আজমখাঁন,বাঘারপাড়া(যশোর):১০ ডিসেম্বরের বাঘারপাড়া উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচন। এ নিয়ে বাঘারপাড়ায় কর্মী সমর্থক সহ এলাকায় চলছে টানটান উত্তেজনা। হচ্ছে একের পর এক মামলা হামলা। নৌকা আনারসের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে বিভিন্ন অঞ্চলে চলছে খন্ড যুদ্ধ। নৌকা পক্ষের কর্মী-সমর্থকরা তেমন একটা গ্রেফতার না হলেও আনারসের অনেক কর্মী গ্রেফতার হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে । অপরদিকে মামলা ছাড়াই বিএনপি অনেক কর্মী গ্রেফতার হয়েছে বলে অভিযোগ বিএনপির।
নির্বাচন কমিশন তারিখ ঘোষণার পরপরই মাঠে নেমেছে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী(বিদ্রোহী আ’লীগ)। তারা এখন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে আগামীর উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি তাদের মুখে। উপজেলার উন্নয়ন এগিয়ে নিতে চান প্রার্থীরা। নানাভাবে ভোটারদের পক্ষে নিতে তারা কাজ করছেন।ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে, উঠান বৈঠক করে ও বিভিন্ন হাট-বাজারে দলীয় কার্যালয়ে কর্মীসভার মধ্যে দিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই প্রচারণায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন প্রার্থীরা। সকাল হতে গভীর রাত পর্যন্ত চায়ের দোকান থেকে শুরু করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাটে, বিভিন্ন হাটে-বাজারে, স্কুল মাঠে সর্বত্র চলছে প্রার্থীদের জমজমাট প্রচার প্রচারণা। আজ নির্বাচনী প্রচারনার শেষ দিন। এছাড়া মাইকে বিভিন্ন ধরনের গান বাজনার মাধ্যমে চলছে প্রচার। ব্যানার ফেস্টুন, পোস্টারে ছেয়ে গেছে সমগ্র বাঘারপাড়া উপজেলা।
আ.লীগ, বিএনপি এবং স্বতন্ত্র নিয়ে মোট ৩ জন প্রাথী এবারের উপ-নির্বাচনে লড়াই করছেন। আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে ভিক্টোরিয়া পারভিন সাথী, স্বতন্ত্র প্রার্থী(বিদ্রোহী আ’লীগ) দীন মোহাম্মদ দিলু পাটোয়ারী আনারস প্রতীকে ও বিএনপি সমর্থিত শামসুর রহমান ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
নির্বাচনি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ভিক্টোরিয়া পারভীন সাথী বিজয় ছিনিয়ে আনতে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নেতা কর্মীদের নিয়ে গ্রাম-গঞ্জে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এদিকে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী বাঘারপাড়া উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ও জামদিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সামছুর রহমান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী (বিদ্রোহী আ’লীগ) সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান দিলু পাটোয়ারী নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রচার প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।
আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী (বিদ্রোহী আ’লীগ) দুবার নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান দিলু পাটোয়ারী বলেন, ‘জনগণের জন্য নির্বাচন করছি। দলের সুসময় ও দুঃসময়েও আমি দলকে আঁকড়ে রেখেছি। সর্বদাই জনগণের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। সর্বস্তরের জনগণের অনুরোধে আমি এ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছি। সুষ্ট ও নিরপেক্ষ ভোট হলে আমিই জিতবো ইনশাল্লাহ।
আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ভিক্টোরিয়া পারভীন সাথীর সাথে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ করতে গেলে তিনি ফোন কল রিসিভ করেননি।তবে তার নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানাযায় তারাও জয়ী হতে শতভাগ আশাবাদী।
বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী সামছুর রহমান বলেন,সাধারন জনগন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে চায়। নৌকা প্রতীকের সমর্থকরা বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে।ফেয়ার নির্বাচন নিয়ে শংঙ্কা রয়েছে। সুষ্ঠু ভোটগ্রহন অনুষ্ঠানের জন্য প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারনা, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে ধানেরশীষ প্রতীকের প্রার্থীর সাথে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর হাড্ডাহাডি লড়াই হবে। বিএনপির সমর্থকরা নির্ভয়ে এবং সুষ্ঠুভাবে ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলে হিসাবটা উল্টে যাওয়াই সাভাবিক বলে নির্বাচন বিশ্লেষকদের ধারনা। তবে বিএনপির ভোটারদেরকে ভয়-ভীতি প্রদানের মাধ্যমে স্নায়ু চাপে রাখা হয়েছে এবং তাদের পোষ্টার ও অফিস ভাংচুর করে দিয়ে তাদেরকে ভীত-সন্ত্রস্থ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এরকম ভীতিকর অবস্থা অব্যাহত থাকলে এবং বিএনপির ভোটারের উপস্থিতি কমে গেলে নৌকা ও আনারসের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে পারে। সর্বোপরি তিনজন প্রার্থীর মধ্যে কাছাকাছি ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে ধারনা করা যায়।
বাঘারপাড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে যাঁরা প্রার্থী হয়েছেন সকলের অতীত, বর্তমান বাঘারপাড়াবাসীর কাছে স্পষ্ট। ভোটাররা জানান,যার মাধ্যমে উপজেলার সর্বস্তরের মানুষ সেবা পাবে, ঝড়-বৃষ্টি-শীত উপেক্ষা করে যিনি জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিবে এবং যার মাধ্যমে জনগণ তার ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবে তাকেই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত করবে।
তবে মানুষের মাঝে এ নির্বাচনে ব্যাপক উৎসাহ ও আগ্রহ দেখা গেলেও নির্বাচনকে ঘিরে পাল্টাপাল্টি মামলায় সাধারন ভোটারের মাঝে আতংক সৃষ্টি করেছে। নির্বাচনকে ঘিরে সাধারণ জনগণের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হবে কিনা।
এ ব্যাপারে সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসার ও রিটার্নিং কর্মকর্তা হুমায়ন কবির সাংবাদিকদেরকে জানান, নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন করার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।প্রচার-প্রচারণা ৮ ডিসেম্বর রাত ১টায় শেষ হবে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের ও ১ টি পৌরসভার মোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৬৩টিভোটকক্ষের সংখ্যা ৪২৪ টি। মোট ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৭৩ হাজার ৭৭৯ জন।পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ৮৭ হাজার ৩৩১ জন,নারী ভোটারের সংখ্যা ৮৬ হাজার ৪৪৮ জন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
বাঘারপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আল মামুন সাংবাদিকদেরকে জানিয়েছেন, সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে লক্ষে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আগামী ১০ ডিসেম্বের উপনির্বাচনে প্রশাসনের তরফ থেকে শান্তিপূর্ন নির্বাচনের সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, বাঘারপাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমুল ইসলাম কাজল সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ায় পদটি শূন্য হলে উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন নির্বাচন কমিশন।






