বর্ণাঢ্য আয়োজনে উদযাপিত হয়েছে যশোরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সম্মিলনী ইনস্টিটিউশনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী স্মরণে সম্মিলনী ইনস্টিটিউশন দিবস। প্রতিষ্ঠার ১৩৪ বছরে পা রেখে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে বিদ্যালয়ের ঐতিহ্য ও গৌরবের কথা স্মরণ করেন প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্ররা। এ উপলক্ষে রোববার জাতীয় সংগীত পরিবেশন, আনন্দ শোভাযাত্রা, বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা রায় বাহাদুর যদুনাথ মজুমদারের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ ও কৃতি ছাত্রদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয় ।
সকাল ১১টায় বেলুন ও ফেস্টুন উড়িয়ে দিবসটির উদ্বোধন করেন প্রবীণ শিক্ষক তারাপদ দাস ও প্রাক্তন ছাত্র ধূর্জ্জটি প্রাসাদ দাস (১৯৫৪ ব্যাচ)। এর আগে সকাল নয়টা থেকেই স্কুল প্রাঙ্গণে উপস্থিত হতে থাকেন প্রাক্তন ছাত্ররা। অনেকদিন পর প্রিয় বন্ধুদের দেখে ছবি তোলা ও খোশগল্পে মেতে উঠেন সবাই। স্মৃতিচারণ করতে করতে অনেকে ফিরে যান শৈশবের মধুর দিনগুলোয়। শত শত প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে মিলনমেলায় পরিণত হয় সম্মিলনী ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণ। সকাল থেকে রাত অবধি উল্লাসে মেতে উঠেন তারা। প্রাক্তন ছাত্র প্রবীণ দেলোয়ার হোসেন (১৯৬৪ ব্যাচ), বীর মুক্তিযোদ্ধা মোতাসিম বিল্লাহ (১৯৭০ ব্যাচ) ও শফিক রতন (১৯৬৬ ব্যাচ) উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, অনেকদিন পর ছোটবেলার বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে পেরে উৎফুল্ল তারা। সারাদিনের আড্ডায় নিজেদের শৈশব স্মৃতিতে ফিরে যেতে চান। তারা আরও বলেন, এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আজ দেশ-বিদেশে অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন। সরকারি-বেসরকারি উচ্চপর্যায়ে দায়িত্ব পালন করছেন। সময়ের সিঁড়ি বেয়ে এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি গৌরবের ১৩৩ বছর পার করেছে।
পরণে টি শার্ট, মাথায় লাল-সবুজ ক্যাপ, মুখে বাঁশি নিয়ে সাড়ে ১১টায় শহরে বিশাল আনন্দ শোভাযাত্রা বের করেন প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্ররা। শোভাযাত্রাটি চৌরাস্তা ও দড়াটানা ঘুরে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে গিয়ে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় ঢাক-ঢোল ও শত শত বাঁশির শব্দে মুখরিত হয়ে উঠে আশেপাশের এলাকা। শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন, সম্মিলনী ইনস্টিউশন প্রাক্তন ছাত্র পরিষদের
আহ্বায়ক মুক্তিযুদ্ধকালীন বৃহত্তর যশোরের মুজিব বাহিনীর উপপ্রধান অ্যাডভোকেট রবিউল আলম, সদস্য সচিব হিমাদ্রি শাহ মনি, প্রধান সমন্বয়ক মফিজুর রহমান হিমু, প্রাক্তন ছাত্র সুকুমার রায়, অ্যাডভোকেট মাহমুদ হাসান বুলু, দীপংকর দাস রতন, সুখেন মজুমদার, আসাদুজ্জামান মিঠু, ফারাজী আহমেদ সাঈদ বুলবুল, রিমন খান, আজাহার আলী স্বপন, স্বপন গাঙ্গুলী, ধনঞ্জা বিশ্বাসসহ পাঁচ শতাধিক প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্ররা। বিকেল সাড়ে তিনটায় বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা রায় বাহাদুর যদুনাথ মজুমদারের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ, প্রয়াত শিক্ষক, কর্মচারী ও ছাত্রদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। এরপর প্রাক্তন তিন শিক্ষার্থী, ২০২২ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত এবং বিভিন্ন শেণিতে প্রথম স্থান অধিকারী ছাত্রদের সংবর্ধনা প্রদান ও বর্তমান শিক্ষকদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয় । সংবর্ধিত তিন প্রাক্তন কৃত্তি শিক্ষার্থীর মধ্যে রয়েছেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ডক্টর মুস্তাফিজুর রহমান, অধ্যাপক ডাক্তার আব্দুর রশিদ ও মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) আবু ইসহক ইব্রাহীম। প্রাক্তন ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট রবিউল আলমের সভাপতিত্বে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সংবর্ধিত তিন শিক্ষার্থী তাদের অনুভূতি প্রকাশ করেন। একইসাথে নিজেদের সফলতায় বিদ্যালয়ের অবদানের কথা স্মরণ করেন। সন্ধ্যায় আয়োজন করা হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। এ সময় নাচে-গানে মেতে উঠেন প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্ররা।
১৮৮৯ যশোর শহরের লোন অফিস পাড়ায় সালে রায় বাহাদুর যদুনাথ মুজমদার প্রতিষ্ঠা করেন সম্মিলনী ইনস্টিটিউশন। একই সময়ে বিদ্যালয়টি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী স্বীকৃতি লাভ করে। এরমধ্যে বিদ্যালয়টিতে লেখাপাড়া করে বিভিন্ন শিক্ষার্থী সফল হয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে গৌরবান্তিত করে তুলেছেন। বিভিন্ন খ্যাতিমান ব্যক্তিবর্গ। ৫২’র ভাষা আন্দোলন এবং ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনেক ছাত্র সরাসরি অংশগ্রহণ করেছেন । ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠার ১২৫ বছর পূর্তি উৎসব পালন শেষে এ দিনটিকে ‘সম্মিলনী ইনস্টিটিউশন দিবস’ ঘোষণা করে সম্মিলনী ইনস্টিটিউশন প্রাক্তন ছাত্র পরিষদ।
বিশেষ প্রতিনিধি







