স্টাফ রিপোর্টার: সময় মতো অফিসে পৌঁছাতে না পারলেও সেদিন মিরপুর সিআরপির চেম্বারে ঢুকেই চমক পান মারজানা আক্তার। হাতে ক্রাচ দেখে যে রোগী তাঁকে থেরাপি নিতে আসা ভেবেছিলেন, চেম্বারে ঢুকে তাঁকেই থেরাপিস্ট হিসেবে সামনে পেয়ে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকেন। তবে মারজানার কাছে এমন অভিজ্ঞতা নতুন নয়। কারণ, তিনি জানেন—প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও তাঁর পেশাদারিত্বই রোগীদের আস্থা অর্জন করে নেয়।
মারজানার জীবনের পথচলা সহজ ছিল না। কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে ২০১৫ সালের জুনে জামগাছ থেকে পড়ে গুরুতর স্পাইনাল কর্ড ইনজুরিতে আক্রান্ত হন তিনি। দুই দফা অস্ত্রোপচার, দীর্ঘ ফিজিওথেরাপি আর হুইলচেয়ারে আবদ্ধ জীবন তাঁর সামনে এক ভয়াবহ অধ্যায় খুলে দিয়েছিল। কিন্তু সেই ব্যথা-যন্ত্রণার ভেতর দিয়েই শুরু হয় নতুন লড়াই।
সাভারের সিআরপিতে থেরাপি নিতে নিতেই তিনি হুইলচেয়ার থেকে উঠে দাঁড়াতে শেখেন এলবো ক্রাচে ভর করে। পড়াশোনায় ফেরার স্বপ্নও তখন তাঁকে শক্তি দেয়। হুইলচেয়ারে বসেই বাস্কেটবল খেলার মাধ্যমে যোগ দেন নারী হুইলচেয়ার বাস্কেটবল দলে। নেপাল, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ডে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশ নিয়ে দলনেত্রীও হন তিনি।
২০১৯ সালে ঢাকার শেরেবাংলা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে এইচএসসি শেষ করে ভর্তি হন সেই প্রতিষ্ঠানে, যা তাঁকে নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখিয়েছে—সিআরপি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের অধীনে স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি বিষয়ে বিএসসি পড়াশোনায় ভর্তি হয়ে তিনি হয়ে ওঠেন রোগী থেকে শিক্ষার্থী।
সম্প্রতি ইন্টার্নশিপ শেষ করেছেন মারজানা আক্তার। এখন তিনি পূর্ণাঙ্গ ক্লিনিক্যাল স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিস্ট। এক দশক আগের মারজানা আর আজকের মারজানার মধ্যে পার্থক্য অনেক। এখন তাঁর চোখে শুধু আত্মবিশ্বাস আর দৃঢ়তা।
তিনি বলেন, “এক সময় থেরাপি নিয়েছি, এখন আমিই থেরাপি দেব। কোনো বাধাই আর আমাকে দমিয়ে রাখতে পারবে না।”
মারজানার গল্প কেবল এক তরুণীর নয়, এটি অদম্য সাহস, স্বপ্ন আর জীবন জয় করার প্রেরণার গল্প।







