মহাগ্রন্থ আল কোরআন সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত গ্রন্থ। এটি মানবজাতির জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছে। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই কোরআনের মাধ্যমে পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠ মানুষ তৈরি করেছেন। পবিত্র কোরআনকে ধারণ করা ছাড়া প্রকৃত হেদায়াত লাভ সম্ভব নয়। আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা তাঁর অপার করুণায় আমাদেরকে এই মহাগ্রন্থ দান করেছেন। তবে দুঃখের বিষয়, অনেক মানুষ কোরআনের শিক্ষা থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছে। প্রকৃত মুমিন কখনো এই ভুল পথ গ্রহণ করতে পারে না। তারা সর্বদা কোরআনের নির্দেশনা অনুসরণ করে এবং আল্লাহর পবিত্র কালামের হেফাজত করে।
কোরআন তেলাওয়াত শুদ্ধ ও সহীহভাবে করতে হলে একজন দক্ষ শিক্ষকের কাছে কোরআন শিক্ষা নিতে হবে। শিক্ষকের কোরআন শিক্ষার বিষয়ে প্রশিক্ষণ থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা জ্ঞানীদের জিজ্ঞাসা করো, যদি তোমরা না জেনে থাকো।’ (সুরা নাহল: ৪৩)। শুদ্ধভাবে কোরআন শিক্ষার জন্য নিয়মিত সময় দেওয়া প্রয়োজন। যদিও সময় কম হয়, তবু প্রতিদিনের চর্চা শিক্ষাকে সহজতর করে এবং তা দীর্ঘস্থায়ী হয়। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘কোরআন নিয়মিত তেলাওয়াত করো। তা অন্তর থেকে বাঁধন ছাড়া উটের মতো দ্রুতগতিতে চলে যায়।’ (বুখারি: ৫০৩১-৫০৩৩; মুসলিম: ৭৯০)
আলেমদের মতে, যারা হাফেজ নন তাদের প্রতিদিন এক পারা কোরআন তেলাওয়াত করা উচিত, যাতে এক মাসে একবার কোরআন খতম হয়। হাফেজদের জন্য প্রতিদিন তিন পারা তেলাওয়াত করা উত্তম। এ অভ্যাস কোরআনের প্রতি ভালোবাসা বৃদ্ধি করে এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে সহায়ক হয়।
কোরআনের সঠিক উচ্চারণ এবং সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য যোগ্য শিক্ষকের কাছে মশক করা উচিত। মশক বলতে বোঝায়, শিক্ষক প্রথমে পাঠ করবেন এবং ছাত্র সেইভাবে অনুশীলন করবে। বর্তমানে অনলাইনের মাধ্যমেও মশক করা সম্ভব, যা অনেকের জন্য সহজলভ্য।
প্রত্যেক মুসলিমের দায়িত্ব হলো তার পরিবার ও সন্তানদের কোরআন শিক্ষা দেওয়া। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘হে ঈমানদাররা! তোমরা তোমাদের নিজেদের এবং পরিবারকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করো।’ (সুরা তাহরিম: ৬)। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, ‘নিজে কোরআন শিক্ষা করা এবং সন্তানদের তা শেখানো প্রত্যেক মুসলিমের অবশ্য পালনীয় কর্তব্য। এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হবে এবং এর প্রতিদান দেওয়া হবে।’ (ইবন বাত্তাল: ৪৬)
ফজিলতপূর্ণ সূরাগুলো বেশি বেশি তিলাওয়াত করা উচিত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘কুল হুআল্লাহু আহাদ’ (সুরা ইখলাস) কোরআনের তিন ভাগের এক ভাগের সমান। (বুখারি: ৫০১৫)। এ সূরাগুলো পড়লে কেবল সওয়াবই পাওয়া যায় না, বরং তা অন্তরে কোরআনের প্রতি ভালোবাসা জাগ্রত করে।
হাদিসে এসেছে, ‘কোরআন এমন এক সুপারিশকারী, যার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে। যে ব্যক্তি কোরআনকে পথপ্রদর্শক বানাবে, কোরআন তাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে। আর যে কোরআনকে অবহেলা করবে, কোরআন তাকে জাহান্নামে পাঠাবে।’ (ইবনে হিব্বান: ১২৪)
পবিত্র কোরআন আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সঠিক দিকনির্দেশনা প্রদান করে। এটি শুধু ধর্মীয় গ্রন্থ নয়, বরং এটি মানবজাতির জন্য আলোর দিশা। তাই আমাদের উচিত নিয়মিত কোরআন তেলাওয়াত করা, তা শিখা এবং এর বিধান অনুসারে জীবন পরিচালিত করা। আল্লাহ আমাদেরকে কোরআনের আলোয় আলোকিত হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
ধর্ম ডেস্ক/আর কে-০১