ইসলামে মানুষের আত্মিক ও নৈতিক উন্নতির জন্য প্রবৃত্তি বা ‘নফস’ একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয়। নফস আরবি শব্দ, যার অর্থ আত্মা বা অহং। তবে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে মানুষের ইন্দ্রিয়জ বাসনা, কামনা-চাহিদা, ও অভ্যন্তরীণ টানাপোড়েনকেই ‘নফস’ বলা হয়। কোরআন ও হাদিসে এই নফসকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে—নফসে আম্মারাহ, নফসে লাওয়্যামাহ ও নফসে মুত্বমায়িন্নাহ।
🔹 নফসে আম্মারাহ (প্রতারক প্রবৃত্তি)
এই নফস সব সময় মানুষকে মন্দ চিন্তা ও পাপের দিকে ধাবিত করে। কোরআনে নবী ইউসুফ (আ.) বলেছেন, “আমি নিজেকে নির্দোষ মনে করি না, মানুষের মন তো মন্দকর্মপ্রবণ।” (সুরা ইউসুফ, আয়াত: ৫৩)
🔹 নফসে লাওয়্যামাহ (অনুশোচনাকারী প্রবৃত্তি)
এই নফস মানুষের মধ্যে অনুতাপ ও আত্মসমালোচনার চেতনা জাগ্রত করে। যেমনটি কোরআনে বলা হয়েছে, “আমি আরও শপথ করছি সে আত্মার, যে নিজের কাজের জন্য নিজেকে ধিক্কার দেয়।” (সুরা কিয়ামাহ, আয়াত: ২)
🔹 নফসে মুত্বমায়িন্নাহ (প্রশান্ত প্রবৃত্তি)
এটি সেই পরিশুদ্ধ আত্মা, যা সকল পাপ ও অশান্তি থেকে মুক্ত এবং আল্লাহর সন্তুষ্টিতে পরিপূর্ণ। কোরআনের ভাষায়, “হে প্রশান্ত আত্মা, তুমি তোমার প্রতিপালকের কাছে ফিরে এসো… আমার জান্নাতে প্রবেশ করো।” (সুরা ফাজর, আয়াত: ২৭-৩০)
📌 প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণের উপায়
ইসলাম নফস নিয়ন্ত্রণে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছে। যেমন:
✅ নিজের ইচ্ছার পরিবর্তে আল্লাহর ইচ্ছাকে প্রাধান্য দেওয়া
✅ আত্মসমালোচনার মাধ্যমে নিজেকে সংশোধন করা
✅ হারাম কাজ থেকে বিরত থাকা
✅ আল্লাহর ভয় অন্তরে ধারণ করা
✅ একদিন জবাবদিহি করতে হবে—এই চেতনায় জীবন গঠন করা
একজন মুসলমানের উচিত নিজ প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে আল্লাহর পথে চলা। কারণ, নফসকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারা মানেই আত্মার বিজয়, যা একমাত্র জান্নাতের পথে পরিচালিত করে।