শফিয়ার রহমান, মণিরামপুর প্রতিনিধি: প্রায় ৮’শ বছর আগের কথা। দূর-দূরান্ত থেকে এখনও পর্যন্ত প্রতিনিয়ত মানুষ মানত করতে আসে, ফলে বাড়ে মানুষের ভীড়। মণিরামপুর উপজেলার কাটাখালি পাঁচবাড়িয়া গ্রামে মাঠের মধ্যে এক গভীর জঙ্গল ও ভয়ংকার জায়গা ছিল। যে কারণে এখানে বাঘ, শুকর, শিয়াল, সাপসহ বিভিন্ন হিংস্র প্রাণীর বসবাস ছিল। আর এ জঙ্গলের মধ্যে ছিলো বড় একটি মান্দার গাছ। মান্দার গাছে গোড়ায় একা একা বসবাস করতো একটি অপরিচিত লোক। আস্তে আস্তে গ্রামের মানুষ লোকটির কৌতুহল জানতে তার সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে শুরু করে। এলাকার মানুষ জানতে পারে তার নাম শাহ্ মান্দার রহমতুল্লাহ আলাইহি সুফি সাধক পীর। শাহ্ মান্দার পীর এক বছর ঔ জঙ্গলে আস্তা গেড়ে থাকার পর এলাকার লোকজন তাকে আর কোন দিন সেখানে দেখতে পাইনি। সেই থেকে ওই জায়গার নাম হয় শাহ্ মান্দার তলা পীরের আস্তানা। প্রায় ৮’শ বছর ধরে দূর দূরান্তের বিভিন্ন মুসলিম ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন কোন বিপদে পড়লে বা কোন রোগে আক্রান্ত হলে শাহ্ মান্দার পীরের আস্তানায় এসে মানত করে। মানত পূর্ণ হওয়ার পর তারা আবার এখানে এসে মানত দিয়ে যায়।
গত রোববার শাহ্ মান্দার তলা পীরের আস্তানায় গিয়ে দেখা যায়, মুসলিম ও হিন্দু সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষ খালি বোতল, সরিষার তেল, বোতল ভরা গরুর দুধ নিয়ে আসে আস্তানায়। ফলে আগত ভক্তরা প্রথমে আস্তানার পাশে সানবাঁধা পুকুরে হাত-পা ধুঁয়ে পবিত্র হয়ে বোতল ভরে পানি নিয়ে আস্তানায় যায়। সেখানে শত বছরের একটি নিম গাছ আছে, যার গোড়ার বেড় অনুমান ৪০ ইঞ্চি। নিম গাছের গোড়ায় দু’হাত মতো চিরা আছে, সেখানে ভক্তরা দুধ ঢেলে খালি বোতল গুলো গাছের চারপাশ রেখে কাপড়ের আচঁল পেতে ঘন্টার পর ঘন্টার মনের বসনা পুরনের জন্য বসে থাকে। আবার তারা উঠে পাশে আর একটি বট গাছে ইটের আঁধলা লাল সুতা দিয়ে বেঁধে মনের বাসনা পুরনে বাড়ি চলে যায়। যাদের মনের বাসনা পূর্ন হয়, পরে তারা মানতের ছাগল, হাঁস, মুরগি ছাড়াও অনেক ভক্ত ছাগল জবাই দিয়ে আগত ভক্তদের রান্না করে খাওয়ায়। এই শাহ্ মান্দার তলায় ভক্তরা আসে সপ্তাহে প্রতি ররি ও বৃহস্পতিবার। আর বিশেষ করে আসে যেসব মহিলাদের সন্তান হয়না, বালা-মছিবত, হামলা-মামলাসহ বিভিন্ন রোগের আরোগ্য লাভের আশা নিয়ে।
আস্তনায় কথা হয় ফুলবাড়ি গ্রাম থেকে আসা পরবর্তী বিশ্বাসের সাথে। তিনি বলেন, আমার একটি গাভীর পেটের মধ্যে কয়েক বার বাচ্ছা নষ্ট হয়ে গেছে। তাই আমি শাহ্ মান্দার পীরের আস্তানায় এসে মানত করে গিয়েছিলাম। তার উসিলায় আমার গরুর সুন্দর একটি বাছুর হাওয়ায় দুধ এনে মানত দিচ্ছি। পাঁচবাড়িয়া গ্রামের কার্ত্তিক রায় জানায়, আমার স্ত্রী অনিমা রায়ের একটি পুত্র সন্তান জন্ম নেওয়ার সময় তার পা দুটো পেচানো অবস্থায় পৃথিবীতে আসে। সে কারণে আমার স্ত্রী সন্তানকে ঠিক মতো বুকের দুধ খেতে দিতো না, শুধু বসে বসে কান্নাকাটি করত। আর আমার মা পারুল রায় বলতো বউমা তুমি খোকাকে দুধ খেতে দাও, দেখো খোকা একদিন ভাল হয়ে যাবে। এভাবে এক মাস পার হওয়ার পর আমার মা সন্তানকে প্রতিদিন শাহ্ মান্দার পীরের আস্তানায় নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা শুয়ায়ে রাখে আর এখনকার কাঁদা মাটি সন্তানের সারা শরীরে লাগিয়ে রাখতো। ভগমানের কৃপা দিনে দিনে আমার সন্তানের পা ভাল করে দিয়েছে। আমার ছেলের অমিত রায় । চাঁদের গায়ে খাদ আছে কিন্তু আমার ছেলের গায় কোন খাদ নায়। সে থেকে আমি প্রতি রবি ও বৃহস্পতিবার এখানে আসি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আমজাদ হোসেন বলেন, শাহ্ মান্দার পীরের কথা বলে শেষ করা যাবে না। এটা দীর্র্ঘ ৭/৮ শত বছর আগের কথা। আমার বাপ দাদাদের কাছ থেকে শুনে আসছি। আমরা বাস্তবেও অনেক কিছু দেখেছি। এখানে বিভিন্ন গ্রাম থেকে মুসলিম ও হিন্দুসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজন এসে মানত করে। আমার জানা মতে এখানে যারা সঠিক নিয়ত করে মানত করে তাদের মনের আশা পূর্ন হয়। পাশে একটি পুকুরে বড় বড় দুটি মাছ ছিল। কিন্তু গ্রামের কয়েকটি লোক সে মাছ ধরে রান্না করে খাওয়ায় তারা সবাই মারা গিয়েছে। রাতে যদি কেউ এই পথ দিয়ে আসে আর তার মনে যদি একটু ভয় লাগে তাহলে হঠাৎ তার সাথে এক জন সাথী হয়ে যায়। তাকে বাড়িতে পৌছায় দেওয়ার ঘটনা অনেক আছে। তিনি আরো বলেন, যদি কেউ খারাপ মন নিয়ে এখানে আসে বা আস্তানার কোন কিছু ক্ষতি করার মানসিকতা থাকে তাহলে সে ফিরে যেতে পারে না। শাহ্ মান্দার তলা পীরের আস্তানা এমনি একটি পবিত্র জায়গা।







