নেয়। নিয়মিত বিরতিতে ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হওয়ার কারণে ছাত্র নেতৃত্ব বিকশিত হতে পারেনি। এই সুযোগে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা ছাত্ররাজনীতির মাঠ দখল করে নিয়েছে। ১৯২৫ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত সময়ে ২৩ বছরে ডাকসু নির্বাচন হয়েছে ১৪ বার। ১৯৪৯ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত ২২ বছরে ডাকসু নির্বাচন হয়েছে ১৬ বার। আর ১৯৭২ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত ৫৪ বছরে ডাকসু নির্বাচন হয়েছে মাত্র সাতবার। নিয়মিত ডাকসু নির্বাচন হলে ছাত্ররাজনীতি এতটা কলুষিত হতো না। পতিত স্বৈরাচারী সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়ার পরিবেশ ধ্বংস করে দেওয়া হয়। ছাত্ররাজনীতির নামে এক শ্রেণির ছাত্র নেতা চাঁদাবাজি, কমিশন বাণিজ্য এবং সিট বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে।
সরকারের ব্যাপক দলীয়করণের প্রক্রিয়া থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও বাদ যাননি। বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন ব্যক্তিকেই শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া উচিত, যাঁর একাডেমিক ক্যারিয়ার ভালো এবং যাঁর বিরুদ্ধে দলীয় লেজুড়বৃত্তি ও দুর্নীতির কোনো অভিযোগ নেই। কাউকে দলীয় আনুগত্যের বিবেচনায় শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হলে তাঁর সমর্থিত দলের অনুসারী ছাত্ররা তাঁকে সম্মান করলেও ভিন্নমতের শিক্ষার্থীরা তাঁকে সেভাবে সম্মান না-ও করতে পারে। অথচ শিক্ষক হচ্ছেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় একজন ব্যক্তি। বিগত সরকার আমলে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্তির অন্যতম যোগ্যতা ছিল সরকারি দলের প্রতি অনুগত থাকা। এই দলীয়করণের কারণে অনেক ক্ষেত্রে সবচেয়ে যোগ্য অথচ ভিন্নমত পোষণকারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাননি। সরকারদলীয় সমর্থক না হওয়ার কারণে অনেক শিক্ষার্থীর জীবন ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগদান, পদোন্নতি ইত্যাদি কাজে দলীয় সমর্থনকে যোগ্যতা হিসেবে প্রাধান্য দেওয়ার কারণে এক শ্রেণির শিক্ষকের মাঝে জ্ঞানচর্চার পরিবর্তে দলীয় রাজনীতিচর্চার প্রতি বেশি উৎসাহ দেখা গেছে। এতে উচ্চশিক্ষার মান মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।
অনেক শিক্ষক আছেন, যাঁরা নিজেদের অবস্থান টিকিয়ে রাখার জন্য সরকারদলীয় ছাত্রসংগঠনের নেতাদের ব্যবহার করেছেন। বিগত সরকার আমলে প্রতিটি স্তরে শিক্ষার মান ক্ষুণ্ন করা হয়েছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করার পরিবর্তে শুধু পাসের হার বেশি করে দেখানোর প্রতি জোর দেওয়া হয়েছে। ফলে একজন ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে উন্নততর শিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারছে না। স্বাধীনতার পর সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালুর নামে ইংরেজি ভাষা শিক্ষার প্রতি অবহেলা করা হয়। কিন্তু বাংলা ভাষায় উচ্চশিক্ষা প্রদানের মতো পর্যাপ্ত পরিমাণ অনূদিত বই আমরা জোগান দিতে পারিনি। স্বাধীনতার পর যাঁরা উচ্চশিক্ষা অর্জন করেছেন, তাঁদের একটি বড় অংশই ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা লাভ করতে পারেনি। অথচ বিশ্বের আধুনিক জ্ঞানভাণ্ডারের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার জন্য ইংরেজি বই অথবা অনূদিত বাংলা বইয়ের কোনো বিকল্প নেই। ব্যক্তিমালিকানায় প্রচুরসংখ্যক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দলীয় সমর্থকদের এসব বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের অনুমতি প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু শিক্ষার মান নিশ্চিত করার কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। ফলে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
বর্তমানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের নানাভাবে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পার্শ্ববর্তী গ্রামের অধিবাসীদের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়েও অনুরূপ ঘটনা ঘটেছে। ছয় দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে রেলপথ অবারোধ করেছে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগত গ্রামবাসীর আক্রমণে আহত তিনজন ছাত্রের মধ্যে দুজনের অবস্থা অত্যন্ত সংকটজনক। তাদের লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। গ্রামবাসীর সঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আরো সংঘর্ষ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা তাদের ঘোষিত কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছে। তারা নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন অব্যাহত রাখবে বলে জানিয়েছে। ২৬ আগস্ট থেকে শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে আসছিল। বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ রয়েছে। গ্রামবাসীর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ নিশ্চিতভাবেই একটি খারাপ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। গ্রামবাসী হচ্ছে ছাত্রদের অভিভাবক। আর শিক্ষার্থীরা হচ্ছে তাদের সন্তানতুল্য। তারা কেউ কারো শত্রু বা প্রতিপক্ষ নয়। তাহলে তাদের সঙ্গে সংঘাতে জড়াতে হবে কেন? গ্রামবাসীর সঙ্গে ছাত্রদের কোনো ইস্যুতে মতান্তর হলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গ্রামের কমিউনিটি লিডারদের সঙ্গে বসে আলোচনার মাধ্যমে তা সমাধান করতে পারত। কিন্তু সংঘাতে জড়াতে হবে কেন?
বাংলাদেশের মতো একটি জনবহুল দেশে সমস্যা থাকবেই। বিদ্যমান সমস্যা রাতারাতি সমাধান করা সম্ভব নয়। সমস্যা সৃষ্টি হলে তা সমাধানের পথ আছে। কিন্তু কোনোভাবেই আক্রমণ ও প্রতি-আক্রমণ সমস্যা সমাধানের পথ হতে পারে না। এমন কোনো সমস্যা নেই, যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব নয়। ছাত্ররা তাদের সমস্যা নিয়ে আন্দোলন করবে, কিন্তু তাই বলে সব সময় আন্দোলনের নামে রাস্তায় নেমে আসবে অথবা গ্রামে আক্রমণ চালাবে, এটি কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। আমরা একসময় ছাত্র ছিলাম। আমরাও বিভিন্ন জাতীয় ইস্যুতে কখনো কখনো রাস্তায় নেমে আন্দোলন করেছি। তাই বলে যেনতেন ইস্যুতে আন্দোলনের নামে রাস্তায় নেমে আসিনি। শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগ সমস্যাই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব। শিক্ষাঙ্গন ও পুরো সমাজকে বিগত সরকারের আমলে নানাভাবে কলুষিত করা হয়েছে। শাসক শ্রেণির দুর্বৃত্তায়নের কারণেই শিক্ষাঙ্গনে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। দেশে বিকৃত পুঁজিবাদের বিকাশ ঘটেছে। এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। আমাদের এমন সমাজ গঠন করতে হবে, যাতে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না নয়। সমাজে মানবিক গুণাবলির কদর থাকতে হবে। প্রতিটি শিক্ষার্থীকে মানবিক গুণাবলিসম্পন্ন হতে হবে। ছাত্রদের প্রধান লক্ষ্য হতে হবে শিক্ষা অর্জন। আর শিক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষের ভেতরের মানবিক গুণাবলিকে বিকশিত করার রাস্তা উন্মুক্ত করা। শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ ব্যাপারে সচেতন এবং সচেষ্ট হতে হবে।
একজন প্রবীণ শিক্ষক হিসেবে ছাত্র বন্ধুদের কাছে অনুরোধ, তারা যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সচেষ্ট থাকে এবং সর্বশক্তি নিয়োগ করে।
লেখক : সাবেক উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাহরাইনে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত







