গ্রিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মুটে বি. এগেদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের আসন্ন সফরকে “খুবই আক্রমণাত্মক” বলে উল্লেখ করেছেন। এই সফরে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের স্ত্রী উষা ভ্যান্সও থাকছেন, যিনি দেশটির দ্বিতীয় নারী হিসেবে পরিচিত। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গ্রিনল্যান্ড দখলের ইচ্ছার পর এটি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে নতুন সংকট সৃষ্টি করেছে।
হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, উষা ভ্যান্স এই সপ্তাহে গ্রিনল্যান্ড সফর করবেন, যেখানে তিনি দ্বীপের ঐতিহ্যবাহী কুকুরের স্লেজ দৌড় (ন্যাশনাল ডগস্লেড রেস) দেখবেন এবং “গ্রিনল্যান্ডের সংস্কৃতি ও ঐক্য উদযাপন করবেন।” জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজও এই সফরে যাচ্ছেন বলে সূত্র জানিয়েছে।
রবিবার গ্রিনল্যান্ডের সংবাদপত্র Sermitsiaq-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী এগেদে বলেছেন, “গ্রিনল্যান্ডে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার আসার মানে কী? এ সফরের একমাত্র উদ্দেশ্য আমাদের ওপর শক্তি প্রদর্শন করা।”
তিনি আরও বলেন, “ওয়াল্টজের উপস্থিতি ট্রাম্পের গ্রিনল্যান্ড দখলের ধারণাকে আরও উসকে দেবে এবং আমাদের ওপর মার্কিন চাপ বৃদ্ধি পাবে।”
ট্রাম্পের গ্রিনল্যান্ড দখলের পরিকল্পনা
ট্রাম্পের গ্রিনল্যান্ড দখলের ইচ্ছার কারণে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দ্বীপটি নতুন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। কারণ, এটি দুষ্প্রাপ্য খনিজ সম্পদের বিশাল ভাণ্ডার, যা হাই-টেক শিল্পের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর্কটিকে প্রভাব বিস্তারের জন্য যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও রাশিয়া প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে, যার মধ্যে গ্রিনল্যান্ড অন্যতম কৌশলগত স্থান।
এ মাসের শুরুতে কংগ্রেসে দেওয়া এক ভাষণে ট্রাম্প বলেন, “আমি মনে করি, আমরা যেভাবেই হোক এটি পেয়ে যাব।”
প্রধানমন্ত্রী এগেদে বলেন, “গ্রিনল্যান্ডের জনগণ কূটনৈতিক উপায়ে বিষয়টি মোকাবিলা করতে চাইলেও, ট্রাম্প ও তার প্রশাসনের সামনে আমাদের কথা কোনো মূল্যই রাখে না।”
রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় মার্কিন সফর
গ্রিনল্যান্ডে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত পার্লামেন্ট নির্বাচনে এগেদের বামপন্থী দল ইনুইত আতাকাতিগিত পরাজিত হয়েছে, তবে নতুন সরকার গঠনের আগ পর্যন্ত তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকবেন। নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া দলের নেতা জেন্স-ফ্রেডেরিক নিলসেন বলেন, মার্কিন প্রতিনিধি দলের সফরের সময় নির্বাচন-পরবর্তী আলোচনার কারণে এটি “অশোভন” সিদ্ধান্ত।
নিলসেন বলেন, “আমরা এখনো আলোচনার মধ্যে আছি, আর ঠিক এই মুহূর্তে মার্কিন প্রতিনিধিরা গ্রিনল্যান্ডে এসে উপস্থিত হচ্ছেন। এটি গ্রিনল্যান্ডের জনগণের প্রতি অসম্মান।”
ডেনমার্কের প্রতিক্রিয়া
ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডরিকসেন বলেছেন, “মার্কিন প্রতিনিধি দলের সফরকে আমরা গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছি।” তিনি আরও বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তবে তা অবশ্যই সার্বভৌমত্বের নীতির ওপর ভিত্তি করে হতে হবে।”
যদিও গ্রিনল্যান্ডের নেতারা মার্কিন দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে খনিজ উত্তোলন, পর্যটন উন্নয়ন ও কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করতে আগ্রহী।
সম্প্রতি এক জরিপে দেখা গেছে, ৮৫% গ্রিনল্যান্ডবাসী যুক্তরাষ্ট্রের অংশ হতে চান না। প্রায় অর্ধেক জনগণ মনে করেন, ট্রাম্পের আগ্রহ তাদের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি।
এদিকে, ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র জানুয়ারিতে গ্রিনল্যান্ড সফর করেন এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেন, “গ্রিনল্যান্ড একটি অবিশ্বাস্য স্থান, এবং এটি যদি আমাদের অংশ হয়, তবে এখানকার জনগণ ব্যাপকভাবে উপকৃত হবে। আমরা এটিকে রক্ষা করব এবং আরও সমৃদ্ধ করব। ‘মেইক গ্রিনল্যান্ড গ্রেট অ্যাগেইন!’”