Friday, December 5, 2025

মাগুরায় শেষ হলো ঐতিহ্যবাহী কাত্যায়নী পূজা: ৯০ ফুট তোরণ দেখতে লাখো মানুষের ভিড়

সাকিব হাসান ও পল্লব কুমার দাস: মাগুরায় শেষ হলো সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঐতিহ্যবাহী কাত্যায়নী পূজা। পাঁচ দিনব্যাপী এই পূজা শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) রাতে জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হয়। এবারের পূজার প্রধান আকর্ষণ ছিল ৯০ ফুট উচ্চতার বিশাল তোরণ, যা দেখতে ভিড় করেছেন দেশ-বিদেশের লাখো দর্শনার্থী।

মাগুরায় শেষ হলো ঐতিহ্যবাহী কাত্যায়নী পূজা: ৯০ ফুট তোরণ দেখতে লাখো মানুষের ভিড়প্রতি বছর শারদীয় দুর্গাপূজার এক মাস পর মাগুরায় আয়োজন করা হয় এই কাত্যায়নী পূজা। ত সোমবার ষষ্ঠী তিথিতে দেবী আরাধনার মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে শুক্রবার রাতে বিজয়া দশমীর বিসর্জনের মাধ্যমে সমাপ্ত হয় পূজার সব আনুষ্ঠানিকতা।

মাগুরায় শেষ হলো ঐতিহ্যবাহী কাত্যায়নী পূজা: ৯০ ফুট তোরণ দেখতে লাখো মানুষের ভিড়পাঁচ দিনব্যাপী এ পূজা উপলক্ষে গোটা মাগুরা শহর যেন রূপ নেয় উৎসবের শহরে। পূজা প্রাঙ্গণে গিয়ে মনে হয়েছে, যেন ইউরোপের কোনো শহরে চলছে বর্ণিল মিউজিক ফেস্টিভ্যাল।

গান, সুর ও বাদ্যের তালে তালে ভক্তরা মেতে উঠেছেন নাচে, আনন্দে ও প্রার্থনায়। কে ছোট, কে বড়— তা বোঝার উপায় ছিল না; সবাই যেন এক হয়ে উঠেছিলেন ভক্তি ও উচ্ছ্বাসে। বিশেষ করে তরুণদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।

এবারের পূজার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ছিল নতুন বাজার নিজনান্দুয়ালী সেতুর ওপর নির্মিত ৯০ ফুট উচ্চতার তোরণ। তোরণটি নির্মাণ করেছে স্থানীয় তরুণ ডেকরেটর, যার নকশা ও রূপসজ্জা করেছেন খুলনার শিল্পী নিতাই বিশ্বাস। উদ্যোগ নিয়েছে নিজনান্দুয়ালী নিতাই গৌর গোপাল সেবাশ্রম।

সেবাশ্রম কর্তৃপক্ষ জানায়, “এবার আমরা পুরোনো ঐতিহ্যে ফিরেছি। বাঁশ, কাঠ, কর্কশিট ও রঙিন কাপড়ে তৈরি এই তোরণ সম্পূর্ণ হাতে বানানো।”

তরুণ ডেকরেটর মালিক তরুণ ভৌমিক দাবি করেন,

“কাত্যায়নী পূজাকে ঘিরে এটি দেশের সবচেয়ে উঁচু তোরণ। একে দেখতে প্রতিদিনই হাজারো মানুষ ভিড় করেছেন, যাদের মধ্যে বিদেশ থেকেও দর্শনার্থী এসেছেন।”

শহরের বিভিন্ন এলাকায় তৈরি করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন তোরণ, প্যান্ডেল ও আলোকসজ্জা। প্রতিরাতে পূজামণ্ডপগুলোতে নেমেছে মানুষের ঢল।

পূজামণ্ডপগুলোর ডিজাইন করা হয়েছে প্রাচীন ইতিহাস ও ঐতিহ্যের স্থাপত্যকলার আদলে। কয়েক শতাধিক পটুয়া শিল্পী এক মাসের শ্রমে গড়ে তুলেছেন প্রতিমা ও সাজসজ্জা।

ছানা বাবু বটতলা পূজা কমিটির এক সদস্য জানান, “এবারের আয়োজন ছিল সবচেয়ে বর্ণাঢ্য। মানুষের অংশগ্রহণ আমাদের সকল প্রত্যাশা ছাড়িয়ে গেছে।”

জেলার আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রশাসন ছিল তৎপর। প্রতিটি মণ্ডপে পুলিশ, আনসার ও স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত ছিলেন।

মাগুরার পুলিশ সুপার মিনা মাহমুদা বলেন,

“এবারের পূজা শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে জেলা পুলিশ সর্বোচ্চ দায়িত্ব পালন করেছে। প্রতিটি মণ্ডপে স্থায়ী নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছিল।”

মাগুরার কাত্যায়নী পূজা এখন কেবল একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, বরং এটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সামাজিক ঐক্যের প্রতীক। পূজাকে ঘিরে মাগুরা জুড়ে দেখা গেছে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের অংশগ্রহণ, আনন্দ ও সৌহার্দ্য।

উৎসবের রাতজুড়ে শহর ছিল আলোয় ঝলমলে, ভক্তি ও উচ্ছ্বাসে মুখর। পূজার শেষে বিজয়া দশমীর সিঁদুর খেলা, বিসর্জন ও পরস্পরের শুভেচ্ছা বিনিময়ের মধ্য দিয়ে শেষ হয় এবারের মাগুরার কাত্যায়নী পূজা ২০২৫।

আরো পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত

এই বিভাগের আরো খবর