Thursday, November 6, 2025

দেশের অর্ধেক নারীকে পশ্চাৎপদ রেখে জাতি উন্নত হতে পারে না: নার্গিস বেগম

মোঃ জুম্মান হোসেন: বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে যশোর জেলা মহিলা দলের উদ্যোগে এক বিশাল নারী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে শহরের চৌরাস্তা মোড়ে আয়োজিত এই সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় ও জেলা বিএনপি ও মহিলা দলের নেতৃবৃন্দ।

সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক নার্গিস বেগম। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মহিলা দল ১৯৭৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নারীর ক্ষমতায়ন ও উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা করেন। সেই সময় থেকেই বিএনপির নীতি ছিল নারীকে সমাজ ও রাষ্ট্রের মূলধারায় সম্পৃক্ত করা।”

অধ্যাপক নার্গিস বেগম বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৯৭৮ সালের ১৬ মে এক অনুষ্ঠানে উল্লেখ করেছিলেন— দেশের অর্ধেক নারীকে পশ্চাৎপদ রেখে জাতি উন্নত হতে পারে না। তিনি নারীদের প্রতি যথাযথ সম্মান ও দায়িত্ব পালনের কথা স্পষ্টভাবে ১৯ দফা কর্মসূচিতে উল্লেখ করেছিলেন। বেগম খালেদা জিয়া পরবর্তীতে সেই পথ অনুসরণ করে নারীর মর্যাদা ও ক্ষমতায়নকে আরো সম্প্রসারিত করেন।

তিনি অভিযোগ করেন, “ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আমলে দেশের নারী সমাজ নির্যাতন-নিপীড়নের হাত থেকে রেহাই পায়নি। সীমান্তে ফেলানির লাশ ঝুলে থাকার সময়ও মহিলা দলের নেত্রীরা রাজপথে ঝুঁকি নিয়ে প্রতিবাদ করেছেন। আজও তারা সেই ব্যথা বহন করে চলছেন।” তিনি আরও বলেন, “আগামী প্রজন্ম যাতে বেশি করে সুযোগ পায় এবং সমাজ থেকে বৈষম্য দূর করে সমান মর্যাদায় নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারে, সে জন্য মহিলা দলকে কাজ করতে হবে।”

দেশের অর্ধেক নারীকে পশ্চাৎপদ রেখে জাতি উন্নত হতে পারে না: নার্গিস বেগমসমাবেশের প্রধান বক্তা, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, “শহীদ জিয়াউর রহমান নারীদের নিরাপদ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছিলেন। তিনি যৌতুকের অভিশাপ থেকে রক্ষা করতে আইন করেছিলেন, জাতীয় মহিলা সংস্থা ও মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়নের সূচনা করেছিলেন। বেগম খালেদা জিয়া নারীদের এসিড সন্ত্রাসীদের হাত থেকে রক্ষায় আইন প্রণয়ন করেন, দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য অবৈতনিক শিক্ষা চালু করেন এবং প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে ৫০ শতাংশ নারী কোটা রাখেন।”

অনিন্দ্য ইসলাম অমিত প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, “বিএনপি ক্ষমতায় এলে ৩৫ লাখ নারীকে কর্মসংস্থানের সুযোগ দেওয়া হবে। ২৫ বছরের নিচে বিধবা নারীদের কর্মস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। শিক্ষার্থীদের জন্য ডিগ্রি পর্যন্ত বিনামূল্যে শিক্ষা চালু করা হবে। এছাড়া ‘ফ্যামিলি কার্ড’ চালু করা হবে, যার মাধ্যমে নারীরা সংসারের ব্যয় নির্বাহের সহায়তা পাবেন।”

সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন যশোর জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাড. সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু ও সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন যশোর জেলা মহিলা দলের সভাপতি রাশিদা রহমান।

দেশের অর্ধেক নারীকে পশ্চাৎপদ রেখে জাতি উন্নত হতে পারে না: নার্গিস বেগমএছাড়া সমাবেশে বক্তব্য দেন জেলা মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা ফেরদৌসী বেগম, সদর উপজেলা মহিলা দলের সভাপতি হাসিনা ইউসুফ, নগর মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সাবিহা সুলতানা, জেলা মহিলা দলের যুগ্ম সম্পাদক রাফাত আরা ডলি, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ারা পারভীন আনু, মহিলা দল নেত্রী নুরুন্নাহার, আলেয়া বেগম, পারুল বেগম প্রমুখ।

সমাবেশটি পরিচালনা করেন নগর মহিলা দলের সভাপতি শামসুন্নাহার পান্না এবং সদর উপজেলা মহিলা দলের সিনিয়র সহসভাপতি সেলিনা পারভীন শেলী।

উল্লেখ্য, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মহিলা দল দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার রক্ষার আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। বক্তারা বর্তমান রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ আরও জরুরি বলে উল্লেখ করেন এবং নারী সমাজকে গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।

আরো পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত

এই বিভাগের আরো খবর

error: Content is protected !!