পাওনা সাড়ে ৫ লাখ টাকার জন্য যশোরে এসএম বায়েজীদ হাসান নামে এক সিভিল বিল্ডিং প্রকৌশলীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তার মরদেহ পুলিশ যশোর শহরের চুড়িপট্টি এলাকায় বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম চৌধুরী মুল্লুক চাঁদের চালের আড়তের ভেতর থেকে রোববার দিবাগত রাত ৩টার দিকে উদ্ধার করেছে।
নিহত বায়েজিদ খুলনার সোনাডাঙ্গা থানাস্থ হাজি ইসমাইল লিংক রোডের আল আমিন মহল্লার ৬২/৩ নম্বর বাড়ির মৃত শিকদার নজরুল ইসলামের ছেলে। তিনি মুল্লুক চাঁদ ও সঞ্জয় চৌধুরীর ঢাকার অফিসের কর্মী ছিলেন।
এই ঘটনায় নিহতের মা দিলরুবা কোতয়ালি থানায় একটি মামলা করেছেন। আসামি করা হয়েছে বিএনপির নগর শাখার আহবায়ক রফিকুল ইসলাম চৌধুরী মুল্লুক চাঁদসহ সাতজনকে। এছাড়া মামলার অপর আসামিরা হলো, মুল্লুক চাঁদের ভাই রকিবুল ইসলাম সঞ্জয় চৌধুরী (৫২), শহরের গাড়িখানা রোডের শহিদুল ইসলাম, রাজু, রাজন, শাহ আলম এবং লোন অফিসপাড়ার সাদেক মোল্লার ছেলে জসিম মোল্লাকে আসামি করা হয়েছে। শেষের ৫ জন মুল্লুক চাঁদের চালের আড়তের লেবার ।
যশোর কোতয়ালি থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক জানিয়েছেন, নৈশ প্রহরীদের কাছ থেকে তথ্য পেয়ে রাত ৩টার দিকে বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম চৌধুরী মল্লুক চাঁদের বাড়ি সংলগ্ন চালের আড়তে যান। সেখানে গিয়ে এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেন। পরে খোঁজ নিয়ে পুলিশ জানতে পারে ওই যুবকের নাম বায়েজীদ হাসান। তিনি পেশায় একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়র এবং মল্লুক চাঁদের ঢাকা অফিসে কর্মরত ছিলেন।
নিহতের মা দিলরুবা বলেন, বায়েজীদকে ৫ লাখ ৫৪ হাজার টাকা চুরির অপবাদ দিয়ে বের করে দেয়া হয়। পরে বায়োজিত খুলনায় চলে আসে। ওই টাকার জন্য প্রায় বাড়িতে হানা দিত শহিদুলসহ অন্যরা। এরমাধে রোববার মুল্লুক চাদ তাকে ডেকেছে বলে খুলনা থেকে যশোরে ডেকে আনা হয়। এরপর টাকা আদায়ের জন্য তাকে মারপিট করা হয়। এসময় বায়োজিত মোবাইল ফোনে তাকে মারপিটের বিষয়টি জানায় পরিবারকে। টাকা না দিলে হত্যার হুমকি দেয়া হয়। একপর্যায় মারপিট করে বায়োজিতকে হত্যা করা হয়।
আড়তের নৈশ প্রহরী মোজহার হোসেন সাংবাদিকদের জানান, তিনি রাত ১০টার দিকে আড়তে আসেন। এসময় ওই ছেলেটিকে আড়তের মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখেন। লেবারদের কাছে জানতে চাইলে তারা জানান, তিনি অসুস্থ হয়ে গেছেন সুস্থ হলে গেলে চলে যাবে। এরপর লেবাররা যে যার মত বাড়ি চলে যান। পরে তিনি বিষয়টি ম্যানেজারকে জানালে তিনিও একই কথা বলেন। এরপর তিনি আড়তে তালা দিয়ে বাইরে এসে অবস্থান নেন। পরে পুলিশ আসলে তিনি দরজা খুলে দেন। এসময় তারা ওই যুবককে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে এবং নিয়ে যায়।
নিহতের শাশুড়ি কেয়া, স্ত্রী তাকিয়া এবং ভাই আব্দুল আহাদ জানিয়েছে, রোবাবার বিকেলে সঞ্জয় চৌধরী একটির প্রাইভেটকারে করে খুলনা থেকে যশোরে নিয়ে আসে। তারা কেশবপুরে ইফাতারীও করেন। পরে সন্ধ্যার দিকে চালের আড়তে নিয়ে গিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে। দুই ভাই মুল্লুক চাঁদ ও সঞ্জয় চৌধুরী ঢাকার বসুন্ধরায় বিল্ডিং করছেন। সেটি দেখাশুনা করতো বায়েজীদ। দুই ভাইয়ের অন্যায় আব্দার মেনে না নেয়ায় প্রকৌশলী বায়েজীদ হাসানকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে তারা দাবি করেছেন। তবে আব্দার কী তা তারা জানান নি।
এদিকে যশোর নগর বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলাম চৌধুরী মুল্লুক চাঁদ পুলিশের কাছে দাবি করেছেন, সাবকন্ট্রাকটারের মালামাল কেনার ৫ লাখ ৫৪ হাজার টাকা আত্মসাত করে পালিয়ে যায়। ওই টাকার জন্য খুলনা সিটি কর্পোরশেনের একজন কাউন্সিলরের মাধ্যমে দেন দরবার চলছিলো। তাকে কে ডেকে এনেছে বা কে মারপিট করেছে তিনি কিছু বলতে পারছেন না। তার কর্মীদের সকলের ফোন বন্ধ। তিনি বিষয়টি জানার চেষ্টা করছেন।
এই বিষয়ে রকিবুল ইসলাম চৌধুরী সঞ্জয় বলেছেন, এই ঘটনায় তার চৌধুরী গোল্ড নামক দোকন থেকে ম্যানেজানসহ দুইজনকে পুলিশ নিয়ে গেছে। তাদের নিয়ে যাওয়ার কারন কি তা তিনি বলতে পারছেন না।
কোতয়ালি থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক জানিয়েছেন, এই ঘটনায় নিহতের মা দিলরুবা একটি মামলা করেছেন। এখনো পর্যন্ত কাউকে আটক করা হয়নি। পুলিশ তদন্ত করে অভিযান চালাচ্ছে।
এদিকে রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জুয়েল ইমরান। তিনি বলেন, পাওনা টাকা নিয়ে একটি বিরোধের তথ্য পেয়েছি। তবে কি কারণে এবং কারা এ হত্যাকান্ডে জড়িত তা সনাক্তে তদন্ত চলছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যেই হত্যার সাথে জড়িতদের সনাক্ত ও আটক করা সম্ভব হবে।
-রাতদিন সংবাদ