সৈয়দ নাইমুর রহমান ফিরোজ, নড়াইল প্রতিনিধি: ইতিহাসখ্যাত নড়াইলের তে-ভাগা আন্দোলনের অগ্রপথিক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাবেক সভাপতি কমরেড অমল সেনের উনবিংশতম মৃত্যুবার্ষিকী গতকাল পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে নড়াইলের সীমান্তবর্তী বাঁকড়ী গ্রামে আজ সোমবার (১৭ জানুয়ারি) দুপুর দুইটায় অমল সেন স্মৃতিস্তম্ভে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি, যশোর জেলা কমিটি, নড়াইল জেলা কমিটি, খুলনা মহানগর ও জেলা কমিটি, গোপালগঞ্জ জেলা কমিটি, ঢাকা মহানগর কমিটিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন পুষ্পমাল্য অর্পন করেছে।
কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারনে এবার মেলা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ‘কমরেড অমল সেন স্মৃতি রক্ষা কমিটি ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির নেতৃবৃন্দ। পুষ্পস্তবক অর্পন শেষে অমল সেন স্মৃতিরক্ষা কমিটির সভাপতি কৃষ্ণপদ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে সংক্ষিপ্ত আলোপনা সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য কমরেড মাহমুদুল হাসান মানিক, কামরুল আহসান, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলাম গোলাপ, এড. নজরুল ইসলাম, এড. শেখ হাফিজুর রহমান, দীপঙ্কর সাহা দীপু, আবু বক্কার সিদ্দিক, ছব্দুল হোসেন খান, কিশোর রায়, মোস্তাফিজুর রহমান লাল প্রমুখ।
কমরেড অমল সেন ১৯১৪ সালের ১৯ শে জুলাই নড়াইল সদর উপজেলার আউড়িয়া গ্রামের প্রখ্যাত রায় পরিবারে মামা বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন নড়াইলের আফরার জমিদার পরিবারের সন্তান। নবম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত অবস্থায় বৃটিশবিরোধী সশস্ত্র বিপ্লবী ‘অনুশীলন’ গ্রুপের সঙ্গে সম্পর্কিত হন। তিনি মনে প্রাণে বিশ্বাস করতেন মানব জীবনের সর্বোচ্চ্ প্রাপ্তি হতে পারে মানব সমাজের কল্যাণে আত্মনিয়োগ করা তথা শ্রমজীবী মানুষের শোষণ মুক্তির লড়াইতে অংশগ্রহণ করা। তিনি সারাজীবন নিজেকে এ সংগ্রামে নিয়োজিত রাখেন। পাকিস্তান শাসনামলের ২৪ বছরের মধ্যে ১৯ বছরই তাঁকে কারান্তরালে কাটাতে হয়েছে। ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ মুক্তিকামী জনতা তাঁকে যশোর কারাগার ভেঙ্গে মুক্ত করে । এরপর স্বাধীনতা আন্দোলনে তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। স্বাধীনতার পরে তিনি কয়েকটি বামপন্থী দলকে ঐক্যবদ্ধ করে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি গঠন করেন এবং এই দলের সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০০৩ সালের ১৭ জানুয়ারি বার্ধক্যজনিত কারণে ঢাকা কমিউনিটি হাসপাতালে অকৃতদার এই বিপ্লবী নেতা মৃত্যুবরণ করেন। মহান এই বিপ্লবীর মৃত্যুতে, স্বাধীনতা যুদ্ধে তাঁর অবদানের জন্য নড়াইল জেলা পরিষদ ডাক বাংলো চত্বরে তাঁকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা প্রদান করা হয়। যৌবনে বাড়ী ছেড়ে যে গ্রামে এসে এক কৃষক পরিবারে আশ্রয় নিয়েছিলেন, সেই গ্রামের স্কুল, বাকড়ী স্কুলের পাশে বাংলাদেশ ও ভারতের অসংখ্য অনুসারী ও ভ্রাতৃপ্রতিম পার্টির নেতা কর্মীদের উপস্থিতিতে তাকে সমাহিত করা হয়। সমাধিস্থলে প্রতিবছর ১৭ ও ১৮ জানুয়ারী অমল সেন মেলা অনুষ্টিত হয় যেখানে সারা দেশের বামপন্থী রাজনীতির নেতা কর্মীরা মিলিত হন। সেখানে আলোচনা অনুষ্ঠান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও গ্রামীন মেলার আয়োজন করা হয়। তাঁর জন্মদিন ১৯ জুলাইকে কেন্দ্র করে জন্মস্থান আউড়িয়ায় অনিয়মিত ও অনাড়ম্বরভাবে অনুষ্ঠানাদি হয়ে থাকে।
নড়াইলে কমরেড অমল সেনের মৃত্যুবার্ষিকী পালিত

আরো পড়ুন






