ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহে পরকীয়ার অভিযোগে গ্রাম্য সালিশে প্রেমিক-প্রেমিকার চুল ও ভ্রু কেটে মারধরের ঘটনা ঘটেছে। বুধবার রাতে শৈলকুপার আবাইপুর গ্রামের ওয়াপদা মোড়ের পাশে এ ঘটনা ঘটে।মুখে চুনকালি মাখিয়ে গলায় জুতোর মালা পরিয়ে বে-ধড়ক মারপিট করে গ্রাম ছাড়া করার ঘটনায় এখনো কেউ আটক বা গ্রেফতার হয়নি।
স্থানীয়রা জানায়, ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার আবাইপুর গ্রামে পরকিয়া ও অনৈতিক কাজের অভিযোগে বাড়িতে আগুন দেয়ার ভয় দেখিয়ে সমাজপতিরা ওই নারী ও পুরুষকে গ্রাম্য সালিশে এমন সাজা দেয়। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। বিষয়টি ওই রাতেই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম থেকে স্থানীয় পুলিশ অবগত হয় তবে কারো কাছ থেকে কোনো অভিযোগ না আসায় পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি।আবাইপুর গ্রামের বিশারত বিশ্বাসের স্ত্রী কোহিনুর বেগম জানান, প্রায়ই সাগর নামের এক যুবক নদী পার হয়ে মাছ ব্যবসায়ী নাসিমের বাড়িতে আসা-যাওয়া করে। গত বুধবার রাতেও এ ঘটনা ঘটলে রাত ১০টার দিকে তিনি সাগর ও নাসিমের স্ত্রীকে ঘরে আটকিয়ে গ্রামবাসীদের খবর দেন। পরে গ্রামের মাতব্বরা বিশারত বিশ্বাসের বাড়িতে গ্রাম্য সালিশের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত দেয় সাগর ও নাসিমের স্ত্রীর অনৈতিক কাজের অভিযোগে তাদের মাথার চুল ও ভ্রু কাঁটবে ইয়াসমিনের স্বামী নাসিম। যদি না কাটে তাহলে তার বাড়িঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হবে। এ সিদ্ধান্ত নাসিমকে জানানো হলে পরে সে তার স্ত্রী ও পরকিয়ার অভিযোগে আটক সাগরের মাথার চুল ও ভ্রু কেঁটে দেয়। এরপর তাদের মুখে চুনকালি ও গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেয় এলাকার কিছু মানুষ। তাদের কে মারধর করে গ্রাম ছাড়াও করা হয়।
শুক্রবার সকালে আবাইপুর ওয়াবদার পাশে নাসিমের বাড়িতে গিয়ে নাসিমকে না পাওয়া গেলেও তার মা সালেহা খাতুন জানান, গ্রাম্য সালিশে সিদ্ধান্ত হয় নাসিম তার স্ত্রীর মাথার চুল কেটে তাড়িয়ে না দিলে তার বাড়িঘর আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হবে। এ ভয়ে তার ছেলে তার স্ত্রীকে মাথার চুল, ভ্রু কেটে দেয় তাদের মুখে চুনকালি মাখিয়ে মারধরও করা হয় বলে তিনি জানান। এখন তারা কোথায় আছে তা জানেন না। নাসিমের ছোট একটি মেয়ে রয়েছে।
সালিশ বিচার করা মাতব্বরদের অন্যতম আবাইপুর গ্রামের মাতব্বর রবিউল ইসলাম বলেন, নাসিমের প্রতিবেশী কোহিনুর বেগম আপত্তিকর অবস্থায় বগুড়া গ্রামের চা দোকানদার সাগর ও নাসিমের স্ত্রীকে একই ঘরে আটকিয়ে রাখে। পরে তাদের খবর দিলে সালিশে সিদ্ধান্ত হয় অনৈতিক কাজের অপরাধে নিজের স্ত্রীর চুল ও ভ্রু তাকে কাঁটতে হবে এবং দুজনকে গলায় জুতার মালা দিয়ে গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দেয়া হবে। ওই রাতেই তারা গ্রাম ছাড়ে। এমন বিচার না করলে ক্ষুব্ধ জনতা মারধর করে তাদের মেরে ফেলত বলে তিনি জানান।
এই প্রসঙ্গে স্থানীয় হাটফাজিলপুর পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই ফারুক হোসেন জানান, বুধবার রাতে ফেসবুক থেকে তারা প্রথমে জানতে পারে। পরে আবাইপুর গ্রাম থেকেও কিছু মানুষ জানিয়েছিল, অনৈতিক কাজের অভিযোগে দুইজনকে একই ঘরে আটকিয়ে রাখা হয়েছে। তিনি তাদের ক্যাম্পে সোপর্দ করতে বললে তারা জানান উভয়ের অভিভাবকদের কাছে দেয়া হবে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ তাদের কাছে আসেনি। অভিযোগ আসলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।







