যশোরে মহাসাড়ম্বরে উদযাপিত হয়েছে বই উৎসব। সারাদেশের মতো রোববার জেলার পাঁচ লাখ শিক্ষার্থীর হাতে এ বছর নতুন বই তুলে দেয়া হয়েছে। তাই দিনটিকে ঘিরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছিল উৎসবের আমেজ। এতে জেলা প্রশাসক, পৌর মেয়রসহ বিভিন্ন পর্যায়ের অতিথিরা কোমলমতি শিশুদের হাতে বই তুলে দেন।
যশোরের আট উপজেলায় দুই হাজার ২শ’ ৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে এক হাজার ২শ’ ৮৯টি, এবতেদায়ী মাদ্রাসা ৬৫টি, উচ্চ বিদ্যালয় ৫শ’ ৩০টি, মাদ্রাসা ৩শ’ ১০টি এবং স্কুল অ্যান্ড কলেজ রয়েছে ১৫টি।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে জানা গেছে, বর্তমানে জেলায় প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী মিলে ২ লাখ ২৩ হাজার ৩৪৪ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। বাকি হাইস্কুল, স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং মাদ্রাসা মিলে শিক্ষার্থী রয়েছে ২ লাখ ৮০ হাজার। এসব শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রাথমিক স্তরে আট লাখ ২৭ হাজার ৭শ’ ১৬ ও মাধ্যমিক স্তরে ১০ লাখ ৩২ হাজার ৫শ’ ৬৯টি বই বিতরণ করা হয়েছে। তবে চাহিদা অনুযায়ী বাকি বই পর্যায়ক্রমে উপজেলাগুলোতে পাঠানো হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
বই উৎসব উপলক্ষে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আয়োজন করা হয় নানান অনুষ্ঠান। এদিন সকালে সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে বই উৎসবের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান। তিনি কোমলমতি শিশুদের হাতে নতুন বই তুলে দেন। এসময় জেলা শিক্ষা অফিসার একেএম গোলাম আযমসহ বিভিন্ন অতিথিরা অংশ নেন। পরে জেলা প্রশাসক জিলা স্কুল ও ইনস্টিটিউট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যেও বই বিতরণ করেন।
বই বিতরণ অনুষ্ঠানে মুসলিম একাডেমিতে প্রধান অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রফিকুল হাসান। বিশেষ অতিথি ছিলেন পৌর কাউন্সিলর রাজিবুল আলম। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধান শিক্ষক পল্লব কান্তি ঘোষ। প্রিপারেটরি স্কুলে প্রধান অতিথি ছিলেন পৌর মেয়র বীরমুক্তিযোদ্ধা হায়দার গণি খান পলাশ। বিশেষ অতিথি ছিলেন পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কেএম আবু নওশাদ। সভাপতিত্ব করে প্রধান শিক্ষক আব্দুস সবুর।
সেবা সংঘ স্কুলে আয়োজিত বই উৎসবে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শেখ জাহিদুর রহমান লাবু। বিশেষ অতিথি ছিলেন বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান আব্দার। এতে সভাপতিত্ব করেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন। শহরের মহিলা সমাজ কল্যাণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রতিষ্ঠানের সভাপতি মাসুদুর রহমান। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধান শিক্ষক সেলিনা আক্তার।
নতুন খয়েরতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন বই প্রদান করেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মীর জহুরুল ইসলাম। নামেজ সরদার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আয়োজিত বই উৎসবে প্রধান অতিথি ছিলেন স্কুলের সভাপতি আল্লাউদ্দিন মুকুল। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধান শিক্ষক শিকদার আনিছুর রহমান। এমএসটিপি স্কুল এন্ড কলেজে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা শিক্ষা অফিসার একেএম গোলাম আযম। সভাপতিত্ব করেন প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ খায়রুল আনাম।
এদিকে, বই উৎসবে যশোর সদর উপজেলায় প্রাথমিকে ২ লাখ ৭০ হাজার ৩৯টি, মাধ্যমিকে ৩ লাখ ৪০ হাজার ২০০টি, শার্শায় প্রাথমিকে ১ লাখ ১৪ হাজার ৫৩১টি, মাধ্যমিকে ১ লাখ ২৫ হাজার ৩২টি, মণিরামপুরে প্রাথমিকে ১ লাখ ১৭ হাজার ৬২৮টি, মাধ্যমিকে ১লাখ ৮৩ হাজার ৫৪৫টি, বাঘারপাড়ায় প্রাথমিকে ৬০ হাজার ১৪০টি, মাধ্যমিকে ৭০ হাজার ৮শ’৭৬টি, ঝিকরগাছায় প্রাথমিকে ৯৩ হাজার ৮শ’ ৯৭টি, মাধ্যমিকে ১ লাখ ২২ হাজার ৬শ’ ৫০টি, চৌগাছায় প্রাথমিকে ৭০ হাজার ৪শ’ ৭৬টি, মাধ্যমিকে ৯০ হাজার ৫শ’ ২০টি, কেশবপুরে প্রাথমিকে ৭১ হাজার ৬শ’ ৫০টি, মাধ্যমিকে ৮০ হাজার ৭শ’ ৫০টি, অভয়নগরে প্রাথমিকে ৭০ হাজার ৩৯টি এবং মাধ্যমিকে ১ লাখ ৪৪ হাজার ৮শ’২০টি বই বিতরণ করা হয়েছে।
জেলা শিক্ষা অফিসের তথ্যমতে, মোট চাহিদার বিপরীতে প্রাথমিকে ৬১ দশমিক ৩৯ শতাংশ, মাধ্যমিক পর্যায়ে ৪২ শতাংশ, দাখিলে ৩৩ শতাংশ, এবতেদায়িতে ৬৪ শতাংশ, এসএসসি ভোকেশনালে ৩৬ শতাংশ ও দাখিল ভোকেশনালে ২৮ শতাংশ বই বিতরণ করা হয়েছে।
বিশেষ প্রতিনিধি







