Saturday, December 6, 2025

বিয়ের আসরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিরুদ্ধে অভিনব প্রতিবাদ

বিয়ে মানে জীবনের নতুন অধ্যায়। প্রেম-ভালোবাসার বাঁধনে পরস্পরকে বেঁধে রাখার আনুষ্ঠানিক উপলক্ষ। নিভৃতে প্রতিদিন এমন করেই আমাদের চারপাশে হয়ে যাচ্ছে বহু বিয়ে। তবে বিয়ের আসরে প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়া? সচরাচর বোধহয় দেখা যায় না এমনটা। একটু অভিনব শোনালেও বিয়ের আসরেই রাষ্ট্রের কাছে এক সাহসী দাবি তুলে ধরেছেন এক তরুণ নবদম্পতি।

সম্প্রতি বিয়ের পিঁড়িতে বসেন মাহমুদুল হাসান ও সুমাইয়া আফরিন। বরের বাড়ি ঝিনাইদহে অনুষ্ঠিত বিয়ের আয়োজনে তারা জানিয়েছেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজা আক্তারের মুক্তির দাবি।

এমন দাবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড ছিল তাদের বিয়ের আসরে। অনুষ্ঠানের ছবি এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সয়লাব।

বর মাহমুদুল হাসান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থী। তিনি বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের দপ্তর সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন। আর কনে সুমাইয়া আফরিন গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেত্রী।

পারিবারিক সূত্র জানায়, মাহমুদুল-সুমাইয়ার পূর্বপরিচয় উভয় পরিবারের সম্মতিতে মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) পায় চূড়ান্ত পরিণয়।


বিয়ের সন্ধ্যায় বর-কনের সাজ আর সানাইয়ের সুর ছাপিয়ে নজর কেড়ে নেয় আমন্ত্রিত অতিথিদের “জ্বালো জ্বালো আগুন জ্বালো, জ্বালোরে জ্বালো আগুন জ্বালো, অ্যাকশন অ্যাকশন ডাইরেক্ট অ্যাকশন, ডিএসএ’র বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট অ্যাকশন”, “খাদিজার মুক্তি চাই”, “ডিএসএ বাতিল করো, বাতিল করো করতে হবে”-স্লোগান।

বরের হাতে ছিল “অ্যাবোলিশ ডিএসএ” এবং কনের হাতে “ফ্রি খাদিজা” লেখা প্ল্যাকার্ড।

বর মাহমুদুল হাসান বলেন, “আমরা নতুন জীবনের শুরুটা করতে চেয়েছি এই নিপীড়নমূলক আইনের বাতিল ও খাদিজার দ্রুত মুক্তির দাবি জানিয়ে। জুলুমের অবসান ঘটিয়ে গণমানুষের মুক্তির সংগ্রামে বিবেকবান মানুষের অংশগ্রহণের আহ্বান জানানোর প্রত্যয়েই আমাদের বিয়েতে এই প্রতিবাদ।”

তিনি আরও বলেন, “ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় খাদিজাতুল কুবরা দীর্ঘ আট মাসেরও বেশি সময় কারাগারে। তিনি কিডনি সমস্যায় ভুগছেন। অসংখ্যবার চেষ্টা করেও তাকে জামিনে মুক্ত করা যায়নি। কারণ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ধারাগুলো জামিন অযোগ্য। বিভিন্ন পরিসংখ্যানে বিষয়টি স্পষ্ট, এই মামলাটি রাজনৈতিক কারণে ব্যবহার ও ভিন্নমত দমনে ক্ষমতাসীনদের একটি হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে।”

বিয়েতে আমন্ত্রিত অতিথি ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সভাপতি ইমতিয়াজ অর্ণব বলেন, “বিবাহের আসরে নবদম্পতির অভিনব রাজনৈতিক অবস্থান আমাদের বার বার মনে করিয়ে দেয়, কোনোকিছুই রাজনীতির বাইরে নয়। দিনমজুরের আহাজারি থেকে শুরু করে বিবাহের আসর- প্রতিবাদের ভাষা চিরকালই বৈচিত্র্যময়। মানুষের মত প্রকাশের মৌলিক অধিকার যে দমিয়ে দেয়া যায় না, মাহমুদ-সুমাইয়ার এই অভিনব প্রতিবাদ তার চাক্ষুষ প্রমাণ। বাংলাদেশের রাজনীতি সচেতন এবং রাজনীতিবিমূখ মানুষদের জন্য চমৎকার পাঠ হতে পারে নবদম্পতির এই সাহসোচিত পদক্ষেপ।”

অনলাইন ডেস্ক

এস-৯

আরো পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত

এই বিভাগের আরো খবর