Wednesday, March 26, 2025

যে আয়াত পড়লে শয়তান তার কাছেও আসে না

হজরত নোমান ইবনে বশীর (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আসমান ও জমিন সৃষ্টির দুই হাজার বছর পূর্বে আল্লাহ তায়ালা একটি কিতাব লেখেছেন। সেই কিতাব থেকে দুটি আয়াত নাজিল করেছেন যার দ্বারা আল্লাহ তায়ালা সূরা বাকারাহ শেষ করেছেন। এই আয়াত দুটি একাধারে তিন রাত যে ঘরে পড়া হয়, শয়তান তার কাছেও আসে না। (তিরমিজি)

আরেক হাদিসে হজরত আবু মাসউদ আনসারী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন—

“যে ব্যক্তি কোনো রাতে সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পড়ে নিবে, এই দুই আয়াত তার জন্য যথেষ্ট হবে।” (তিরমিজি)

দুই আয়াতের “যথেষ্ট” হওয়ার দুই অর্থ রয়েছে—
১. পাঠকারী সেই রাতে সব ধরনের বিপদ থেকে নিরাপদ থাকবে।
2. এই দুই আয়াত তাহাজ্জুদের স্থলে গৃহীত হবে। (ইমাম নববি)

আরেক হাদিসে হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, একবার জিবরাইল (আ.) নবী করীম (সা.)-এর কাছে বসে ছিলেন, তখন আসমান থেকে কড়কড় শব্দ শোনা গেল। তিনি বললেন, “আজকের পূর্বে আসমানের এমন একটি দরজা কখনো খোলা হয়নি। এই দরজা দিয়ে এমন এক ফিরিশতা অবতরণ করেছেন, যিনি আজকের পূর্বে কখনো জমিনে আসেননি।”

সেই ফিরিশতা নবীজীকে সালাম করে বললেন, “সুসংবাদ হোক, আপনাকে দুটি নূর দেওয়া হয়েছে, যা আপনার পূর্বে কোনো নবীকে দেওয়া হয়নি। একটি সূরা ফাতিহা, দ্বিতীয়টি সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত। আপনি সেখান থেকে যেকোনো বাক্য পড়লে তা আপনাকে দেওয়া হবে।” (মুসলিম)

সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত:

আরবি:

اٰمَنَ الرَّسُوۡلُ بِمَاۤ اُنۡزِلَ اِلَیۡهِ مِنۡ رَّبِّهٖ وَ الۡمُؤۡمِنُوۡنَ ؕ کُلٌّ اٰمَنَ بِاللّٰهِ وَ مَلٰٓئِکَتِهٖ وَ کُتُبِهٖ وَ رُسُلِهٖ ۟ لَا نُفَرِّقُ بَیۡنَ اَحَدٍ مِّنۡ رُّسُلِهٖ ۟ وَ قَالُوۡا سَمِعۡنَا وَ اَطَعۡنَا ٭۫ غُفۡرَانَکَ رَبَّنَا وَ اِلَیۡکَ الۡمَصِیۡرُ

لَا یُکَلِّفُ اللّٰهُ نَفۡسًا اِلَّا وُسۡعَهَا ؕ لَهَا مَا کَسَبَتۡ وَ عَلَیۡهَا مَا اکۡتَسَبَتۡ ؕ رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذۡنَاۤ اِنۡ نَّسِیۡنَاۤ اَوۡ اَخۡطَاۡنَا ۚ رَبَّنَا وَ لَا تَحۡمِلۡ عَلَیۡنَاۤ اِصۡرًا کَمَا حَمَلۡتَهٗ عَلَی الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِنَا ۚ رَبَّنَا وَ لَا تُحَمِّلۡنَا مَا لَا طَاقَۃَ لَنَا بِهٖ ۚ وَ اعۡفُ عَنَّا ٝ وَ اغۡفِرۡ لَنَا ٝ وَ ارۡحَمۡنَا ٝ اَنۡتَ مَوۡلٰىنَا فَانۡصُرۡنَا عَلَی الۡقَوۡمِ الۡکٰفِرِیۡنَ

উচ্চারণ:

(১) আ-মানার রাছূলু বিমা-উনঝিলা ইলাইহি মির রাব্বিহী ওয়াল মু’মিনূনা কুল্লুন আ-মানা বিল্লাহি ওয়া মালাইকাতিহী ওয়া কুতুবিহী ওয়া রুছুলিহী লা-নুফাররিকু বাইনা আহাদিম মির রুছুলিহী ওয়া কা-লূ ছামি‘না ওয়াআতা‘না গুফরা-নাকা রাব্বানা-ওয়া ইলাইকাল মাসীর।

(২) লা-ইউকালিলফুল্লা-হু নাফছান ইল্লা-উছ‘আহা-লাহা-মা কাছাবাত ওয়া ‘আলাইহা-মাকতাছাবাত রাব্বানা-লা-তুআ-খিযনা ইন নাছীনা-আও আখতা’না-রাব্বানা ওয়ালা-তাহমিল ‘আলাইনা-ইসরান কামা-হামালতাহূ আলাল্লাযীনা মিন কাবলিনা-রাব্বানা-ওয়ালা তুহাম্মিলনা-মা-লা-তা-কাতা লানা-বিহী ওয়া‘ফু‘আন্না-ওয়াগফিরলানা-ওয়ারহামনা-আনতা মাওলা-না-ফানসুরনা-‘আলাল কাওমিল কা-ফিরীন।

অর্থ:

(১) রাসূল বিশ্বাস রাখেন সেই সমস্ত বিষয়ের প্রতি, যা তাঁর পালনকর্তার পক্ষ থেকে তাঁর কাছে অবতীর্ণ হয়েছে, এবং মুসলমানরাও সবাই বিশ্বাস রাখে আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি, তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি এবং তাঁর রাসূলগণের প্রতি। তারা বলে, “আমরা তাঁর রাসূলদের মধ্যে কোনো তারতম্য করি না। আমরা শুনেছি এবং কবুল করেছি। হে আমাদের পালনকর্তা, আমরা তোমার ক্ষমা প্রার্থনা করছি। তোমারই দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে।”

(২) আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোনো কাজের ভার দেন না। প্রত্যেকের জন্য রয়েছে যা সে উপার্জন করেছে এবং তার ওপর বর্তাবে যা সে করেছে। হে আমাদের পালনকর্তা, যদি আমরা ভুলে যাই বা ভুল করি, তবে আমাদেরকে অপরাধী করো না। হে আমাদের প্রভু! আমাদের ওপর এমন বোঝা দিও না, যেমন আমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর দিয়েছ। হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের এমন কোনো দায়িত্ব দিও না, যা বহনের শক্তি আমাদের নেই। আমাদের পাপ মোচন করো, আমাদের ক্ষমা করো, এবং আমাদের প্রতি দয়া করো। তুমি আমাদের অভিভাবক। অতএব, কাফের সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদের সাহায্য করো। (সূরা বাকারা, আয়াত: ২৮৫-২৮৬)

উপসংহার:
এই আয়াত দুটি মহান ফজিলত ও বরকতের অধিকারী। রাতে এই আয়াত পাঠ করলে সব ধরনের বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায় এবং এটি তাহাজ্জুদের বিকল্প হিসেবেও গৃহীত হয়। আল্লাহ আমাদের সকলকে এই আয়াত দুটি নিয়মিত পড়ার তাওফিক দান করুন, আমিন।

ধর্ম ডেস্ক/আর কে-০১

আরো পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত

এই বিভাগের আরো খবর