বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে আন্দোলনের কারণে টানা ৪০ দিন (১৪ মে–২৩ জুন ২০২৫) ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান কার্যালয় নগর ভবনের কার্যক্রম প্রায় বন্ধ ছিল। এ সময়ে কর্মকর্তাদের অধিকাংশই নিয়মিত অফিসে আসেননি। কিন্তু অফিস কার্যক্রম বন্ধ থাকা সত্ত্বেও জ্বালানির খরচ দেখানো হয়েছে স্বাভাবিক সময়ের সমান।
ডিএসসিসির হিসাব অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটি প্রতি মাসে জ্বালানি খাতে খরচ করে প্রায় ৫ কোটি টাকা। এপ্রিল, মে ও জুন মাসের নথি বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মে ও জুনে ৪০ দিন নগর ভবন বন্ধ থাকলেও তেল খরচ হয়েছে আগের মতোই।
উদাহরণ হিসেবে পরিবেশ, জলবায়ু ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খায়রুল বাকেরের ব্যবহৃত গাড়িটি আন্দোলনের সময় প্রতিদিন ১৫ লিটার করে ৪০ দিনে ৬০০ লিটার জ্বালানি খরচ করেছে বলে নথিতে উল্লেখ আছে, যার মূল্য প্রায় ৬১ হাজার ২০০ টাকা। কিন্তু তাঁর চালক স্বীকার করেছেন, আন্দোলনের সময় প্রতিদিন গাড়ি বের হয়নি, প্রয়োজন হলে মাত্র বের হয়েছেন। একইভাবে প্রধান সমাজকল্যাণ ও বস্তি উন্নয়ন কর্মকর্তা মোবাশ্বের হাসান প্রতিদিন ১৪ লিটার করে মোট ৫৬০ লিটার তেল নিয়েছেন। তিনি দাবি করেন, নগর ভবন বন্ধ থাকলেও ওয়াসা ভবন, সচিবালয় ও কর্মচারী হাসপাতালে অফিস করেছেন।
করপোরেশনের অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে, আন্দোলনের সময় করপোরেশনের বাইরে নিয়মিত অফিস চালানোর মতো কোনো অবকাঠামো ছিল না; কেবল কিছু জরুরি সভা সচিবালয় ও ওয়াসা ভবনে হয়েছে। অনেক কর্মকর্তা ব্যক্তিগত কাজে সরকারি গাড়ি ও তেল ব্যবহার করেন এবং অতিরিক্ত বরাদ্দকৃত তেল বিক্রি করে চালক ও তেল ইস্যুকারী কর্মকর্তারা আর্থিকভাবে লাভবান হন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
জ্বালানি ইস্যুকারীর বিরুদ্ধেও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তেলের বরাদ্দ যাচাই–বাছাই না করে কর্মকর্তাদের চাহিদা অনুযায়ী তেল ইস্যু করা হয় বলে জানা গেছে।
বর্তমান প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়ার গাড়িতে জুন মাসে ৮৫৫ লিটার তেল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেছেন, “কেউ যদি অফিস না করেও তেল ইস্যু করে থাকেন, সেটা নিতান্তই অন্যায়। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।”
দুর্নীতিবিরোধী সংগঠন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, জনগণের করের টাকায় চলা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এ ধরনের অনিয়ম সরাসরি দুর্নীতি ও প্রতারণা। “যাঁরা বিধিবহির্ভূতভাবে লাভবান হয়েছেন, তাঁদের পাশাপাশি যাঁরা প্রক্রিয়াকরণ ও অনুমোদনের সঙ্গে জড়িত, তাঁদেরও দৃষ্টান্তমূলক জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে,” বলেন তিনি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ঘটনা সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বচ্ছতা ও তদারকির ঘাটতির নগ্ন বহিঃপ্রকাশ এবং দ্রুত তদন্ত ও দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তারা।







