বাগেরহাট প্রতিনিধিঃ বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলার চাঞ্চল্যকর ইউসুফ হত্যা মামলার স্বাক্ষীদের কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়ে থানা হেফাজতে রেখে নির্যাতন ও সাড়ে তিন লাখ টাকা আদায়ের অভিযোগে থানার ওসিসহ পাঁচ পুলিশের বিরুদ্ধে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দাখিল।
মোল্লাহাট উপজেলার হাড়ীদাহ গ্রামের মোস্তাক শেখ বাদী হয়ে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারন) আইন-২০১৩ এর ১৫ তৎসহ ৩৮৫/৩৮৬/৩৮৭/৩৪ পেনাল কোড ধারায় গত ২২ ফেব্রুয়ারি দাখিলকৃত মামলায় আসামি করা হয়েছে মোল্লাহাট থানার ওসি সোমেন দাস, এসআই মিলন বিশ্বাস, এসআই আহাদ আহম্মেদ, এসআই আবু হাসান ও এএসআই রাশেদুল ইসলাম।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, গত বছর ১৪ মে দিনগত রাতে বাদীর চাচা মোল্লাহাট উপজেলার হাড়ীদাহ গ্রামের ইউসুফ সেখকে পুর্ব-শত্রুতার জের ধরে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের অপর ভাতিজা ইনছান সেখ বাদী হয়ে এলাকার রশিদুজ্জামান মোল্লাসহ ৭২ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ৭/৮ জনের বিরুদ্ধে মোল্লাহাট থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা হিসাবে দায়িত্ব পান থানার ওসি (তদন্ত) জগন্নাথ চন্দ্র।
তদন্ত চলমান অবস্থায় মোল্লাহাট থানায় নতুন ওসি হিসাবে যোগদান করেন সোমেন দাস। তিনি যোগদান করে এ মামলার আসামিদের সাথে যোগাযোগ শেষে মামলাটির তদন্তভার ওসি সোমেন দাস নিজেই নিয়ে নেন। সে অনুযায়ী গত ৪ ডিসেম্বর ২০২১ থানার এসআই মিলন বিশ্বাস ওই হত্যা মামলার অন্যতম স্বাক্ষী বাদীর চাচাতো ভাই মোস্তাফিজকে ২০/৩০ জন স্বাক্ষী নিয়ে ওই দিন বেলা ১১টায় থানায় আসতে বলেন। সংশ্লিষ্ট সার্কেল স্যার মামলাটির তদন্ত করবেন বলে। পরে ওসি সোমেন দাস মোবাইলে জানান ১১টায় না বিকাল ৫ টায় আসতে। ওসির নির্দেশনা মতে মামলার বাদী স্বাক্ষীরা সকলেই বিকালে মোল্লাহাট থানায় আসেন। থানা মেইন গেট বন্ধ করে দিয়ে সকলকে পিছনের গেট দিয়ে ওসির কক্ষে প্রবেশ করানো হয়। পরে সার্কেল স্যার আসবেন না জানিয়ে ওসি নিজেই স্বাক্ষীদের বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে স্বাক্ষী দেয়া যাবে না হুমকি প্রদান করেন।
এক পর্যায়ে মাওঃ ইমদাদ মোল্লা, উজ্জল শেখ, মিজান মোল্লা, সাইফুল মোল্লা ও রেজাউলসহ আটজনকে থানায় আটক রেখে বাকীদের ছেড়ে দেয়। বাদীসহ আটজনকে ওসির কক্ষে সারা রাত আটকে রেখে গোপন অঙ্গে ইলেক্ট্রক শক দেয়াসহ পিটিয়ে ও বুট জুতা দিয়ে লাথি দিয়ে অমানসিক নির্যাতন করে। এ সময় ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবী করে। নির্যাতন থেকে মুক্তি পেতে বাদী পক্ষ সাড়ে তিন লাখ টাকা জোগাড় করে এবং ওসির নির্দেশে থানার বাইরে বসে এসআই আহাদ আহম্মেদকে প্রদান করে।
পরের দিন ৫ ডিসেম্বর দুপুরে মোস্তাক শেখ, রেজাউল সেখ ও উজ্জলকে থানা পুলিশ বাগেরহাট পুলিশ সুপার অফিসে এনে আটকে রাখে। এখান থেকে সন্ধ্যায় তিনজনকে আদালতে নিয়ে ইউসুফ হত্যা মামলায় স্বীকরোক্তি দিতে বললে আটককৃতরা বিচারকের সামনে পুলিশের নির্যাতনের কথা বলে দেয়। এক পর্যায়ে পুলিশ রাত ৯টার দিকে তিনজনকে জেল হাজতে প্রেরণ করে। পরের দিন বাকী পাঁচজনসহ মোট আটজনকে ইউসুফ সেখ হত্যা মামলায় আটক দেখায় পুলিশ এবং রিমান্ড আবেদন করেন।
আদালতের বিজ্ঞ বিচারক পুলিশের রিমান্ড আবেদন না মঞ্জুর করেন এবং ১২ জানুয়ারি-২০২২ আদালত থেকে ওই আটজন জামিনে মুক্তি পান। জামিনে মুক্তি পেয়ে পুলিশের নির্যাতনে আহতরা চিকিৎসা নিয়ে গত ২০ জানুয়ারি বাগেরহাট আদালতে আসেন। আদালতে তাদের আইনজীবীর সহযোগিতায় ওসি সোমেন দাসসহ পাঁচ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা প্রস্তুুত শেষে ২২ জানুয়ারি চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি দাখিল করে।
ইউসুফ হত্যা মামলার বাদী ইনসান সেখ এ বলেন, পুলিশ আসামিদের সাথে অনৈতিক সম্পর্ক করে আমাদের মামলাটি ভিন্ন দিকে নেয়ার চেষ্টা করছে। থানায় আটকে রেখে আমাদের স্বাক্ষীদের অমানসিক নির্যাতন করেছে। আদালতে নির্যাতনের মামলা দিতে গেলে জানতে পেরে পুলিশ আমাদের প্রতি আরো বেপরোয়া আচারণ করে।
এ দিকে মোল্লাহাট থানার ওসিসহ পাঁচ পুলিশ কর্মকতার বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে বাগেরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) আসাদুজ্জামান বলেন, ইউসুফ সেখ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনের জন্য পুলিশের জোর চেষ্টা অব্যাহত আছে। তবে বাদী স্বাক্ষীদের হয়রানি বা নির্যাতন সঠিক নয়। আর কেউ যদি আদালতে মামলা করে এখানে আমাদের করার কিছু নাই।







