বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রামে লুকিয়ে থাকে অসংখ্য অজানা গল্প—যেখানে মিশে আছে দুঃখ, সংগ্রাম, স্বপ্ন আর মানবতার আলো। ঝিনাইদহ জেলার পাগলা কানাই গ্রামের মো. সাইফুর রহমান, যিনি সবার কাছে ‘রিপন হোসেন’ নামে পরিচিত, সেই গল্পগুলো নাটকের মাধ্যমে তুলে ধরছেন ফেসবুক পেজ ‘স্বপ্ন ২৩’-এ।
৪৪ বছর বয়সী রিপন নিজেই এক সংগ্রামের প্রতীক। দরিদ্র পরিবারের সন্তান হয়ে জীবনের শুরুটা ছিল কষ্টে ভরা। বাস্তবতার চাপে একসময় ইজিবাইক চালানো শুরু করলেও, তিনি ছিলেন শুধু চালক নন—ছিলেন দক্ষ মিস্ত্রি ও মানবিক কাজের নিবেদিতপ্রাণ একজন কর্মী। জীবনের নানা কষ্ট সত্ত্বেও গরু বিক্রির টাকা দিয়ে টানা আট সপ্তাহ, প্রতি শুক্রবার ২০০–২৫০ অসহায় মানুষের জন্য দুপুরের খাবারের আয়োজন করেছিলেন তিনি।
‘স্বপ্ন ২৩’-এ প্রচারিত নাটকগুলো গ্রামের সাধারণ মানুষের হাসি-কান্না, স্বপ্ন-ব্যর্থতা, কষ্ট ও আশা জীবন্ত করে তোলে। এগুলো শুধু বিনোদন নয়—এগুলো সামাজিক প্রতিবাদের শক্তিশালী মাধ্যম। প্রতিটি নাটকে উঠে আসে সমাজের অসঙ্গতি, দরিদ্রতা, বেকারত্ব ও মানবাধিকারের লঙ্ঘনের চিত্র। এক মায়ের কষ্ট, এক বাবার হারানো স্বপ্ন কিংবা এক তরুণীর লুকানো দুঃখ—সবই বাস্তবতার ছোঁয়ায় দর্শকদের হৃদয় ছুঁয়ে যায়।
রিপনের দুই মেয়ে বৃষ্টি ও শ্রাবনী নিয়মিত নাটকের গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেন। বিশেষ করে ‘সৎ মা’-এর মেয়ের ভূমিকায় তাদের অভিনয় দর্শকদের আবেগাপ্লুত করে, যা সমাজে প্রচলিত নেতিবাচক ধারণাকে চ্যালেঞ্জ জানায়।
এছাড়া অভিনেতা মাসুদ রানা, যিনি প্রায়ই ভিলেন চরিত্রে অভিনয় করেন, তার তীক্ষ্ণ অভিব্যক্তি ও সংলাপের জন্য আলাদা করে প্রশংসিত। দলের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে আছেন মো. সাব্বীর হোসেন এবং ক্যামেরার আড়ালের কারিগর আলামিন হোসেন, যাদের অবদান নাটকগুলোকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে।
নাটক থেকে অর্জিত অর্থ দিয়ে রিপন নিজের ও দলের খরচ চালান, পাশাপাশি অসহায় মানুষের সহায়তায় এগিয়ে আসেন। এক বিশেষ ঘটনায় তিনি অসুস্থ পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির চিকিৎসার জন্য তাৎক্ষণিক আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন, যা একটি জীবন বাঁচিয়েছে।
রিপনের লক্ষ্য শুধু নাটক নির্মাণ নয়; তিনি চান নাটকের মাধ্যমে বঞ্চিত মানুষের কষ্ট সমাজের সামনে তুলে ধরে পরিবর্তনের আলো ছড়িয়ে দিতে। আজ ‘স্বপ্ন ২৩’ শুধু একটি নাটকের পেজ নয়—এটি অসংখ্য স্বপ্ন ও মানবতার সেতুবন্ধন।
রিপনের গল্প প্রমাণ করে, দৃঢ় সংকল্প, ভালোবাসা ও কঠোর পরিশ্রম দিয়ে দরিদ্রতার অন্ধকার ভেদ করে যে কেউ হয়ে উঠতে পারে মানবতার আলো।







