ধর্ম বিষয়ক ডেস্ক: ইসলামি জীবনব্যবস্থায় দোয়া ও ইবাদত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে কোনো দোয়া কবুল হওয়ার আগে নবী করিম (সা.)-এর ওপর দরুদ পাঠ করা অত্যাবশ্যক। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, দোয়ার আগে ও পরে নবী করিম (সা.)-এর ওপর দরুদ পাঠ ছাড়া কোনো দোয়া আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না।
এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার ওপর মাত্র একবার দরুদ পাঠ করে, আল্লাহ তার ওপর ১০ বার রহমত নাজিল করেন, ১০টি গুনাহ মাফ করেন, তার আমলনামায় ১০টি সওয়াব লিপিবদ্ধ করেন এবং তার মর্যাদা ১০ গুণ বৃদ্ধি করেন।’ (নাসায়ি)
দরুদ পাঠের গুরুত্ব ও তাৎপর্য
দরুদ শব্দটি ফারসি। এর অর্থ শুভকামনা বা কল্যাণ প্রার্থনা। ইসলামি পরিভাষায় এটি নবীজির জন্য দোয়া ও কল্যাণ কামনার প্রতীক। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতারা নবীর জন্য দোয়া করেন। হে বিশ্বাসীগণ, তোমরাও নবীর জন্য দোয়া করো ও পূর্ণ শান্তি কামনা করো।’ (সুরা আহজাব: ৫৬)।
রাসুলুল্লাহ (সা.) দরুদ পাঠের পদ্ধতি শিখিয়ে দিয়ে বলেছেন, ‘বলো, আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ কামা সাল্লাইতা আলা ইবরাহিমা ওয়া আলা আলি ইবরাহিম ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ; আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ কামা বারাকতা আলা ইবরাহিমা ওয়া আলা আলি ইবরাহিম ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ।’ অর্থাৎ, হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মদ (সা.) এবং তাঁর বংশধরদের ওপর ইব্রাহিম (আ.) ও তাঁর বংশধরদের মতো রহমত ও বরকত নাজিল করো। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসনীয় ও সম্মানীয়।’ (বুখারি, মুসলিম ও মিশকাত)।
দরুদ পাঠের ফজিলত
হজরত ওমর ফারুক (রা.) বলেন, ‘যতক্ষণ নবী করিম (সা.)-এর ওপর দরুদ না পাঠানো হয়, ততক্ষণ কোনো দোয়া আসমান ও জমিনের মধ্যখানে আটকে থাকে।’ (তিরমিজি ও মিশকাত)।
রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, ‘কিয়ামতের দিন সেই ব্যক্তি আমার নিকটতম হবে, যে ব্যক্তি আমার ওপর সবচেয়ে বেশি দরুদ পাঠ করেছে।’ (তিরমিজি)।
অন্য এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার নাম শুনে আমার ওপর দরুদ পাঠ করে না, সে বড় কৃপণ। তার ধ্বংসের জন্য জিবরাইল (আ.) দোয়া করেন।’
দোয়া ও দরুদ: একটি অপরিহার্য সম্পর্ক
দোয়া কবুলের জন্য নবী করিম (সা.)-এর ওপর দরুদ পাঠ করা জরুরি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কোনো দোয়া আল্লাহর কাছে কবুল হয় না, যতক্ষণ সে দোয়ার আগে ও পরে নবী করিম (সা.)-এর ওপর দরুদ পাঠ করা না হয়।’
ভক্তিভরে দরুদ পাঠ করলে বান্দার গুনাহ মাফ হয় এবং আল্লাহর কাছ থেকে অশেষ সওয়াব লাভ করা যায়। তাই প্রতিদিনের ইবাদত-বন্দেগিতে বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা উচিত। এটি মানুষের ইবাদত ও দোয়ার গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করে এবং আল্লাহর বিশেষ রহমত লাভে সহায়ক।
দরুদ শরিফ পাঠ একটি পবিত্র ইবাদত, যা আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া কবুলের মাধ্যম এবং বান্দার জন্য আত্মিক পরিশুদ্ধির উপায়। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি দরুদ পাঠের মাধ্যমে বান্দা দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জগতে শান্তি লাভ করে।