Saturday, December 6, 2025

চট্টগ্রামে জশনে জুলুসে পদদলিত হয়ে ২ জনের মৃত্যু, আহত অন্তত ১০

চট্টগ্রাম | শনিবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫: পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে আয়োজিত জশনে জুলুসে চট্টগ্রাম নগরের মুরাদপুর এলাকায় পদদলিত হয়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন। তাঁদের মধ্যে একজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (চমেক) আইসিইউতে রাখা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটে শনিবার দুপুরের দিকে।

জুলুসটি সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ষোলশহরের জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদ্রাসা থেকে শুরু হয়। আয়োজক আনজুমান-এ-রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনায় প্রতি বছর ১২ রবিউল আউয়ালে অনুষ্ঠিত এই জুলুসে লাখো মানুষের ভিড় হয়। ট্রাস্টের মুখপাত্র মোছাহেব উদ্দিন বলেন, মুরাদপুর এলাকায় ভিড় অত্যাধিক হওয়ায় “অনাকাঙ্ক্ষিত” ঘটনাটি ঘটে। একই সময়ে খাল-পারাপারের একটি ছোট সেতুও ভেঙে যায়।

মারা যাওয়া দুজন হলেন—আইয়ুব আলী (৬০), বাড়ি পটিয়া উপজেলায়; এবং সাইফুল ইসলাম (১৩), নগরের কালামিয়া বাজার এলাকার বাসিন্দা। আইয়ুব আলীকে ভিড়ে পদদলিত অবস্থায় উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। হাসপাতালে মরদেহের পাশে দাঁড়িয়ে ভাগনে বোরহান উদ্দিন (৪০) বলেন, “একসঙ্গে সবাই জুলুসে এসেছি… এর মধ্যেই ফোন আসে, মামাকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। এসে দেখি তিনি আর বেঁচে নেই।” সাইফুলের বড় ভাই মো. শফিক জানান, “সাইফুল কার সঙ্গে জুলুসে গিয়েছে জানি না… হাসপাতালে এসে দেখি আমার ভাই আর বেঁচে নেই।”

চমেক হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি ওয়ার্ডে শুয়ে নিজের অভিজ্ঞতা জানান আগ্রাবাদের বাসিন্দা মো. মাহফুজ (৩৫): “চারদিকে অনেক মানুষ… রোদের তাপও অনেক বেশি… মানুষের পায়ের নিচে চাপা পড়ে মরার অবস্থা ছিল। কয়েকজন আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে না আনলে বাঁচতাম না।” তাঁর হাতে কথা বলার সময় স্যালাইন চলছিল।

চমেক পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী ইনচার্জ সোহেল রানা বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে জানান, আহতদের মধ্যে ১০ জন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন; একজন অজ্ঞাত তরুণ (বয়স আনুমানিক ২৩–২৪) আইসিইউতে আছেন। আহতদের হাসপাতালে আনে ট্রাস্টের মেডিকেল টিম। দলের সদস্য আমিনুর রহমান বলেন, “গরমে অসুস্থ হয়ে কয়েকজন পড়ে গেলে ভিড়ে পদদলিত হন। আমরা দ্রুত উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসি।”

ঘটনাস্থলে উপস্থিতদের বর্ণনায় জানা যায়, তীব্র রোদ আর ঘন মানবস্রোতের চাপেই আতঙ্ক ছড়ায়। রাস্তায় পড়ে থাকা খোলা জুতা ও ছুটোছুটি করা মানুষ—সব মিলিয়ে কয়েক মিনিটের মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

প্রশাসন ও আয়োজক পক্ষের মধ্যে সমন্বয় বাড়ানো, ভিড় নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্ত ব্যারিকেড ও রুট ম্যানেজমেন্ট, তাপজনিত ঝুঁকি মাথায় রেখে ওয়াটার পয়েন্ট ও প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা—এসব নিয়ে নতুন করে আলোচনা উঠেছে। আয়োজকেরা বলছেন, তদন্ত হলে প্রকৃত কারণ ও দায়-দায়িত্ব স্পষ্ট হবে।

দুজনের মরদেহ চমেক হাসপাতালে রয়েছে। আহতদের চিকিৎসা চলছে।

আরো পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত

এই বিভাগের আরো খবর