Saturday, December 6, 2025

হিরো কোম্পানীর মান্নান ও খালিদের পর এবার আলোচনায় প্রতিষ্ঠান প্রধান ভিকে মহাজন

রুপদিয়া শাখারীগাতীর হিরো হোন্ডা কোম্পানী থেকে মেয়েলি কেলেঙ্কারীর অভিযোগে চাকরিচ্যুত হওয়া এডমিন ম্যানেজার শেখ আবু মান্নান ও ডেপুটি ম্যানেজার খালিদ হোসেন চাকরি ফিরে পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। চালিয়ে যাচ্ছে ব্যাপক দৌড়ঝাপ। এদিকে, তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠা কারখানার ভুক্তোভুগি শ্রমিক ও স্থানীয় এলাকাবাসী মুখ খুলতে শুরু করেছে। তাদের দেয়া বক্তব্যে এবার জড়িয়ে যাচ্ছেন প্রতিষ্ঠান প্রধান(হেড অফ প্লান্ট অপারেশন) ভি.কে মহাজন নিজেই। অভিযোগ উঠেছে সাধারণ মানুষকে চাকরি দেয়ার নামে ও নানা ধরনের অনিয়ম দূর্নীতি করে হিরো হোন্ডা কোম্পানীকে পুজি করে তারা হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। গ্রামের সহজ সরল অসহায় মানুষের কাছথেকে টাকা নিয়ে চাকরি দিতেন তারা। এরপর কয়েকমাস পরে তাদেরকে ছাটায় করে দিতেন। ওই জায়গায় টাকা নিয়ে আবার আরেকজনকে চাকরি দিতেন। এভাবে টাকা হাতানো তাদের প্রধান ব্যবসা ছিলো। শুধুই তাই নয়, কারখানার মালামাল চুরি করে বিক্রি, শ্রমিকদের খাবার চুরি সহ নানা অভিযোগ রয়েছে এ তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।এছাড়া রাতদিন নিউজের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে এ তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগে মামলাও করা হয়েছে। যা বর্তমানে তদন্তধীন। ভুক্তোভূগি সহ এলাকাবাসীর দাবি প্রতিষ্ঠান প্রধান ভিকে মহাজনের মদদে  মান্নান ও খালিদ নানা অপকর্ম করতেন। তাকেও চাকরিচ্যুত করার জোড় দাবি জানান সবাই।
যশোর সদর উপজেলার সুতিঘাটা কামালপুর গ্রামের মোশারফ হোসেন। পেশায় দিনমজুর। হিরো কোম্পানীর মান্নান তাকে ১০ হাজার টাকা বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে চাকরি দেয়ার আশ্বাস দেন। বিনিময়ে দিতে হবে ৫০ হাজার টাকা। হিরো কোম্পানী বলে কথা তাই আত্বীয় স্বজনের কাছথেকে টাকা ধার নিয়ে ৩০ হাজার টাকা তুলে দেয় মান্নানের হাতে। এক পর্যায় বাকি ২০ হাজার টাকা দেয়ার শর্ত রেখে ২০১৬ সালের জানুয়ারী মাসে হিরো কোম্পানীতে যোগদানও করান মোশারফ। কিন্তু তিন মাসের ব্যবধানে কোনো কারণ ছাড়ায় চাকরি হারায় মোশারফ। এরপর আজো সেই ধার করা টাকা ফেরত দিতে পারেন নি তিনি। এখন মানবেতার জিবন কাটছে তার।এসব বিষয়ে কথা হয় আরো অন্তত ১৫/১৬ জনের সাথে। বেড়িয়ে আসে থলের বিড়াল। একই এলাকার আনোয়ার হোসেনের কাছথেকে নেয়া হয়েছে ৩০ হাজার টাকা,  ফারুক হোসেনের কাছথেকে প্রথমে ১৫ হাজার টাকা নেয় তিন মাস পরে চাকরি থেকে বাদ দিয়ে দেয়া হয়। এরপর আবার ১০ হাজার টাকা দিয়ে চাকরিতে নিয়ে দুই মাস পর ছাটায় করে দেয়, সুতি ঘাটার শিমুল সাহার কাছথেকে একই ভাবে ২৫ হাজার, গৌর কুমার অধিকারীর কাছথেকে ৩০ হাজার টাকা নিয়ে কয়েকমাসের ব্যবধানে বাদ দেয়া হয়, মাঠপাড়ার আলামিনের কাছথেকে ২০ হাজার টাকা নিয়ে চাকরি দিয়ে বাদ দেয়া হয়, একই ভাবে বসুন্দিয়ার তরিকুল ইসলাম, এস্কেন্দার মির্জা সহ আশপাশের গ্রামের সাধারণ মানুষের চোখে ধুলো দিয়ে মান্নান চক্র হাতিয়ে নিয়েছে মোটা অংকের টাকা । ভুক্তভোগিরা আরো জানান, প্রতি শ্রমিকের দুপুরে খাবার বাবদ ৬৫ টাকা করে কোম্পানী থেকে বরাদ্দ ছিলো। অথচ তাদেরকে খেতে দেয়া হতো প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন সবজি দিয়ে ভকোম আর রুটি কখনো মোটা চালের ভাত। মাসে কয়েকদিন দেয়া হতো সিলভার কাপ মাছ ও এক পিছ পোল্ট্রি মুরগির মাংশ । এছাড়াও বিভিন্ন সময় ফ্যাক্টারীতে অচেনা মহিলাদের আনোগোনা থাকতো। কর্মকর্তাদের রেষ্ট হাউজে রাতও কাটতো তাদের। এসব বিষয়ে কথা বলার সাহস কারো ছিলোনা।
এদিকে অনুসন্ধানে উঠে আসে, কুষ্টিয়া সদর উপজেলার কুমার পাড়া গ্রামের সরোয়ার হোসেনের ছেলে প্রকৌশলী মেরিন উজ্জামান এই তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রতারণার মাধ্যমে চাকরিচ্যুৎ, হত্যার হুমকি সহ বিভিন্ন অভিযোগ এনে ২০১৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারী যশোর চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী(সদর) আদালতে মামলা করেন( মামলা নং-সিআর ২৮১/১৯)। কর্মকর্তাদের বিভিন্ন অনিয়মের প্রতিবাদ করায় তাকে চাকরিচ্যুত করা হয় দাবি তার। বাধ্য হয়ে তিনি আদালতে এ মামলা করেন। মামলায় সাবেক প্রোডাকশন ম্যানেজার মেরিন উজ্জামান উল্লেখ করেন, ২০১৮ সালের ২৮ নভেম্বর প্রতিষ্ঠান প্রধান ভিকে মহাজন মেরিন উজ্জামানকে তার অফিস কক্ষে ডাকে। এসময় মান্নান ও খালিদও সেই কক্ষে উপস্থিত ছিলেন। এসময় মেরিন উজ্জামান স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন বলে জানানো হয়। একই সাথে জাল ইস্তেফা পত্রও দেখানো হয়। কিন্ত সেসময় মেরিন উজ্জামান ভিকে মহাজনকে বলেন সে কোনো ইস্তেফা পত্র জমা দেননি। কিন্তু এতে করে আসামিরা চড়াও হয় তার উপর। এ বিষয়ে বাড়াবাড়ি করলে মামলার ভয় ও হত্যার হুমকি দেন তারা। পরে বাদী আদালতে মামলা করেন। যা বর্তমানে সিআইডি পুলিশ তদন্ত করছে বলে আদালত সূত্র নিশ্চিত করেন।

উল্লেখ্য, যশোরের রূপদিয়ার শাখারগাতি এলাকার হিরো মোটরসাইকেল কোম্পানির এ্যাডমিন ম্যানেজার আব্দুল মান্নান ও ডেপুটি ম্যানেজার খালিদ হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে এক গৃহবধুকে প্রথমে ব্লাক মেইল পরে তিন বছর ধরে ধর্ষণ করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে রাতদিন নিউজে একাধিক সংবাদ প্রকাশ হয়। এরপরই নড়েচড়ে বসে কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি আমলে নিয়ে প্রথমে ৯ অক্টোবর তাদেরকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়। একই সাথে তদন্ত কমিটি গঠন করে ১১ অক্টোবর তাদেরকে চাকরিচ্যুত করে কর্তৃপক্ষ। এদিকে এ ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়ে মান্নান ও খালিদ সহ স্থানীয় কয়েকজনের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে তথ্য মিলেছে। সাম্প্রতি ওই নারীর সাথে মান্নানের মোবাইল ফোনে কথপোকথনের অডিও রেকর্ড ফাঁস হয়েছে। সেখানে স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধির নামও উঠে এসেছে। ভয়েস রেকর্ডটি এখন ওই এলাকার মানুষের ফেসবুক আর মোবাইল ফোনে ফোনে ছেয়ে গেছে।

ভিডিও দেখতে লাল লেখার উপর ক্লিক করুন

বিশেষ প্রতিনিধি

আরো পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত

এই বিভাগের আরো খবর