বলিউড তারকা সাইফ আলী খানের ওপর হামলার ঘটনায় পুলিশি তদন্তে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসছে। এই ঘটনায় অভিযুক্ত বাংলাদেশি নাগরিক মুহাম্মদ শরিফুল ইসলাম শেহজাদ (৩০) বর্তমানে মুম্বাই পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন। পুলিশের দাবি, শরিফুল সাত মাস আগে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেন এবং বান্দ্রার অভিজাত এলাকায় চুরির পরিকল্পনা করছিলেন। তবে তাঁর মূল লক্ষ্য ছিল সাইফ-কারিনার চার বছরের ছেলে জেহকে পণবন্দী করে এক কোটি টাকা আদায় করা।
আজ ভোরে বান্দ্রা পুলিশ অভিযুক্ত শরিফুলকে সাইফ-কারিনার বাসায় নিয়ে যায় ঘটনার পুনর্নির্মাণের জন্য। পুলিশ জানায়, বুধবার গভীর রাতে সাইফের ওপর হামলার ঘটনাটি বিশদভাবে বোঝার জন্য তাঁকে নিয়ে বান্দ্রার অ্যাপার্টমেন্টের বিভিন্ন স্থান পর্যবেক্ষণ করা হয়। এক ঘণ্টার এই প্রক্রিয়া শেষে শরিফুলকে আবার পুলিশ স্টেশনে ফিরিয়ে আনা হয়।
তদন্তে উঠে এসেছে, শরিফুল মেঘালয়ের ডাউকি নদী পেরিয়ে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন। মুম্বাইয়ে এসে নিজের নাম বদলে তিনি বিজয় দাস নামে পরিচিতি পান। একটি ডান্স বারে কাজ করার সময় তাঁর চুরির পরিকল্পনায় পরিবর্তন আসে। শরিফুল ভেবেছিলেন, এক রাতেই বিপুল অর্থ উপার্জন করে বাংলাদেশে ফিরে যাবেন। এজন্য বান্দ্রার অভিজাত এলাকা বেছে নেন তিনি।
পুলিশি তদন্ত ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ অনুযায়ী, শরিফুল সাইফ-কারিনার বাসায় প্রবেশ করে প্রথমেই ছোট ছেলে জেহকে পণবন্দী করার চেষ্টা করেন। তবে নার্স এলিয়ামা ফিলিপ বাধা দিলে শরিফুল তাঁকে আক্রমণ করেন। চিৎকার শুনে জেহের ঘুম ভেঙে গেলে সে দ্রুত ঘর থেকে পালিয়ে যায়।
ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন সাইফ আলী খান। এরপর সাইফ ও শরিফুলের মধ্যে হাতাহাতি হয়। সাইফকে ছুরিকাঘাত করে শরিফুল পালিয়ে যান। সাইফের তৎপরতায় হামলাকারী কিছুক্ষণের জন্য আটকে পড়লেও শেষ পর্যন্ত একই পথ ধরে পালাতে সক্ষম হন।
পুলিশ জানিয়েছে, শরিফুল ভুয়া আধার কার্ড বানিয়ে ভারতীয় পরিচয় নিতে চেয়েছিলেন। তদন্তে আরও জানা গেছে, অভিযুক্ত পশ্চিমবঙ্গের এক ব্যক্তির পরিচয় ব্যবহার করে সিমকার্ড সংগ্রহ করেন এবং বাংলাদেশের পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন।
হামলার পর গুরুতর আহত সাইফকে লীলাবতী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পাঁচ ঘণ্টার অস্ত্রোপচার শেষে প্রথম দিন তাঁকে আইসিইউতে রাখা হয়। বর্তমানে সাইফের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল হলেও তাঁকে বিশেষ পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
পুলিশ এখন শরিফুলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আরও ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। বান্দ্রা পুলিশ স্টেশন থেকে একাধিকবার তদন্তের জন্য তাঁকে ঘটনাস্থলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এই ঘটনার সঙ্গে তাঁর আরও কোনো সহকারী জড়িত আছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সাইফ-কারিনার মতো উচ্চপ্রোফাইল ব্যক্তিদের ওপর এমন হামলা মুম্বাইয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। তবে পুলিশের দ্রুত পদক্ষেপে হামলাকারী আটক হওয়ায় জনমনে স্বস্তি ফিরেছে।







