Sunday, April 27, 2025

টিউলিপের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ: পাল্টাপাল্টি চিঠিতে দুদক ও আইনজীবীদের

ব্রিটেনের সাবেক মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিক তার আইনজীবীদের মাধ্যমে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এ একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। এতে তিনি তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত দুর্নীতির অভিযোগগুলোকে ‘মিথ্যা ও হয়রানিমূলক’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি দাবি করেন, তদন্তকারীদের পক্ষ থেকে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি, অথচ গণমাধ্যমে এসব অভিযোগ তুলে ধরা হয়েছে।

বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তাকে ‘লক্ষ্যবস্তু বানানোর’ অভিযোগ তুলেছেন টিউলিপ সিদ্দিক। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিনি তার বিরুদ্ধে প্রচারিত অভিযোগগুলোকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে দাবি করেছেন।

দুদক জানিয়েছে, টিউলিপ সিদ্দিক আওয়ামী লীগের দুর্নীতি থেকে লাভবান হয়েছেন। তাদের পাল্টা চিঠিতে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার শাসনামল সম্পর্কে তার (টিউলিপ) অজ্ঞতার দাবি বিশ্বাসযোগ্য নয়।

দুদকের দুর্নীতির অভিযোগ আসার পর উত্তর লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড হাইগেইট আসনের এই এমপি দাবি করেন, তিনি কোনো অনিয়ম করেননি এবং স্বচ্ছতা বজায় রেখে কাজ করেছেন। তবে তিনি সরকারের কর্মকাণ্ডে ‘বিতর্কের’ কারণ হতে চাননি বলে পদত্যাগ করেছেন।

তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে এক চিঠিতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার জানান, টিউলিপের জন্য ফিরে আসার ‘দরজা খোলা থাকছে’। প্রধানমন্ত্রীর নৈতিকতা বিষয়ক উপদেষ্টা স্যার লরি ম্যাগনাস জানান, তিনি টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে ‘অন্যায় কিছুর প্রমাণ’ পাননি। তবে তিনি বলেন, টিউলিপ সিদ্দিক তার খালার সরকারের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে ‘সম্ভাব্য দুর্নামের ঝুঁকি সম্পর্কে অতটা সতর্ক ছিলেন না’।

শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে ৩.৯ বিলিয়ন পাউন্ড আত্মসাতের অভিযোগ তদন্ত করছে দুদক। বিরোধী রাজনীতিবিদ ববি হাজ্জাজের করা অভিযোগে বলা হয়েছে, টিউলিপ সিদ্দিক ১০ বিলিয়ন পাউন্ডের রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের মধ্যস্থতায় ভূমিকা রেখেছিলেন। যদিও টিউলিপের আইনজীবী স্টিফেনসন হারউড দাবি করেছেন, তিনি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চুক্তিতে কোনোভাবেই জড়িত ছিলেন না।

২০১৩ সালে ক্রেমলিনে একটি চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে টিউলিপ সিদ্দিকের উপস্থিতির একটি ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। তবে টিউলিপ দাবি করেন, কোনো আর্থিক অনিয়ম সম্পর্কে তার জানা নেই এবং রাষ্ট্রীয় সফরে পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতি অস্বাভাবিক কিছু নয়।

দুদক আরও অভিযোগ করেছে, ২০০৪ সালে লন্ডনের কিংস ক্রস এলাকায় উপহার হিসেবে পাওয়া সাত লাখ পাউন্ডের ফ্ল্যাটটি ‘কোনো না কোনোভাবে আত্মসাতের ফল’। টিউলিপ সিদ্দিকের আইনজীবীরা এই দাবিকে ‘অযৌক্তিক ও অসত্য’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তারা জানান, এই ফ্ল্যাটটি তাকে দিয়েছিলেন আব্দুল মোতালিফ নামে এক ব্যক্তি, যাকে তারা ‘খুব ঘনিষ্ঠ পারিবারিক বন্ধু’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

স্যার লরি ম্যাগনাস বলেন, “দীর্ঘ সময় ধরে, কিংস ক্রসের ফ্ল্যাটের মালিকানার উৎস সম্পর্কে টিউলিপ জানতেন না, যদিও তিনি একটি ভূমি হস্তান্তর ফর্মে স্বাক্ষর করেছিলেন।”

দুদকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন যুক্তরাজ্যের সাময়িকী দ্য টাইমসকে বলেন, টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে উত্থাপিত সমস্ত অভিযোগ যুক্তরাজ্যের আদালতসহ যেকোনো আদালতেই প্রমাণ করা যাবে। টিউলিপের আইনজীবীরা ২৫ মার্চ ২০২৫-এর মধ্যে সমস্ত প্রশ্ন উত্থাপনের জন্য দুদককে অনুরোধ করেছেন, অন্যথায় তারা এটি ‘অবৈধ’ হিসেবে বিবেচনা করবেন।

অনলাইন ডেস্ক

আরো পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত

এই বিভাগের আরো খবর