উম্মুল মু’মিনিন হজরত আয়েশা রা. বলেছেন, একদিন গভীর রাত্রে রসুলুল্লাহ সা. নামাজ পড়ছিলেন। নামাজ পড়ার সময় তিনি দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে দীর্ঘ সেজদা করেন। এভাবে দীর্ঘ সেজদা করতে দেখে, হজরত আয়েশা রা. এর ধারণা হয়, রসুলাল্লাহ সা. হয়তো নামাজ পড়তে গিয়ে ইন্তেকাল করেছেন।
হজরত আয়েশা রা. তখন তার সন্দেহ দূর করার জন্যে রসুলুল্লাহ সা. বৃদ্ধাঙ্গুলিটি ধরে নাড়া দেন। তাতে রসুলাল্লাহ সা. আঙুল নাড়িয়ে সাড়া দেন। এরপর রসুলাল্লাহ সা. সেজদা থেকে উঠে নামাজ শেষ করে হজরত আয়েশা রা. কে বললেন, হে আয়েশা! তোমার কি ধারণা, আল্লাহর রসুল তোমার হক নষ্ট করবেন? হজরত আয়েশা রা. তখন উত্তরে বলেন, না, ইয়া রসুলুল্লাহ।
নবীজি তখন আয়েশাকে রা.-কে জিজ্ঞেস করেন, তুমি কি জানো, আজকের রাতটি কী রাত? আয়েশা তখন নবীজিকে বলেন, আল্লাহ ও তার রসুলই আমার অপেক্ষা ভালো জানবেন আজকের রাতটির তাৎপর্য কী?
তখন রসুলাল্লাহ সা. বললেন, আজকের রাতটি হলো অর্ধ শাবানের রাত। মহান আল্লাহ তাআলা অর্ধ শাবানের রাতে তার বান্দার সব প্রার্থনা মনোযোগ সহকারে শোনেন। যারা ক্ষমাপ্রার্থী তাদের পাপ ক্ষমা করে দেন। আর যারা অনুগ্রহপ্রার্থী তাদের অনুগ্রহ করেন, তাদের বরকত প্রদান করেন। আর যারা বিদ্বেষ পোষণকারী, তাদের ক্ষমা না করে তাদের নিজের অবস্থাতেই ছেড়ে দেন। (শুআবুল ঈমান, বাইহাকী ৩/৩৮২-৩৮৬)
ফজিলতের কারণে মুসলিম বিশ্বে রাতটি বিশেষভাবে উপযাপন করা হয়। অনেকেই মসজিদে গিয়ে ইবাদত করেন, তিলাওয়াত করেন। তবে এই রাতের ইবাদত নিয়ে কিছু ভুল প্রচলন রয়েছে। তাই শবে বরাতের করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়গুলো তুলে ধরা হলো—
শবে বরাতের করণীয়
১. ইশা ও ফজরের নামাজ জামাতে আদায় করা: অনেকেই নফল ইবাদতে মগ্ন থাকেন, ফলে ফরজ ইবাদত কাজা হয়ে যায়। অথচ ইশা ও ফজরের নামাজ জামাতে আদায় করলে তিনি পুরো রাত নফল ইবাদত করার সওয়াব পান।
২. নফল নামাজ পড়া: রাসূল সা. নিজেও এই রাতে নফল নামাজ পড়েছেন। তাই আমরাও নফল নামাজের মাধ্যমে রাতটি কাটাতে পারি।
৩. তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা: ইবাদতে অভ্যস্ত ব্যক্তি ছাড়া অন্যদের জন্য তাহাজ্জুদ পড়া কিছুটা কষ্টকর। তবে এই রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা উচিত।
৪. আল্লাহর কাছে দোয়া করা: আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করলে তা কবুলের সম্ভবনা রয়েছে। নিজের ও অন্যের জন্য দোয়া করা উচিত।
৫. তওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা করা: এই রাতে তওবা করে গুনাহ থেকে মুক্তি চাওয়া উচিত। তওবার নামাজ পড়া বা সরাসরি দোয়ার মাধ্যমে তওবা করা যেতে পারে।
৬.কোরআন তিলাওয়াত করা: কোরআন তিলাওয়াত মানুষকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে। এই ফজিলতপূর্ণ রাতে কোরআন তিলাওয়াত করা উত্তম।
শবে বরাতে বর্জনীয়
১. বিদআত ও কুসংস্কার থেকে বিরত থাকা: হাদিসে বর্ণিত নেই এমন কোনো কাজ করা যাবে না।
২. আতশবাজি ও পটকা ফোটানো নিষিদ্ধ: শবে বরাত ইবাদতের রাত, আনন্দ-উৎসবের রাত নয়।
৩. বিশেষ খাবার প্রস্তুতির বাধ্যবাধকতা নেই: কেউ চাইলে ভালো খাবারের ব্যবস্থা করতে পারে, তবে তা জরুরি মনে করা যাবে না।
৪. হালুয়া-রুটির অতিরিক্ত আয়োজন পরিহার করা: ইবাদত বাদ দিয়ে খাবার প্রস্তুতি করা অনুচিত।
৫. অপচয় ও আলোকসজ্জা থেকে বিরত থাকা: আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা অপচয় কোরো না, নিশ্চয়ই অপচয়কারী শয়তানের ভাই।’ (সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত : ২৭)
৬. নফল ইবাদতে ব্যস্ত হয়ে ফরজ ইবাদত কাজা না করা: পুরো রাত ইবাদতে কাটিয়ে ফজরের নামাজ কাজা করা যাবে না।
শবে বরাতের ফজিলত ও করণীয়-বর্জনীয় সম্পর্কে জানা থাকলে আমরা এই পবিত্র রাতটি যথাযথভাবে পালন করতে পারবো ইনশাআল্লাহ।
ধর্ম ডেস্ক/আর কে-০২