Friday, April 26, 2024

প্যানোরামা জাদুঘর স্থাপনের জন্য তুরস্কের সমর্থনের দিকে বাংলাদেশের নজর- খাজা মিয়া

- Advertisement -

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খাজা মিয়া বলেন, ‘তুরস্ক ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের চিত্র তুলে ধরে একটি প্যানোরামিক জাদুঘর নির্মাণের ধারণা শেয়ার করে নিতে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে পারে’। সম্প্রতি তুরস্ক সফরকালে গত ৯ অক্টোবর তুরস্কের ‘আনাদোলু এজেন্সির’ সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খাজা মিয়া এ কথা বলেন। তিনি বলেন, তাঁর সরকার একটি প্যানোরামিক জাদুঘর স্থাপনের পরিকল্পনা করছে, যাতে দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন তুলে ধরা হবে। তুরস্ক পরিদর্শনকালে তিনি বলেন, আমরা বিভিন্ন দেশ থেকে ধারণা নেওয়ার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছি, কিছু তথ্য এবং নকশা সংগ্রহ করারও যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। এটি প্রথম পদক্ষেপ।

তুরস্কে তার সরকারী ভ্রমণের সময় খাজা মিয়া ইস্তাম্বুলের প্যানোরামা ১৪৫৩ ইতিহাস জাদুঘর এবং মধ্য আফিওন প্রদেশের বিজয় জাদুঘর সহ বেশ কয়েকটি যুদ্ধ জাদুঘর পরিদর্শন করেন। তিনি প্যানোরামিক জাদুঘরের ৩৬০ ডিগ্রী ত্রিমুখী চিত্রকর্ম দেখে মুগ্ধ হন যা ১৪৫৩ সালে মেহমেদ বিজয়ীর নেতৃত্বে উসমানীয় সৈন্যদের দ্বারা ইস্তাম্বুল বিজয়ের চিত্র তুলে ধরে। তাদের (তুর্কিদের) নিজস্ব ধারণা, দর্শন এবং সংস্কৃতি রয়েছে। আমাদের নিজস্ব ধারণা, দর্শন এবং সংস্কৃতি রয়েছে, কিন্তু বিভিন্ন ক্ষেত্রে মিল রয়েছে। খাজা মিয়া বলেন, উভয় দেশই অনেক ক্ষেত্রে ধারণা এবং অভিজ্ঞতা শেয়ার করে নিতে পারে। এই প্যানোরামা স্থাপনের বিষয়ে, আমরা বেশিরভাগ তুরস্ক থেকে কিছু স্থপতি, প্রকৌশলী এবং নকশা নেওয়ার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করব। আমরা সরকারের সাথে কথা বলব – আমাদের সরকার, আমাদের মন্ত্রী এবং আমরা যাতে তুরস্ক থেকে প্রযুক্তি, স্থপতি এবং নকশা নিতে পারি তা নিশ্চিত করার জন্য তাদের অনুসরণ করার চেষ্টা করব। খাজা মিয়া বলেন, তুরস্কের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়াভুজ সেলিম কিরণ এবং সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের সাংস্কৃতিক সম্পদ ও জাদুঘর অধিদপ্তরের প্রধান গোখান ইয়াজগি মৌখিকভাবে বাংলাদেশকে আশ্বাস দিয়েছেন যে, আঙ্কারা জাদুঘর স্থাপনে ঢাকার সাথে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, যদি অন্য কোন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি জাদুঘরের নকশা বা প্রযুক্তিগতভাবে সজ্জিত করতে বাংলাদেশকে সহায়তা করার জন্য এগিয়ে আসে, তবে তিনি তাদের এই প্রকল্পের ওপর আরও অধ্যয়নের জন্য বাংলাদেশে নিয়ে যাওয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন। বাংলাদেশ সরকার উত্তর-পশ্চিমের জেলা মেহেরপুরে মুক্তিযুদ্ধের ওপর প্যানোরামিক জাদুঘর নির্মাণের পরিকল্পনা করছেন, যেখানে একই বছরের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার পর ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল প্রথম সরকার গঠন করা হয়। বাঙালিরা পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে নয় মাস যুদ্ধ করে বাংলাদেশ (তৎকালীন পূর্বপাকিস্তা) স্বাধীন করেন।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এ কর্মকর্তা আরো বলেন, নতুন প্রজন্মের জন্য রাজধানী ঢাকায় আরেকটি প্যানোরামিক জাদুঘর নির্মাণ করা যেতে পারে। কারণ, মেহেরপুর রাজধানী (ঢাকা) থেকে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার (১৫৫ মাইল) দূরে- যদিও এ বিষয়ে বর্তমানে কোন পরিকল্পনা নেই। খাজা মিয়া উল্লেখ করেন যে, এখনও কোন আনুষ্ঠানিক চুক্তি হয়নি, তবে তিনি তুর্কি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে যথাযথ সমর্থন পেতে আশাবাদী।

দল গঠন ও অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি

খাজা মিয়া বলেন, বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের বৃত্তির সংখ্যা বাড়ানোর জন্য তুরস্কের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে। বাংলাদেশও শিক্ষা খাতে বিশেষজ্ঞ বিনিময়, অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি, দল গঠন ও সহযোগিতা বৃদ্ধিতে আগ্রহী। তিনি বিশ্বাস করেন যে, তুরস্ক বাংলাদেশকে প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত শিক্ষা উপকরণ এবং বিশ্ববিখ্যাত বুদ্ধিবৃত্তিক (বৌদ্ধিক) বই সরবরাহ করতে পারে। খাজা মিয়া আঙ্কারা এবং ঢাকার মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভূয়সী প্রশংসা করেন। বাংলাদেশের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তারা সম্প্রতি তুরস্ক সফর করেছেন, যার মধ্যে সেনাপ্রধান এবং নৌবাহিনীর প্রধানও ছিলেন। বেশ কয়েকজন মন্ত্রী এবং ঢাকার অন্যান্য উচ্চ পর্যায়ের সরকারী কর্মকর্তারাও সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় আনুষ্ঠানিক সফর করেছেন। উভয় দেশ থেকে ব্যবসা ও প্রতিরক্ষা খাত তাদের সহযোগিতা বৃদ্ধি করছে। তুরস্কের সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধিদল এ বছরের শেষের দিকে ঢাকায় আয়োজিত বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারে।

বাংলাদেশী আমলারাও আশাবাদী যে, তুরস্কের কিছু উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা এই অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। ২০১৭ সালের আগস্ট মাস থেকে মিয়ানমারের উত্তর রাখাইন প্রদেশে রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর আগমন মোকাবেলায় আঙ্কারা রোহিঙ্গা সংকটের প্রথম প্রতিক্রিয়া ব্যাক্তকারি দেশ এবং এ সংকট সমাধানে ঢাকার সাথে অবিচল রয়েছে বলে উল্লেখ করে খাজা মিয়া বলেন, “বিভিন্ন ধরনের সংকটে তুরস্ক আমাদের সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছে। আমরাও একই কাজ করেছি। আমি মনে করি দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে। পিছিয়ে যাওয়ার কোন কারণ নেই।”

 

 (তুরস্কের আনাদোলু এজেন্সির ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহীত, অনুবাদক- এনামুল কবীর টুকু)

- Advertisement -

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত