নড়াইল প্রতিনিধিঃ নড়াইল সরকারি মহিলা কলেজের আইসিটি বিভাগের শিক্ষক মন্নু বিশ্বাসের বিরুদ্ধে শিক্ষকদের আচরণবিধি ও কোচিং আইন অমান্য করে দীর্ঘদিন ধরে ব্যক্তিগত বাসায় শিক্ষার্থী পড়ানোর অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দাবি, তিনি কলেজের প্রায় ২’শ শিক্ষার্থীকে বাসায় প্রাইভেট পড়ান এবং প্রতিজনের কাছ থেকে মাসিক ৮’শ টাকা করে নেন যা সরাসরি কোচিংবিধি পরিপন্থী। এতে তার মাসিক আয় দাঁড়ায় আনুমানিক ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা, যার ওপর তিনি কর প্রদান করেন কি না, তাও প্রশ্নবিদ্ধ।
সংবাদকর্মীরা অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে গেলে মন্নু বিশ্বাস সংঘাতপূর্ণ আচরণ করেন এবং ভিডিও ধারণ করতে দেখলে সাংবাদিকদের হুমকি প্রদান করেন বলে জানা যায়।
জান্নাতি, নুসরাত, সুপ্রিতা সাহা সহ মন্নু বিশ্বাসের প্রাইভেট ব্যাচে পড়া শিক্ষার্থীরা জানান, সপ্তাহে তিন দিন তারা তার ভাড়া বাসায় আইসিটি পড়তে যান এবং মাসিক ৮০০ টাকা করে প্রদান করেন।
দুর্গাপুর গ্রামের অভিভাবক এস. কে. জালাল বলেন, ওদের অনেক ক্ষমতা। প্রাইভেট না পড়লে বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়। কলেজ শিক্ষকদেরও এক মাসের অ্যাডভান্স দিতে হয়।
এর আগেও মন্নু বিশ্বাসের বিরুদ্ধে পাবলিক পরীক্ষা আইন লঙ্ঘন, পরীক্ষার্থীদের খাতা আটকে রাখা, ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ নানা অভিযোগ উঠেছিল—কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সাম্প্রতিক সময়ে তার কর্মকাণ্ড নিয়ে তীব্র সমালোচনা হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, নিজের স্ত্রীর অনার্স পরীক্ষায় তিনি কলেজের পদার্থবিদ্যা ল্যাবে নকল সরবরাহ করেছিলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের কয়েকজন শিক্ষক দাবি করেন, মন্নু বিশ্বাস ও সবুজ কুমার হালদার মিলে দীর্ঘ ১০ বছর ধরে কলেজে একটি “সিন্ডিকেট” গড়ে তুলেছেন। প্রাইভেট পড়ানো ও কোচিং বাণিজ্যের মাধ্যমে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।
তার নেতিবাচক আচরণে আইসিটির শিক্ষক সালমান ও আলী হাসান নড়াইল সরকারি মহিলা কলেজ থেকে বদলি নিয়ে নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজে যোগ দিতে বাধ্য হয়েছেন।
কলেজের কয়েকজন কর্মচারী জানান, ১১.৮.২৫ থেকে ১৩.৮.২৫ তারিখের মধ্যে আইসিটি ব্যবহারিক পরীক্ষার নামে মন্নু বিশ্বাস প্রথম বর্ষের ছাত্রীদের কাছ থেকে নিয়ম বহির্ভূত টাকা আদায় করেন।
এ ছাড়া ২০২২ সালে প্রভাব খাটিয়ে এক সিনিয়র শিক্ষককে বাসা থেকে অপহরণ করে শারীরিক নির্যাতন ও চাঁদা আদায়ের অভিযোগও রয়েছে। ওই ঘটনায় পরবর্তীতে থানায় অভিযোগ হলে মুচলেকা প্রদান করে টাকা ফেরত দেন তিনি ও তার সহযোগীরা। গত ১০ মার্চ ২০২২ সালে শিক্ষক পরিষদের সভায় তিনি ঘটনাটি স্বীকারও করেন।
অভিযুক্ত শিক্ষক মন্নু বিশ্বাস আনুমানিক ১০০ শিক্ষার্থীকে পড়ানোর কথা স্বীকার করে বলেন, সাবেক অধ্যক্ষ ড. মোহাম্মদ মাহাবুবুর রহমান এবং অভিভাবকদের অনুরোধে বাসায় পড়াই।
নড়াইল সরকারি মহিলা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. আকবর আহমেদ এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তবে জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ আব্দুল সালাম বলেন, সরকারি নিয়মের বাইরে কোনো শিক্ষক বাসায় প্রাইভেট বা কোচিং করাতে পারবেন না। অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আর কে-০২







