তুরস্কের কুর্দি বিদ্রোহী গোষ্ঠী কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি (পিকেকে) দেশটির সরকারের সঙ্গে চলমান ৪০ বছরের সংঘাতের অবসান ঘটানোর জন্য যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছে। শনিবার (১ মার্চ) এক বিবৃতিতে তারা জানায়, ভবিষ্যতে কোনো সশস্ত্র কার্যক্রম পরিচালনা করবে না, যদি না তাদের বিরুদ্ধে কোনো হামলা হয়।
এই ঘোষণা তুরস্কের রাজনৈতিক ও সামরিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। পিকেকের এই সিদ্ধান্ত এসেছে তাদের শীর্ষ নেতা আবদুল্লাহ ওজালানের আহ্বানে।
২৭ ফেব্রুয়ারি, ডিইএম পার্টির প্রতিনিধিরা কারাগারে থাকা ওজালানের সঙ্গে দেখা করেন। সেখানে তিনি পিকেকে নেতাদের অস্ত্র সমর্পণ এবং বিদ্রোহী দলটির বিলুপ্তির আহ্বান জানান। তিনি মনে করেন, কুর্দি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং গণতান্ত্রিক সমাজ গঠনের জন্য শান্তি প্রতিষ্ঠা জরুরি।
এই ঘোষণা এমন এক সময়ে এলো, যখন তুরস্কের রাজনীতিতে সংকট চলছে। প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ হারাতে পারেন। সংবিধান অনুযায়ী, তিনি আরেকবার নির্বাচন করতে পারবেন না। তবে ডিইএম পার্টির সমর্থন পেলে রাজনৈতিকভাবে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকতে পারেন।
ডিইএম পার্টি দীর্ঘদিন ধরে কুর্দি জনগণের মানবাধিকার এবং আবদুল্লাহ ওজালানের মুক্তির দাবি জানিয়ে আসছে। তাদের মতে, কুর্দি জনগণের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
১৯৭৮ সালে আবদুল্লাহ ওজালান পিকেকে প্রতিষ্ঠা করেন। শুরুতে তাদের লক্ষ্য ছিল তুরস্কের কুর্দি জনগণের জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। ১৯৮৪ সালে তারা সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করে। তবে তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন পিকেকেকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করে।
ওজালান ১৯৭৯ সালে তুরস্ক থেকে পালিয়ে সিরিয়ায় আশ্রয় নেন। পরে ১৯৯৯ সালে কেনিয়া থেকে তাকে আটক করে তুরস্কে ফিরিয়ে এনে কারাবন্দি করা হয়।
পিকেকে জানিয়েছে, তারা শান্তি প্রতিষ্ঠার নতুন পথ অনুসরণ করবে এবং নতুন কোনো সশস্ত্র আন্দোলনে যুক্ত হবে না, যদি না তাদের ওপর আগ্রাসন চালানো হয়।
বিশ্লেষকদের মতে, এই যুদ্ধবিরতির ফলে তুরস্কের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বৃদ্ধির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তবে সরকার যদি এই প্রচেষ্টায় আন্তরিক হয় এবং কুর্দি জনগণের অধিকারের বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়, তাহলে দীর্ঘদিনের সংঘাতের অবসান ঘটতে পারে।
অনলাইন ডেস্ক







