Saturday, December 6, 2025

নড়াইলের নবগঙ্গা নদীর সেতুর ১ বছরের কাজ ৪ বছরে সম্পন্ন হয়েছে মাত্র ৬২ ভাগ

সৈয়দ নাইমুর রহমান ফিরোজ, নড়াইল:

নড়াইল-কালিয়া সড়কে নোয়াগ্রাম ইউনিয়নের বারইপাড়া ও কালিয়া পৌরসভার পাঁচ কাউনিয়া অংশে নবগঙ্গা নদীর ওপর ৬৫১.৮৩ মিটার লম্বা, ১০.২৫ মিটার প্রস্থ, ১৬টি পিলার ও ১৫টি স্প্যানের এ সেতুর নির্মান ব্যয় ধরা হয় ৭২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। এমডি জামিল ইকবাল এন্ড মোঃ মইনুদ্দীন বাশি জেভি ফার্ম ২০১৮ সালের ১৮ মার্চ সেতুর কার্যাদেশ পায় এবং ২০১৯ সালের জুনে শেষ করার কথা। কিন্তু নির্মাণ কাজ শুরু করতে দেরী এবং ধীর গতির কারনে কাজটি দিন দিন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ২০জুন বালু বোঝাই একটি বাল্কহেডের ধাক্কায় মাঝ নদীতে অবস্থিত ৯ নম্বর পিলারটি এবং পরবর্তী বছর ২০২১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর একই পিলার আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে হেলে যায়। এছাড়া নির্মানাধীন আরও কয়েকটি পিলার আঘাতপ্রাপ্ত হওয়া এবং কয়েকটি বাল্কহেড পানিতে ডুবে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় কালিয়া থানায় ৬টি জিডি ও মামলা হয়েছে।

পর পর ২বার একই পিলার আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় নির্মাণাধীন সেতুর হেলে যাওয়া ৯নং পিলারের নকশা পরিবর্তন করা হয়েছে। তবে এর ন্যাশনাল টেন্ডার হতে এখনও তিন মাস লাগতে পারে। ৯ নং পিলার বাদ দিয়ে ৮ থেকে ১০ নং পিলারের মাঝে ঢালাই না দিয়ে ষ্টীলের স্প্যান বসানো হবে। এছাড়া পরবর্তীতে যাতে কোনো নৌযান দ্বারা পিলার আঘাতপ্রাপ্ত না হয় সেজন্য প্রতিটা পিলারের চারিদিকে ষ্টিলের বেষ্টনি দিয়ে বাড়তি নিরাপত্তা দেওয়া হবে। এ কারণে অতিরিক্ত ২৮ কোটি ব্যয় ধরা হয়েছে। ৪র্থ দফার মেয়াদ শেষে কাজের অগ্রগতি ৬২ ভাগ। ৫ম দফায় ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ে সেতুটি নির্মিত না হওয়ার জন্য জনপ্রনিধিসহ স্থানীয় জনগন ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন।

কালিয়া সেতু নির্মাণ কাজের ডেপুটি প্রজেক্ট ম্যানেজার প্রকৌশলী মিনহাজুল ইসলাম বলেন, প্রথম দিকে বিভিন্ন কারনে দেরী হয়েছে। তবে এখন প্রায় ৫০-৬০জন শ্রমিক কাজ করছে। বর্তমানে পিলারের ওপর গার্ডার ও স্লাব বসানো এবং দুপাশে সংযোগ সড়কের কাজ চলছে।

আগামি জুনের মধ্যে আমাদের অংশের কাজ সম্পন্ন হবে বলে আশা করছি। তবে হেলে যাওয়া ৯ নম্বর পিলারের নতুন নকশার বিষয়ে কিছু জানিনা। এ পর্যন্ত মূল কাজ ও সংযোগ সড়ক মিলে ৬২ভাগ শেষ হয়েছে বলে তিনি জানান।
নড়াইল সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আশরাফুজ্জামান বলেন, ৯ নম্বর পিলার বার বার আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় এটি না রেখে ৮ ও ১০ নম্বর পিলারের ওপর একটি স্টিলের স্প্যাম বসবে। এজন্য ২৮ কোটি টাকা বাড়তি ব্যয় হবে।

সাধারণত এ ধরনের স্টিলের স্প্যাম বিদেশ থেকে আনতে হয়। এর জন্য ন্যাশনাল টেন্ডার দিতে হবে। টেন্ডার কাজ সম্পন্ন হতে আগামি ৩ মাস লাগতে পারে। এছাড়া সেতুর অন্যান্য পিলার যাতে পরবর্তীতে বাল্কহেড বা অন্য নৌযান দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত না হয় সেজন্য আধুনিক নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হবে। এসব কাজ শেষ করতে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

নড়াইল-১ আসনের এমপি কবিরুল হক মুক্তি বলেন, আমি এ সেতু নিয়ে হতাশ। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, সংশ্লিষ্ট অফিসসহ উর্দ্ধোতন কর্তৃপক্ষের সাথে বার বার কথা বলেছি দ্রুত সেতুর কাজ শেষ করার জন্য। দ্রুত সেতুর কাজ শেষ করলে লাখ লাখ মানুষের যাতায়াতের পথ উন্মুক্ত হবে।
জেলা শহর থেকে কালিয়া শহরের দূরত্ব ২৫ কিঃ মিঃ। কিন্তু এ পথ যেতে এখন সময় লাগে দু’ঘন্টা । ‘নবগঙ্গা নদী’ কালিয়া উপজেলাকে জেলার অন্যান্য এলাকা থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে।

একটি মাত্র ফেরি দিয়ে বর্তমানে যান-বাহন পারাপার চালু আছে। ফলে অসংখ্য মানুষের অফিস-আদালত, আইন-শৃংখলা রক্ষা, ফায়ার সার্ভিস, স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল, ব্যবসাসহ বিভিন্ন কাজে যাতায়াতে বেগ পেতে হয়। সেতটিু চালু হলে নড়াইল-যশোরের সাথে গোপালগঞ্জ, বরিশাল এবং বাগেরহাট জেলার যোগাযোগ বৃদ্ধি পাবে।

প্রসঙ্গত, এ বছরের জানুয়ারী মাসের মাঝামাঝি হেলে পড়া পিলারের নকশার পরিবর্তন সম্পর্কিত একটি খবর রাতদিন নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত হয়।

এএন-০৭

আরো পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত

এই বিভাগের আরো খবর