Friday, December 5, 2025

একজন আদিলের ক্ষুধা, সমগ্র মানবতার লজ্জা

আমরা প্রতিদিন কত কী খাই,বাহারি রান্না, সুস্বাদু পদ, চোখ ধাঁধানো আয়োজন। ফ্রিজ ভরে খাবার, ডাইনিং টেবিল সাজে রাজকীয়ভাবে। তারপরও অধিকাংশ সময় ভুলে যাই,আলহামদুলিল্লাহ বলতে। ভুলে যাই, প্রতিটি গ্রাস একেকটি নিয়ামত, একেকটি আল্লাহর পক্ষ থেকে দেওয়া পরীক্ষিত আমানত।

অথচ, এই আমাদেরই পৃথিবীর আরেক প্রান্তে কেউ একজন,যেমন আদিল,হাড়-চামড়ায় পরিণত হয়ে কেবল একটুখানি রুটির অপেক্ষায় মৃত্যুর মুখে এগিয়ে যাচ্ছে। ثُمَّ لَتُسْئَلُنَّ يَوْمَئِذٍ عَنِ النَّعِيمِসেদিন তোমাদের অবশ্যই নিয়ামতসমূহ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। (সুরা তাকাসুর: ৮)

 
একজন ক্ষুধার্ত ভাইকে দেখে আমাদের চোখ ভিজে না কেন?
 
তার নাম আদিল ফাওজি মাদি। বয়স মাত্র ২৭। অথচ তার শরীর এখন কেবল ১৫ কেজির একটি কঙ্কালসদৃশ কাঠামো। যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে যার ওজন ছিল ৫০ কেজি। ক্ষুধা তার শরীরকে এমনভাবে পুড়িয়েছে, যেন আগুনে দগ্ধ করেছে প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। চিকিৎসকদের মতে, দীর্ঘদিন খালি পেটে থাকলে শরীর নিজেই নিজের চর্বি, পেশি, এমনকি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পর্যন্ত খেতে শুরু করে।আদিলকে মেরেছে কোনো বোমা বা গুলি নয়,তাকে হত্যা করেছে কেবল উপেক্ষিত ক্ষুধা।বলছি সেই আদিলের কথা, ফিলিস্তিনের এক ক্ষুধার্ত ভাইয়ের কথা—যাকে দেখে আমাদের চোখ আজও ভিজে না কেন?

আমাদের বিলাস, ওদের বিলীন জীবন
 
আমরা তখন কোথায় থাকি? হয়তো বিয়ে বাড়ির ভুরিভোজে, বা পার্টিতে, অথবা বাসার ডাইনিং টেবিলে। খাবারের পরে যখন আর এক চামচ খাওয়ার মতো জায়গা থাকে না, তখন বলি,আর খেতে পারছি না,এবং বাকি খাবার চলে যায় ডাস্টবিনে। প্রশ্ন করুন নিজেকে,এই খাবার কি আল্লাহর নেয়ামত, না জাহান্নামের আগুনের রসদ? 
 

রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
  

ليس المؤمن الذي يشبع وجاره جائع إلى جنبه সে ঈমানদার নয়, যে নিজে তৃপ্ত হয়ে খায়, অথচ তার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত থাকে। (বায়হাকি, সুনানুল কুবরা: ১৯০৪৯)

 

 
তাদের ক্ষুধা কি আমাদের দায় নয়?
 
আমরা ভাবি,ওটা তো ওদের যুদ্ধ, আমাদের কী? কিন্তু রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
  

المؤمن للمؤمن كالبنيان يشد بعضه بعضا একজন মুমিন অপর মুমিনের জন্য প্রাসাদের দেয়ালের মতো, একটি অংশ আরেকটি অংশকে শক্তি দেয়। (সহিহ বুখারি:২৪৪৬) অন্যায় নিরবতা, মানবিক উদাসীনতা, সবই জবাবদিহির আওতায়। কিয়ামতের দিন শুধু নিজের গাফিলতির জন্য নয়, ওদের অনাহারে আমাদের নীরবতার জন্যও জবাব দিতে হবে।

 

 
আদিলের কঙ্কাল আমাদের অন্ধকার ভবিষ্যৎ?
 
আজ আদিলের শরীর থেকে হারিয়ে গেছে স্বপ্ন, হাসি, জীবন। সে কি শুধু তার একার মৃত্যু? নাকি আমাদের বর্জিত মানবিকতার একটি জীবন্ত প্রতিচ্ছবি?

আল্লাহ বলেন,
  

وَلَا تَحَاضُّونَ عَلَىٰ طَعَامِ ٱلْمِسْكِينِ তোমরা মিসকিনকে খাদ্য দানে উৎসাহিত করো না। (সুরা ফজর:১৮) আমাদের বিলাসী খাদ্য, ভোগ-বিলাস আর উদাসীনতা,সব কিছু একদিন সাক্ষী হবে আদিলের মতো মানুষের পক্ষে। তখন কি আমরা পারবো বলার মতো কিছু করতে?

 

এখনো সময় আছে,তোমার একটুখানি ত্যাগ, কারো জীবনের পাথেয়
 
এখনো সময় আছে। এখনো আমরা পারি কিছু পরিবর্তন আনতে। অতি ভোজন বাদ দিয়ে, অর্ধেক ভাগ করে কারো মুখে এক টুকরো রুটি তুলে দিয়ে, হয়তো আমরা কিনে নিতে পারি জান্নাতের টিকিট। রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
  

اتَّقُوا النَّارَ وَلَوْ بِشِقِّ تَمْرَةٍ তোমরা জাহান্নাম থেকে বাঁচো, ولو একটি খেজুরের টুকরো দান করেও। (সহিহ বুখারি:১৪১৩)

 

একজন আদিলের ক্ষুধা আমাদের খাবার গ্রহণের পদ্ধতির এক কঠিন প্রশ্নচিহ্ন। প্রতিটি প্লেটের বাড়তি খাবার, প্রতিটি অপচয়, প্রতিটি উদাসীনতা,সবই একেকটি বিচারযোগ্য কর্ম। আসুন, আজ থেকেই শুরু করি,ভোগে নয়, ত্যাগে আনন্দ খুঁজে নেবার চর্চা।
আরো পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত

এই বিভাগের আরো খবর