Wednesday, March 26, 2025

হজরত ওয়াহশী ইবনে হারব রা. ইসলামের ইতিহাসের বেদনাদায়ক চরিত্র

হজরত ওয়াহশী ইবনে হারব রা. ইসলামের ইতিহাসের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু বেদনাদায়ক চরিত্র। তাঁর জীবন ছিল একটি অদ্ভুত মিশ্রণ—অন্ধকার এবং আলোর, অপরাধ এবং তওবা, ভুল এবং সঠিক পথের সন্ধান। ইসলাম গ্রহণের আগে, তিনি ছিলেন একজন মুশরিকের কৃতদাস এবং দাস জীবন থেকে মুক্তির জন্য তিনি ইসলামিক ইতিহাসের এক বিখ্যাত সাহাবি, হজরত হামজা রা.-কে হত্যা করেছিলেন। কিন্তু পরে আল্লাহ তায়ালা তাঁর অন্তরে হেদায়েতের নূর ঢেলে দেন এবং তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন, যদিও এই তওবা ও ইসলাম গ্রহণের পরও তিনি জীবনের দীর্ঘকাল ধরে চাচার হত্যাকারী হিসেবে রাসূল সা.-এর কাছে নিষেধাজ্ঞার শিকার ছিলেন।

হজরত ওয়াহশী রা. ছিলেন মূলত হাবশার কৃষ্ণাঙ্গ এক দাস, যিনি মক্কার বিখ্যাত নেতা জুবায়র ইবন মুতইমের অধীনে কর্মরত ছিলেন। হজরত হামজা রা. এর হাতে নিহত হওয়া তুআয়মা ইবন আদী রা.-এর প্রতিশোধ নিতে তিনি বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। সেখানেই ওয়াহশী রা. নির্মমভাবে হামজা রা.-কে হত্যা করেন। এর ফলে জুবায়র ইবন মুতইম তাঁকে মুক্তি দেন।

মক্কার পরবর্তী সময়ে, ওয়াহশী রা. ইসলাম গ্রহণ করতে মদীনা যান। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে দেখে বলেন, “ওয়াহশী! তুমি আমার চোখের সামনে আসবে না।” তাঁর এই নিষেধাজ্ঞা শোনা ছিল ওয়াহশী রা. এর জন্য এক বিরাট যাতনা, যা তিনি সারা জীবন অনুভব করেন।

ইসলাম গ্রহণের পরও ওয়াহশী রা. যুদ্ধের ময়দানে সাহসিকতা দেখিয়েছেন। তিনি ইয়ামামার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন, যেখানে তিনি মিথ্যা নবী মুসায়লিমাতুল কাজ্জাবকে হত্যা করেন। মুসায়লিমার বাহিনীর বিরুদ্ধে তার এই বিজয় ছিল ইসলামের এক মহান কৃতিত্ব, যা তিনি তাঁর জীবনের একটি গৌরবময় মুহূর্ত হিসেবে স্মরণ করতেন।

হজরত ওয়াহশী রা. পরবর্তীতে শামে চলে যান এবং সেখানেই জীবনের শেষ সময় কাটান। তিনি মৃত্যুর আগে বলতেন, “যখন আমি অমুসলিম ছিলাম, তখন আমি সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিকে হত্যা করেছিলাম। ইসলাম গ্রহণের পর, আমি সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তিকে হত্যা করেছি।”

হজরত ওয়াহশী রা. এর জীবন ছিল একটি অসাধারণ, তবে বেদনাদায়ক অধ্যায়। তাঁর তওবা এবং যুদ্ধের সংগ্রাম আমাদের শেখায় যে, মানুষ কখনওও পুরোপুরি হারিয়ে যায় না, বরং তওবা এবং সৎ পথে ফিরে আসা সম্ভব।

ধর্ম ডেস্ক/আর কে-০২

আরো পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত

এই বিভাগের আরো খবর