মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে (কেএলআইএ) বৈধ ভ্রমণ ভিসা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশি যাত্রীদের ‘নো টু ল্যান্ড’ (এনটিএল) দিয়ে ফেরত পাঠানোর ঘটনা বাড়ছে। সম্প্রতি একসঙ্গে ৯৮ জন বাংলাদেশিকে বিমানবন্দরে আটকে রেখে পরবর্তী ফ্লাইটে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় প্রবাসী সমাজে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। অভিবাসন বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা থাকা মানেই প্রবেশ নিশ্চিত নয়—বরং প্রবেশের চূড়ান্ত অনুমতি ইমিগ্রেশন ডেস্কে সাক্ষাৎকার ও নথি যাচাইয়ের ওপর নির্ভর করে।
অভিবাসন আইনে এনটিএল হলো একটি প্রক্রিয়া, যেখানে যাত্রীর ভিসা থাকলেও তাকে বিমানবন্দরে প্রবেশের অনুমতি না দিয়ে ফেরত পাঠানো হয়। ভিসা কেবলমাত্র প্রবেশের আবেদন করার সুযোগ দেয়, কিন্তু অনুমোদনের ক্ষমতা থাকে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের হাতে। মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগ জানিয়েছে, প্রতিদিনই বিভিন্ন দেশের যাত্রীকে ফেরত পাঠানো হয়। তবে বাংলাদেশি যাত্রীদের ক্ষেত্রে কিছু বিশেষ ঝুঁকি চিহ্নিত হওয়ায় তাদের যাচাই–বাছাই অনেক কড়া।
অভিবাসন কর্মকর্তাদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রে এনটিএল (নো টু ল্যান্ড) বেশি দেওয়ার পেছনে রয়েছে একাধিক কারণ। এর মধ্যে রয়েছে পর্যটক ভিসা নিয়ে অবৈধভাবে কাজ করার প্রবণতা, পূর্বের ওভারস্টে বা অবৈধভাবে থাকার রেকর্ড, ভুয়া নথি যেমন আমন্ত্রণপত্র, হোটেল বুকিং বা রিটার্ন টিকিট ব্যবহার, আর্থিক সক্ষমতার প্রমাণ না থাকা, পাসপোর্ট বা নথিতে অসঙ্গতি, সাক্ষাৎকারে দ্বিধা বা অস্পষ্ট উত্তর দেওয়া এবং নিরাপত্তাজনিত কারণে নাম আন্তর্জাতিক সতর্কতালিকায় থাকা। এসব কারণে বাংলাদেশি যাত্রীদের প্রবেশ যাচাইয়ের সময় অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করে মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ।
ঢাকার মিরপুরের বাসিন্দা আবদুল্লাহ আল মামুন সম্প্রতি মালয়েশিয়ায় গিয়ে এনটিএল হয়ে ফেরত এসেছেন। তিনি বলেন, “আমার হাতে ভিসা, রিটার্ন টিকিট, হোটেল বুকিং সব ছিল। কিন্তু ইমিগ্রেশন অফিসারের প্রশ্নে আমি কিছু দ্বিধায় পড়ি। কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষার পর তারা আমাকে ফেরত পাঠায়।”
এক ট্রাভেল এজেন্সির মালিক বলেন, “অনেকে মনে করেন, ভিসা থাকলেই ঢোকা নিশ্চিত। আসল পরীক্ষা হয় ইমিগ্রেশন সাক্ষাৎকারে। আপনার ভ্রমণ পরিকল্পনা, নথি এবং আচরণ—সব মিলিয়েই কর্মকর্তারা সিদ্ধান্ত নেন।”
অভিবাসন বিশেষজ্ঞদের মতে, সঠিক প্রস্তুতি নিলে ‘নো টু ল্যান্ড’ (এনটিএল) এড়ানো সম্ভব। এজন্য ভ্রমণের উদ্দেশ্য স্পষ্টভাবে উপস্থাপন করতে হবে এবং পাসপোর্ট, ভিসা, রিটার্ন টিকিট, হোটেল বুকিং ও ব্যাংক স্টেটমেন্টসহ প্রয়োজনীয় সব নথি সঙ্গে রাখতে হবে। হাতে পর্যাপ্ত নগদ অর্থ—অন্তত ৫০০ থেকে ৭০০ মার্কিন ডলার সমমূল্য—এবং কার্যকর আন্তর্জাতিক কার্ড থাকা জরুরি। এছাড়া ইমিগ্রেশন সাক্ষাৎকারে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উত্তর দেওয়া ও পূর্বের অভিবাসন আইন ভাঙা থাকলে তার সমাধান করা প্রয়োজন। এসব শর্ত পূরণ করলে বিদেশ ভ্রমণকারীরা প্রবেশে জটিলতা এড়াতে পারবেন।
সাম্প্রতিক ৯৮ জন বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো কেবল মালয়েশিয়ার নয়, বরং আন্তর্জাতিক ভ্রমণ ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকার বার্তা দিচ্ছে। ভিসা কোনো প্রবেশপত্র নয়; এটি কেবল আবেদন করার সুযোগ। এ সুযোগ কাজে লাগাতে হলে নথি সঠিক রাখা, উদ্দেশ্য স্পষ্ট করা এবং আত্মবিশ্বাসী আচরণ জরুরি।
অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যদি বাংলাদেশিরা নিয়ম মেনে বিদেশ ভ্রমণ ও কাজ করেন, তাহলে ভবিষ্যতে এসব শর্ত কিছুটা শিথিল হতে পারে। কিন্তু তার আগে প্রয়োজন মানসিকতার পরিবর্তন—অবৈধভাবে কাজের উদ্দেশ্যে বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা বন্ধ করতে হবে। তাহলেই ‘নো টু ল্যান্ড’ সমস্যার ঝুঁকি কমবে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিও উন্নত হবে।







