২০০৯ সালের ১ মে যশোরের চাঁচড়ার ফজলুল হক খলিফার ছেলে কাপড় ব্যবসায়ী কবির হোসেন বাবুকে মাইক্রোযোগে অপহরণ করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় ওই সময় পরিবারের সদস্যরা অপহৃত বাবুর কথিত স্ত্রী আলোচিত কলগার্ল রুনা আক্তার রেখাসহ ৪ জনকে অভিযুক্ত করেন। অন্যরা হচ্ছে, যশোর সদর উপজেলার তালবাড়িয়ার নুরুল ইসলামের ছেলে সাইদুর রহমান ও শেখহাটির ফজের আলী মিস্ত্রির ছেলে জাহিদ হোসেন।অপহরণ ঘটনার আগে ২০০৮ সালের শেষের দিকে প্রেমজ সম্পর্কের জের ধরে বাবু কলগার্ল রেখাকে বিয়ে করে ঘোপ জেল রোডের একটি বাসায় ভাড়া থাকতেন। এখানে অবস্থানকালে রেখা শেখহাটির জাহিদ ও তালবাড়িয়ার সাইদুরের সাথে প্রেমজ সম্পর্ক গড়ে তোলে। এ নিয়ে রেখার সাথে বাবুর মধ্যে প্রায়ই গোলযোগ হত। এর এক পর্যায়ে রেখা তার নতুন প্রেমিকদ্বয়সহ এক সন্ত্রাসীর সহযোগিতায় বাবুকে অপহরণ করে বলে পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ তোলেন। পাঁচ মাসেও বাবু কিংবা কলগার্ল রেখার হদিস না মেলায় ২০০৯ সালের ১৩ অক্টোবর থানায় মামলা হয়, যার নং ৫১।মামলার পর ওই রাতেই থানার এস আই তরুন কুমার কর বেনাপোলের একটি বাড়ি থেকে অস্ত্রসহ অভিযুক্ত রুনা আক্তার রেখা ও তার নতুন প্রেমিক সাইদুর রহমানকে আটক করেন। ওই সময় তাদের বিরূদ্ধে বেনাপোল থানায় অস্ত্র আইনে আরও একটি মামলা হয়, যার নং ১১। বাবু অপহরণ ও অস্ত্র দখলে রাখার ঘটনায় তাদের দু’দফা ৪ দিন করে রিমান্ডে আনলেও পুলিশ তথ্য আদায়ে ব্যর্থ হয়। এছাড়া অন্য দু’আসামি উচ্চ আদালত থেকে জামিন লাভ করেন। ধৃত কথিত স্ত্রী রেখা ও তার প্রেমিক সাইদুর পুলিশকে অপহরণ ঘটনায় বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দিতে থাকে। তারা বাবুকে যশোর থেকে নিয়ে যাওয়ার কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করলেও ফরিদপুরে গিয়ে বাবুকে শেখহাটির জাহিদ ও অন্য এক যুবকের হাতে দেয়া হয় বলে জানায়। ওই তথ্যের পর দু’একদিন শেখহাটি এলাকায় অভিযান চালালেও অজ্ঞাত কারণে পরে থেমে যায়। এরপর কেটে যায় কয়েক বছর। আবার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়। তদন্ত কার্যক্রম আরও ঝিমিয়ে পড়ে। অপহরনের পর বাবুকে হত্যা ও গুমের অভিযোগ করা হলেও পুলিশ অনেকটা নিস্ক্রিয় ভূমিকা পালন করে মামলার দায়েরের বছর তিনেক পর থেকে। পুলিশ বাবুর পরিণতি নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়, নাকি অজ্ঞাত কারণে বিষয়টি এড়িয়ে যায় তা নিয়েও নানা প্রশ্ন ওঠে। এক পর্যায়ে মামলাটি ধামাচাপা পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। কলগার্ল রুনা আক্তার রেখা ও তার প্রেমিক সাইদ জামিন লাভ করার পর পুলিশ মামলাটি নিয়ে আর উচ্চবাচ্য করেনি। পরে ওই রেখার আর খোঁজও করেনি পুলিশ। এর মাঝে কেটে যায় আরও ৭ বছর।আত্মগোপনে রয়েছে কলগার্ল সেই রেখা। পরিবারের লোকজন বাবুর পরিণতি জানতে আজও পথ চেয়ে থাকলেও পুলিশ কাজ করেনি। ৫ বছর আগে তদন্ত কর্মকর্তা এস আই আমীর আব্বাস মামলাটি ফাইনাল দেন বলে থানা সূত্র জানিয়েছে। অপহৃত বাবুকে জীবিত অথবা মৃত উদ্ধার করতে না পারায় আসামিদের বিরূদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি বলে পুলিশ উল্লেখ করে প্রতিবেদনে। ওই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে তাতে নারাজি দেয়া হয় পরিবারের পক্ষে। মামলাটি পরে চলে যায় সিআইডি যশোর জোনেএ ব্যাপারে বাবুর বড় ভাই মোতালেব হোসেন গ্রামের কাগজকে জানান, বছরের পর বছর থানা সিআইডির বারান্দায় ঘুরেও সুরাহা পাননি। অপহরণে জড়িতদের নাম উল্লেখ করে মামলা হলো, অনেকের নাম আসল। আর পুলিশ রহস্যজনকভূমিকা পালন করল। এখনও রহস্যাবৃত বাবুর পরণতি।তিনি জানান, তার ভাই জীবিত না মৃত এ তথ্যটিও পুলিশ দিতে পারলো না। তারা এখনও বাবুর পথ চেয়ে আছেন।
রাতদিন নিউজঃ







