Saturday, December 6, 2025

মিসরের নতুন প্রশাসনিক রাজধানী ও সিসির বিলাসবহুল প্রাসাদ নিয়ে বিতর্ক

গত ১৯ ডিসেম্বর কায়রোতে অনুষ্ঠিত ডেভেলপিং এইট (ডি–৮) গ্রুপের ১১তম শীর্ষ সম্মেলন আলোচনার চেয়ে বেশি সমালোচিত হয়েছে ভেন্যু হিসেবে ব্যবহৃত মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির নতুন বিলাসবহুল প্রাসাদের কারণে।

কায়রোর পূর্বে মিসরের নতুন প্রশাসনিক রাজধানীতে নির্মিত এই প্রাসাদ ৫০ হাজার বর্গমিটার আয়তনের, যা ২৫ লাখ বর্গমিটার কমপ্লেক্সের অংশ। ফেরাউনীয় স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত এই প্রাসাদে পিরামিড আকৃতির একটি হল রয়েছে। তবে এর নির্মাণ নিয়ে মিসরীয়দের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।

সমালোচকেরা দাবি করেছেন, দেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে এ ধরনের ব্যয়বহুল প্রাসাদ তৈরি রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয়। তাদের মতে, এই অর্থ শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং জনকল্যাণমূলক প্রকল্পে ব্যয় করা উচিত ছিল। প্রাসাদের দেয়ালে সিসির শাসনের প্রশংসা ও ২০১৩ সালে ইসলামপন্থী প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে উৎখাত করার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে, যা আরও বিতর্ক উসকে দিয়েছে।

এ ছাড়া নতুন প্রাসাদে কোরআনের আয়াতের সঙ্গে ফেরাউনের একটি উক্তি খোদাই করা হয়েছে, যা সিসিকে “আধুনিক ফেরাউন” হিসেবে তুলে ধরার প্রচেষ্টা বলে সমালোচিত হয়েছে।

সিসির মেগা প্রকল্প: নতুন প্রশাসনিক রাজধানী

কায়রো থেকে ৩০ মাইল পূর্বে নির্মাণাধীন নতুন প্রশাসনিক রাজধানী সিসির অন্যতম বৃহৎ মেগা প্রকল্প। ২০১৬ সালে শুরু হওয়া এই প্রকল্পে আফ্রিকার সবচেয়ে উঁচু টাওয়ার ও মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বড় ক্যাথেড্রাল নির্মিত হয়েছে। প্রথম ধাপের ব্যয় প্রায় ৫০০ বিলিয়ন মিসরীয় পাউন্ড (১০.৬ বিলিয়ন ডলার) এবং পুরো প্রকল্পের আনুমানিক ব্যয় ৫৮ বিলিয়ন ডলার।

সরকারি মন্ত্রণালয়গুলো ইতিমধ্যে এই শহরে স্থানান্তরিত হয়েছে। প্রায় ৪৮ হাজার সরকারি কর্মচারী এখানে কাজ করছেন। তবে প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থায়ন এবং দেশের বৈদেশিক ঋণের ক্রমবর্ধমান চাপ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে।

মিসরের নতুন প্রশাসনিক রাজধানী ও সিসির বিলাসবহুল প্রাসাদ নিয়ে বিতর্ক

ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সংকট

মিসরের অর্থনীতি ক্রমবর্ধমান চাপে রয়েছে। সিসি দায়িত্ব নেওয়ার পর বৈদেশিক ঋণ ৪৫.২ বিলিয়ন ডলার থেকে ১৫২.৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। সাম্প্রতিক আঞ্চলিক সংঘাত, যেমন গাজার যুদ্ধ এবং লোহিত সাগরে হুতিদের হামলা, সুয়েজ খালের আয় ৭০ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে, যা অর্থনীতিকে আরও সংকটে ফেলেছে।

সিসির বিলাসবহুল প্রাসাদ এবং প্রশাসনিক রাজধানীর নির্মাণ আর্থিক সংকটের মধ্যে নেতৃত্বের অগ্রাধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। মিসরীয়দের মধ্যে এটি ক্ষমতার অপব্যবহার এবং সাধারণ জনগণের দুর্ভোগের প্রতীক হিসেবে দেখা দিচ্ছে।

আরো পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত

এই বিভাগের আরো খবর