Friday, December 5, 2025

হিজরতের পর জিহাদের অনুমতি: ইসলামের সূচনালগ্নে মুসলিমদের আত্মরক্ষার নির্দেশনা

ইসলামের সূচনালগ্নে মক্কায় অবস্থানকালীন সময় মুসলিমরা চরম নির্যাতনের শিকার হন। কাফের ও মুশরিকরা তাঁদের ওপর নানা রকম মানসিক ও শারীরিক নিপীড়ন চালাত। এই নির্যাতন এমন মাত্রায় পৌঁছায় যে, একপর্যায়ে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নেতৃত্বে মুসলমানরা মদিনায় হিজরত করতে বাধ্য হন।

মদিনায় হিজরতের পর আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদের সামর্থ্য ও শক্তি দান করেন। সেই সময় কাফের, মুশরিক ও ইহুদি গোষ্ঠী মুসলিমদের বিরুদ্ধে নতুন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। তখন মুসলিমদের আত্মরক্ষার স্বার্থে প্রথমবারের মতো যুদ্ধের অনুমতি প্রদান করা হয়। তবে তা সঙ্গে সঙ্গে ফরজ করা হয়নি, বরং কেবল ‘অনুমতি’ দেওয়া হয়েছিল।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে—

أُذِنَ لِلَّذِينَ يُقَاتَلُونَ بأَنَّهُمْ ظُلِمُوا وَإنَّ اللهَ عَلَى نَصْرِهِمْ لَقَدِيرٌ
“যুদ্ধের অনুমতি দেয়া হল তাদেরকে, যাদের সঙ্গে যুদ্ধ করা হচ্ছে, কারণ তাদের প্রতি জুলুম করা হয়েছে। আর আল্লাহ তাদেরকে সাহায্য করতে অবশ্যই সক্ষম।”
(সূরা হজ, আয়াত: ৩৯)

বুখারি ও মুসলিম শরীফে হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে—
নবী করিম (সা.) যখন মক্কা থেকে হিজরত করলেন, তখন হজরত আবু বকর (রা.) আফসোস করে বললেন: “তারা তাদের নবীকে মক্কা থেকে বের করে দিয়েছে! ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।” তখন আল্লাহ তায়ালা উপরোক্ত আয়াত নাজিল করেন।

এটাই ছিল ইসলামে সশস্ত্র জিহাদ সংক্রান্ত প্রথম কোরআনিক নির্দেশনা।

পরে আল্লাহ তায়ালা সীমিত শর্তে যুদ্ধের আদেশ দেন। তিনি বলেন—

وَقَاتِلُوا فِي سَبِيلِ اللهِ الَّذِينَ يُقَاتِلُونَكُمْ وَلا تَعْتَدُوا إِنَّ اللهَ لا يُحِبُّ الْمُعْتَدِينَ
“যারা তোমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে, তোমরা আল্লাহর রাস্তায় তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করো, তবে সীমালঙ্ঘন করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না।”
(সূরা বাকারা, আয়াত: ১৯০)

এই আয়াতের মাধ্যমে মুসলিমদের প্রতি নির্দিষ্টভাবে নির্দেশ আসে— যারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করবে, কেবল তাদের বিরুদ্ধেই যুদ্ধ করা যাবে। পরবর্তী পর্যায়ে সকল মুশরিক ও শত্রুদের বিরুদ্ধে জিহাদ ফরজ করা হয়, যাতে ইসলাম ও মুসলিম জাতিকে টিকে থাকার সুযোগ দেওয়া যায়।

জিহাদ: ফরজে আইন না ফরজে কিফায়া?

ইসলামি চিন্তাবিদদের মধ্যে এ বিষয়ে মতবিরোধ রয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন— জিহাদ ফরজে আইন, আবার কেউ বলেছেন— ফরজে কিফায়া। প্রসিদ্ধ ও গ্রহণযোগ্য অভিমত হলো— জিহাদ মূলত ফরজে আইন, অর্থাৎ প্রতিটি মুসলিমের ওপর তা কোনো না কোনোভাবে ফরজ।

তবে জিহাদের ধরন ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে: অন্তরের মাধ্যমে (ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান, অন্যায়ের বিরোধিতা), জবান বা কথার মাধ্যমে (সত্য প্রচার, মিথ্যার প্রতিবাদ), হাত বা শক্তির মাধ্যমে (প্রয়োজনে প্রতিরোধ গড়া), সম্পদ দিয়ে (আর্থিক সহায়তা ও অবদান)

এদের যেকোনো একটির মাধ্যমে একজন মুসলিম জিহাদে অংশ নিতে পারেন। তবে জীবন দিয়ে (অস্ত্রধারণ করে) জিহাদ করা ফরজে কিফায়া, অর্থাৎ একটি দল তা সম্পাদন করলে বাকি মুসলিমদের ওপর ফরজ ওঠে যাবে। তবে কেউ না করলে সবাই গুনাহগার হবে।

ধর্ম ডেস্ক/আর কে-০৫

আরো পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত

এই বিভাগের আরো খবর