এই পৃথিবী যেমন আছে তেমনি ঠিক রবে,সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে। একুশে পদকপ্রাপ্ত উপমহাদেশের প্রখ্যাত চারণ কবি বিজয় সরকারের ৩৮তম প্রয়াণ দিবস আগামীকাল সোমবার (৪ ডিসেম্বর)। ভারতে চিকিৎসাধীন থাকাকালীন অবস্থায় ১৯৮৫ সালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। বিরল ব্যক্তিত্ব ও প্রতিভাসম্পন্ন এই আধ্যাত্মিক পুরুষ ১৯০৩ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি নড়াইল সদর উপজেলার ডুমদি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা নবকৃষ্ণ অধিকারী ও মাতা হিমালয় অধিকারী।
কবিয়াল বিজয় সরকারের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে জেলা প্রশাসন ও চারণ কবি বিজয় সরকার ফাউন্ডেশনের আয়োজনে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে রোববার (৩ ডিসেম্বর) বিকেলে মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, কবির আত্মার শান্তি কামনা করে এক মিনিট নিরবতা পালন, কবিয়ালের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, আলোচনাসভা ও বিজয় গীতি পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে। এসব কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশফাকুল হক ছৌধুরী।
জানা গেছে, বাংলাদেশের কবি গানের উৎকর্ষ সৃষ্টিতে কবিয়াল বিজয় সরকারের অবদান অসামান্য। গ্রাম-বাংলার মানুষের হৃদয়ের আকুতিকে তিনি চমৎকার সুর ব্যঞ্জনায় তুলে ধরে সাধারণ মানুষের অন্তরে ঠাঁই নিয়েছেন। প্রচারবিমুখ ও নিভৃতচারী এই সংগীতসাধক আসরের প্রয়োজনে মঞ্চে বসেই গান রচনা করে তাৎক্ষণিকভাবে সুর করে তা পরিবেশন করেছেন।
বিজয় সরকারের ভাবধারা ও সঙ্গীত প্রসঙ্গে পল্লী কবি জসিম উদ্দিন বলেছিলেন, ‘মাঝে মাঝে দেশীয় গ্রাম্য গায়কদের মুখে বিজয়ের রচিত বিচ্ছেদ গান শুনিয়া পাগল হই। এমন সুন্দর সুর বুঝি কেহই রচনা করিতে পারে না।
দীর্ঘ সঙ্গীত সাধনার জীবনে তিনি প্রায় দুই হাজার গান লিখেছেন। যার মধ্যে রয়েছে বিচ্ছেদ গান, শোক গান, ইসলামি গান, আধ্যাত্মিক গান, দেশের গান, কীর্তন, ধর্মভক্তি, মরমী গান, বাউল, কৃঞ্চপ্রেম, শ্রেণি সংগ্রাম ইত্যাদি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বাল্যকাল থেকে তিনি ছিলেন ভাবুক প্রকৃতির। মাধ্যমিক শিক্ষার গণ্ডি পেরোতে না পারলেও স্কুল জীবন থেকেই তিনি গান রচনা ও সুর করে নিজে গাইতেন। শিশুকালে তার প্রতিভায় মুগ্ধ হন তৎকালীন সময়ের বিখ্যাত লোককবি মনোহর সরকার।
১৯২৯ সালে বিজয় সরকার নিজেই কবি গানের দল গঠন করেন। ১৯৩৫ সালে কলকাতার এ্যালবার্ট হলে কবি গানের এক আসর বসে। ওই আসরে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, পল্লী কবি জসিম উদ্দিন, কবি গোলাম মোস্তফা, কণ্ঠশিল্পী আব্বাস উদ্দিন আহম্মেদ উপস্থিত ছিলেন।
১৯৮৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি কলকাতার ‘ভারতীয় ভাষা পরিষদ’ তাকে সংবর্ধনা দেয়। ২০১৩ সালে এই গুণি শিল্পীকে মরণোত্তর একুশে পদক প্রদান করা হয়।
ডেস্ক রিপোর্ট/জয়-১১







