ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় আরও দুই গণমাধ্যমকর্মী নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে আল জাজিরার একজন সাংবাদিকও রয়েছেন।
উত্তর গাজায় মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় নিহত আল জাজিরার সাংবাদিকের নাম হোসাম শাবাত। মৃত্যুর আগে তিনি বিশ্ববাসীর উদ্দেশে এক আবেগঘন বার্তা দিয়ে গেছেন, যা তার সহকর্মীদের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
বার্তায় তিনি বলেন, “আল্লাহর কসম, আমি একজন সাংবাদিক হিসেবে আমার দায়িত্ব পালন করেছি। সত্য প্রকাশের জন্য সব ঝুঁকি নিয়েছি, এবং ১৮ মাসের ক্লান্তির পর আমি এখন চিরনিদ্রায় বিশ্রাম নিচ্ছি। আমি সবকিছু করেছি ফিলিস্তিনের স্বার্থে। এই ভূমি আমাদের, এবং একে রক্ষা করতে ও সেবা করতে জীবন উৎসর্গ করাকে আমি সম্মান হিসেবে দেখি।”
তিনি বিশ্ববাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, গাজা নিয়ে কথা বলা বন্ধ করো না। বিশ্বকে চোখ ফিরিয়ে নিতে দিও না। লড়াই চালিয়ে যাও, আমাদের গল্প বলে যাও— যতক্ষণ না ফিলিস্তিন স্বাধীন হয়।”
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বেইত লাহিয়ার পূর্ব অংশে শাবাতের গাড়িতে ইসরায়েলি বাহিনী হামলা চালায়, যাতে তিনি নিহত হন। তিনি আল জাজিরার আরবি ভাষার চ্যানেল ‘আল জাজিরা মুবাশ্বের’-এ কাজ করতেন।
মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহ থেকে আল জাজিরার তারেক আবু আযম জানান, ২৩ বছর বয়সী শাবাত এর আগেও একবার ইসরায়েলি হামলায় আহত হয়েছিলেন, কিন্তু এরপরও গাজার সংবাদ প্রচার চালিয়ে গেছেন।
শাবাতের লেখা পোস্টে আরও উল্লেখ ছিল, “যদি আপনি এটি পড়ে থাকেন, তাহলে ধরে নেবেন আমি নিহত হয়েছি— সম্ভবত ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছি।”
তিনি আরও লেখেন, “আমি প্রতিটি মুহূর্ত আমার জনগণের জন্য উৎসর্গ করেছি। আমি উত্তর গাজার ভয়াবহতা নথিভুক্ত করেছি, তারা যে সত্যকে কবর দিতে চেয়েছিল, তা বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলাম।”
তিনি জানান, “আমি ফুটপাতে, স্কুলে, তাঁবুতে— যেখানেই পেরেছি ঘুমিয়েছি। প্রতিটি দিন ছিল বেঁচে থাকার লড়াই। আমি মাসের পর মাস ক্ষুধা সহ্য করেছি, তবুও আমার দেশের জনগণের পক্ষ ত্যাগ করিনি।”
এদিকে, সোমবার (২৪ মার্চ) দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় প্যালেস্টাইন টুডের সাংবাদিক মোহাম্মদ মনসুরও নিহত হয়েছেন।
আবু আযম জানান, “মনসুরকে তার বাড়িতে স্ত্রী ও ছেলের সঙ্গে হত্যা করা হয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনী কোনো ধরনের পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই হামলা চালিয়েছে।”
গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস (জিএমও) জানিয়েছে, এই দুই সাংবাদিক নিহত হওয়ার মধ্য দিয়ে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত সাংবাদিকের সংখ্যা ২০৮ জনে পৌঁছেছে।
জিএমও এক বিবৃতিতে বলেছে, “ফিলিস্তিনি সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর হত্যাকাণ্ড এবং দমননীতি আমরা তীব্রভাবে নিন্দা জানাই।”
সাংবাদিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা অ্যাডভোকেসি গ্রুপগুলোকে গাজায় ফিলিস্তিনি সাংবাদিক এবং মিডিয়াকর্মীদের বিরুদ্ধে এই “পদ্ধতিগত হত্যার” নিন্দা জানানোর আহ্বান জানানো হয়েছে।
অনলাইন ডেস্ক