Friday, December 5, 2025

সারাদেশে শিশুদের টাইফয়েডে’র টিকাদান কর্মসূচি শুরু

এ কর্মসূচিতে ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী প্রায় পাঁচ কোটি শিশুকে বিনামূল্যে এ টিকা দেওয়া হবে। সারাদেশে প্রথমবারের মতো সরকারিভাবে টাইফয়েডের টিকা দেওয়া আজ থেকে শুরু হয়েছে।

রোববার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকার আজিমপুরে স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানা কেন্দ্রে এ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। তিনি বলেন, “টাইফয়েডে এখনও দেশের শিশুদের মৃত্যু হয় এটা লজ্জার। বাংলাদেশ ডায়রিয়া, রাতকানাসহ অনেক রোগ প্রতিরোধ করেছে। এবার টাইফয়েড প্রতিরোধেও সফল হবে।

“টাইফয়েড এমন একটি রোগ, যা সচেতনতা ও টিকাদানের মাধ্যমে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এই কর্মসূচির মাধ্যমে মাধ্যমে আমরা যদি প্রতিটি শিশুর কাছে টিকা পৌঁছে দিতে পারি, তাহলে দেশে টাইফয়েডে মৃত্যুর ঘটনা কার্যত বন্ধ করা সম্ভব হবে। এ উদ্যোগ আমাদের জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করবে।”রোগ প্রতিরোধ করতে পারলে স্বাস্থ্যের ওপর চাপ কমানো যায় মন্তব্য করে নূরজাহান বেগম বলেন, “আমাদের এখন সবচেয়ে বড় লক্ষ্য রোগ প্রতিরোধ। যত বেশি মানুষ, বিশেষ করে শিশুদের প্রতিরোধমূলক টিকার আওতায় আনা যাবে, ততই হাসপাতালে ভিড় ও চাপ কমবে।

দেশের প্রথমবারের জাতীয়ভাবে টাইফয়েড কর্মসূচির আওতায় ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী প্রায় পাঁচ কোটি শিশুকে বিনামূল্যে টিকা দেওয়া হবে। এ কর্মসূচির আওতায় এক ডোজ ইনজেক্টেবল টিকা শিশুদের দেওয়া হচ্ছে। এ কর্মসূচিতে সহায়তা করছে আন্তর্জাতিক ভ্যাকসিন সহায়তা সংস্থা গ্যাভি।

অনুষ্ঠানে সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেন, “টাইফয়েড টিকাদান কর্মসূচি শুধু একটি প্রকল্প নয়। বাংলাদেশের জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এই কর্মসূচি আমাদের শিশুস্বাস্থ্য সুরক্ষায় নতুন দিগন্ত খুলে দেবে। দীর্ঘদিন ধরে টাইফয়েড একটি নীরব বিপদ হিসেবে থেকে গেছে, বিশেষ করে নিম্ন আয়ের পরিবারের শিশুদের জন্য। এবার সরকারের এই উদ্যোগ সেই দুর্বল জায়গায় বড় পরিবর্তন আনবে। আমি আশা করি, সবাই সচেতনভাবে অংশ নেবে এবং তাদের সন্তানদের টিকা নিশ্চিত করবে।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে টাইফয়েডের টিকার গুরুত্ব তুলে ধরেন। গ্লোবাল বার্ডেন অফ ডিজিজ স্টাডি’র বরাত দিয়ে তিনি বলেছিলেন, ২০২১ সালে বিশ্বে ৭০ লাখের বেশি মানুষ টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়, মৃত্যু হয় ৯৩ হাজারের। মৃতদের একটা বড় অংশ দক্ষিণ এশিয়ায়। এ সময় বাংলাদেশে প্রায় আট হাজার মানুষ টাইফয়েড জ্বরে মারা যায়। এর ৬৮ শতাংশ, অর্থাৎ প্রায় ছয় হাজার জনের বয়স ১৫ বছরের কম। টাইফয়েড জ্বরের চিকিৎসায় প্রচলিত যেসব অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার হয়, তার একটি বড় অংশ কাজ করছে না। ফলে ভয়াবহ ওষুধ প্রতিরোধী টাইফয়েড জ্বরের প্রকোপ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। টাইফয়েড টিকা নিলে এই জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার হার অনেকাংশে কমে যাবে। এতে অ্যান্টিবায়োটিকের অপপ্রয়োগ কমে আসবে। এছাড়া শিশুদের টাইফয়েড সংক্রমণজনিত অসুস্থতা ও মৃত্যুহার বহুলাংশে কমাবে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানার সভাপতি আজমল হোসেন। এ সময় স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব রেজাউল মাকছুদ জাহেদী, ইউনিসেফের কান্ট্রি ডিরেক্টর রানা ফ্লাওয়ার এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ডা. আহমদেম জামশেদ মোহাম্মদ উপস্থিত ছিলেন।

নিবন্ধন করবেন যেভাবে-

টাইফয়েডের টিকাদানের জন্য ১ অগাস্ট থেকে অনলাইনে নিবন্ধন শুরু হয়েছে। vaxepi.gov.bd/registration/tcv ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে। নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজন হবে ১৭ সংখ্যার জন্ম নিবন্ধন সনদ। এরপর নারী না পুরুষ সেই ঘরটি পূরণ করতে হবে। একটি ক্যাপচা কোড পূরণের মাধ্যমে আবেদনকারীর সব তথ্য যাচাইয়ের মাধ্যমে পরের ধাপে যাওয়া যাবে। এই অংশে গিয়ে আবেদনকারী বা পিতা-মাতার মোবাইল নম্বর, ই-মেইল, পাসপোর্ট নম্বর, বর্তমান ঠিকানার ঘর পূরণ করতে হবে সাবমিট করতে হবে। সাবমিট করার পর মোবাইল ফোনে আসা একটি ওটিপি দেওয়ার মাধ্যমে নিবন্ধনের প্রাথমিক প্রক্রিয়া শেষ হবে।

দ্বিতীয় ধাপে টাইফয়েড অথবা মেনিনজাইটিস এই দুটির একটি সিলেক্ট করতে হবে। টাইফয়েড অংশে ক্লিক করলে দুটি অপশন আসবে-শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত নবম শ্রেণি ও সমমান পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থী অথবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বহির্ভুত ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী সকল শিশু।

এখান থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অপশনে গেলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম, পুরো ঠিকানা, কোন শ্রেণিতে অধ্যয়নরত তা পূরণ করতে হবে। এরপর সাবমিট করলে টিকাদান কেন্দ্রের তথ্য আসবে।

আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বহির্ভুত ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী সকল শিশু-এই অপশনে গিয়ে টিকাদান কেন্দ্র বাছাইয়ের পর সাবমিট করতে হবে। এরপর ভ্যাকসিন কার্ড আসবে। সেখানে ভ্যাকসিন কার্ড ডাউনলোড করতে হবে। এই কার্ড নিয়ে নির্ধারিত দিনে টিকাদান কেন্দ্রে যেতে হবে। টিকা দেওয়ার পর অনলাইনেই পাওয়া যাবে টাইফয়েড ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট।

জন্ম নিবন্ধন সনদ না থাকলেও বাবা-মায়ের মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে নিবন্ধন করা যাবে। এ ক্ষেত্রে লিখিতভাবে টিকার তথ্য দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি।

রাতদিন-ডিজিটাল ডেস্ক/জয়-

আরো পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত

এই বিভাগের আরো খবর