Sunday, April 28, 2024

রাঙামাটির পাহাড়ে চাষ করা কফি গাছে ফলন এসেছে

- Advertisement -

দেশে চা উৎপাদন ও রফতানি হলেও কফি সম্পূর্ণ আমদানিনির্ভর। এ অবস্থায় পাঁচ বছর গবেষণার পর পাহাড়ে চাষ উপযোগী বিশ্বসেরা কফির দুটি জাত উদ্ভাবন করেছেন রাঙামাটির কাপ্তাইয়ের রাইখালী কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা। জাত দুটির নাম দেওয়া হয়েছে বারি কফি-১ ও ২। এগুলো এরাবিকা ও রোবেস্টা জাতের কফি। গত জুন মাসে পাহাড়ের কয়েকটি স্থানে চাষ করা হয়েছে। গত মাসে সেসব গাছে ফলন এসেছে। এটিকে কৃষিতে নতুন সম্ভাবনা হিসেবে দেখছেন গবেষক ও বিজ্ঞানীরা। একইসঙ্গে এই জাতের কফি পাহাড়ে ব্যাপক হারে চাষ হলে অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটবে বলে মনে করছেন তারা।

রাইখালী কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পাঁচ বছর গবেষণার পর এরাবিকা ও রোবেস্টা কফির জাত দুটি উদ্ভাবন করেছেন বিজ্ঞানীরা। দুটি জাতই বিশ্বসেরা। উদ্ভাবিত জাতের নাম দেওয়া হয়েছে বারি কফি-১ ও ২। আগামী দুই বছরের মধ্যে পার্বত্য অঞ্চলে ব্যাপক হারে এর চাষাবাদ হবে।

রাইখালী কৃষি গবেষণা কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, কাপ্তাই উপজেলায় অবস্থিত রাইখালী কৃষি গবেষণা কেন্দ্র। ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে কেন্দ্রটি পাহাড়ের কৃষিতে নতুন নতুন ফলের জাত উদ্ভাবন করে আসছে। এ পর্যন্ত বিভিন্ন ফলের ১৯টি জাত উদ্ভাবন করে সফলতা পেয়েছে। তবে এবার কফির নতুন দুটি জাত উদ্ভাবনের মাধ্যমে পাহাড়ের কৃষি অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে চায় প্রতিষ্ঠানটি।

কফির নতুন দুটি জাত চাষাবাদে বিশেষ কয়েকটি সুবিধা রয়েছে বলে জানালেন রাইখালী কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান। তিনি বলেন, ‘পাহাড়ি অঞ্চলের যেকোনো এলাকায় ছায়াযুক্ত স্থানে আবাদ করা যাবে। বিভিন্ন বাগানে সাথী ফসল হিসেবেও চাষ করা যাবে। তিন থেকে চার বছরের মধ্যে গাছে ফল আসবে। প্রতিটি গাছ থেকে চার-পাঁচ কেজি কফি পাওয়া সম্ভব। হিসাবে প্রতি হেক্টরে সাত-আট মেট্রিক টন উৎপাদন সম্ভব। কফি সাথী ফসল হওয়ায় আলাদা খরচ কিংবা পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না।’

দুটি জাত চাষাবাদ সহজ বিধায় স্থানীয় কৃষকদের মাঝে আগ্রহ বাড়ছে উল্লেখ করে মাহমুদুল হাসান আরও বলেন, ‘ইতোমধ্যে পাহাড়ের কয়েকটি এলাকায় এই কফি চাষ হয়েছে। এতে আমরা সফলতা পেয়েছি।’

কাপ্তাইয়ের রাইখালী এলাকার চাষি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘সাথী ফসল হওয়ায় কফি আবাদে আলাদা খরচ ও পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। কফির বাগান করতে আমাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। চাষে খরচ কম হওয়ায় আমাদেরও আগ্রহ আছে। প্রথমবার অল্প জমিতে চাষ করেছি। অনেকে বাগান দেখতে আসছেন।’

একই এলাকার কফি চাষি মো. শামসুল হক বলেন, ‘প্রথমবারই গাছে ভালো ফলন এসেছে। তবে চাষের জন্য নির্দিষ্ট জমির প্রয়োজন নেই। যেকোনো স্থানে লাগানো যায়। অন্য গাছের ছায়া পেলেই কফির ভালো ফলন হয়। আমি সাথী ফসল হিসেবে লাগিয়েছি। আশা করছি, আর্থিকভাবে লাভবান হবো।’

পাহাড়ি এলাকায় বিশ্বসেরা এরাবিকা ও রোবেস্টা কফি চাষে আমরা সফলতা পেয়েছি বলে উল্লেখ করেছেন রাইখালী কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘পাহাড়ি এলাকায় চাষে যেহেতু সফলতা পেয়েছি সেহেতু মাঠপর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে এখন কাজ করছি আমরা। আশা করছি, আগামী এক-দুই বছরের মধ্যে পাহাড়ের প্রত্যেক স্থানে এর আবাদ ছড়িয়ে পড়বে।’

বাংলাদেশে কফির যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে এবং বিশ্বে অর্থকরী ফসল হিসেবে পরিচিত জানিয়ে এই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আগামী কয়েক বছরে পাহাড়ে কফি চাষের মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে বলে আশা করছি আমরা। সেভাবে কার্যক্রম চলছে আমাদের।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাঙামাটি অঞ্চল কৃষি বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক তপন কুমার পাল বলেন, ‘কফি চাষের পদ্ধতিটা যেমন সহজ তেমন পরিবহন করাও সহজ। পাশাপাশি সংরক্ষণের সুবিধা রয়েছে। তাই আশা করছি, পার্বত্য অঞ্চলে কফি চাষ বাড়ানো গেলে অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটবে।’

-অনলাইন ডেস্ক

- Advertisement -

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত