গতকাল রোববার থাইল্যান্ড যাওয়ার সময় ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার হন চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়া। আজ সোমবার আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। এই ঘটনা ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া। অনেকেই এ ঘটনায় ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, বিশেষ করে যারা আগে থেকেই জুলাই আন্দোলনের সময় সোচ্চার ছিলেন।
অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন, যিনি জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন, ফারিয়ার ছবি পোস্ট করে লেখেন, “কি এক লজ্জা। ফ্যাসিস্ট সরকার যা করেছে, সেখানে এই মেয়েটির কিছুই করার ছিল না। আমি এমন পরিস্থিতি এবং সিস্টেম সম্পর্কে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা এমন একটি দেশে বাস করি, যেখানে ন্যায্য অধিকার শব্দটা সাধারণ নয়। কিন্তু সত্যিকার অর্থে এটা অগ্রহণযোগ্য।”
ছোট পর্দার অভিনেতা খায়রুল বাসার মন্তব্য করেছেন, “তিনি অভিনেত্রী। তাঁর কাজ অভিনয় করা। কোনো গল্পে যে চরিত্রটা পাবেন, সে চরিত্রের যথাযথ প্রকাশ করাই তাঁর পেশাগত দায়িত্ব। আমার ধারণা, তিনি রাজনীতি সচেতন নন, এমনকি কোনো রাজনীতিতেও সম্পৃক্ত নন। তাহলে একটা সিনেমায় অভিনয় করাকে কেন্দ্র করে কেন এই হেনস্তা?”
তিনি আরও লেখেন, “সরকার যদি শিল্পীদের রাষ্ট্রীয় আয়োজনে ডাকেন, ভবিষ্যতে সরকার বদল হলে তারা কি হেনস্তার শিকার হবেন? শিল্পীরা কি তখন হুকুমের দাস হবেন?”
পরিচালক শিহাব শাহীন এ ঘটনাকে ‘অবিশ্বাস্য এক আজগুবি মামলা’ বলে অভিহিত করেন। এক মন্তব্যের উত্তরে তিনি লেখেন, “একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করে কেউ কীভাবে দোসর হয়?”
তরুণ র্যাপার মাহমুদ হাসান তাবীব লিখেছেন, “নুসরাত ফারিয়া কোনো সহিংসতায় জড়িত ছিলেন না, এমনকি কোনো মিছিলেও অংশ নেননি। তিনি কেবল বলেছিলেন— ‘প্রত্যেক মেয়ের ভেতরেই একেকজন হাসিনা আছেন’। আবেগে বলা এ কথার জন্য যদি তাকে অপরাধী বানানো হয়, তা হলে সেটি বিচার ব্যবস্থার অসুস্থতার পরিচয়।”
অভিনেতা ও নির্মাতা শরাফ আহমেদ জীবন লেখেন, “নুসরাত ফারিয়া একজন শিল্পী। ‘মুজিব’ সিনেমায় অভিনয় করেছেন, অনেকেই করেছিলেন। তাহলে কি তাদের সবাইকে গ্রেপ্তার করা হবে? আমিও তার জায়গায় থাকতে পারতাম। শিল্পীর কাজ হলো শিল্পমাধ্যমে নিজেকে প্রকাশ করা।”
তিনি আরও লেখেন, “শিল্পীর মুখোশ পরে কেউ কেউ ক্ষমতার সুবিধা নিতে চেয়েছেন ঠিকই, কিন্তু ফারিয়াকে আমি সেই দলে দেখি না।”
পরিচালক আশফাক নিপুণ লিখেছেন, “প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে, সফট টার্গেট হিসেবে নুসরাত ফারিয়ার মতো শিল্পীদের গ্রেপ্তার করাটা দুর্ভাগ্যজনক। আমরা জুলাই গণহত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই। গায়েবি মামলা আর প্রহসনের বিচার চাই না।”
এই গ্রেপ্তারের পর সামাজিক মাধ্যমে চলমান প্রতিক্রিয়াগুলো এটাই প্রমাণ করে—শিল্পী মাত্রেই রাজনীতির অংশ নন, বরং তারা সামাজিক বিবেকের প্রতিচ্ছবি। আর সেই বিবেককে দমন করাই যদি হয় নতুন নিয়ম, তবে প্রশ্ন ওঠে—শিল্পের স্বাধীনতা কোথায়?
অনলাইন ডেস্ক







