Saturday, December 6, 2025

বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের স্মৃতিস্তম্ভ: ৫১ বছরেও সংরক্ষণ হয়নি

৫১ বছরেও সংরক্ষণ হয়নি শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখের স্মৃতিস্তম্ভ। সারা বছরই অযত্ন-অবহেলায় থাকে স্মৃতিস্তম্ভটি। এখানে নেই কোনো নিরাপত্তা বেষ্টনী। অতিথিদের বসার বা রেস্ট করার মতো কোনো ব্যবস্থা নেই এখানে। বিষয়টি একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানালেও কোনো সুরাহা না হওয়ার অভিযোগ তার স্বজনদের।

তাদের দাবি, কাশিপুরে শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখের স্মৃতিস্তম্ভসহ শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিস্তম্ভ গুলি সরকারিভাবে সংরক্ষণ করে এখানে একটি মুক্তিযোদ্ধা মিউজিয়াম স্থাপন করা হোক।

এ বিষয়ে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের ছেলে এসএম গোলাম মোস্তফা কামাল বলেন, বুকের রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন আমার বাবা। অথচ অবহেলায় পড়ে থাকে তার স্মৃতিস্তম্ভ। আমি স্মৃতিস্তম্ভটি সংরক্ষণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানাই।

জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান বলেন, এ বিষয়ে একটি প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আমরা এ জেলায় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সম্বলিত যেসব স্থাপনা রয়েছে সবগুলো সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিচ্ছি। বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ নূর মোহাম্মদের স্মৃতিস্তম্ভ সংরক্ষণে যথাযোগ্য মর্যাদায় ব্যবস্থা নিব। মিউজিয়ামের বিষয়টি সয় সাপেক্ষ। তবে বিষয়টি সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।

স্বাধীনতার সূর্য সন্তান বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ ১৯৭১ সালের আজকের এ দিনে পাকিস্তানী বাহিনীর মর্টারের আঘাতে প্রাণ হারান।

সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) উপজেলার কাশিপুরে নূর মোহাম্মদ স্মৃতিসৌধে উপজেলা প্রশাসন, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মাদ কলেজ, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বীরের সম্মানে গার্ড অব অনার, স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধাঞ্জলি, রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়ার অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভাসহ নানা কর্মসূচি পালন করছে।

যশোরের সীমান্তবর্তী শার্শা উপজেলার কাশিপুরে চিরতরে ঘুমিয়ে আছেন বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদসহ সাত শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা। এখানে নির্মাণ করা হয়েছে শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ স্মৃতিস্তম্ভ। বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ ছাড়াও এখানে শহীদ আব্দুল আহাদ, শহীদ সুবেদার মনিরুজ্জামান (প্রাক্তন ইপিআর), শহীদ সৈয়দ আতর আলী (তদানিন্তন গণ পরিষদ সদস্য), শহীদ বাহাদুর আলী, শহীদ সিপাহী আব্দুস ছাত্তার বীরবিক্রম (প্রাক্তন ইপিআর) ও শহীদ সিপাহী এনামুল হক বীরপ্রতীক (প্রাক্তন ইপিআর)।

বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ সৈনিক জীবনের কঠিন দায়িত্ববোধ থেকে বিচ্যুত না হয়ে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। সহযোদ্ধাদের জীবন বাঁচাতে এগিয়ে গেছেন নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে। তার সে চেষ্টা সার্থক হয়েছিল। নিরাপদে ফিরতে পেরেছিল সহযোদ্ধারা। শুধু ফিরে আসেননি নূর মোহাম্মদ। শত্রুপক্ষের একটি মর্টারের গোলা শেষে পর্যন্ত কেড়ে নিয়েছিল তার জীবন প্রদীপ। পাকিস্তানি হায়েনারা উপড়ে ফেলেছিল তার দুটি চোখ। দেহকে ছিন্নভিন্ন করেছিল বেয়নটের খোঁচায়।

বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ ১৯৩৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি নড়াইলের মহেশখালী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার মায়ের নাম জেনাতুননেছা। বাবা আমানত শেখ। নূর মোহাম্মদ ছিলেন বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। ছোট বেলায় তিনি বাবা-মাকে হারান। ১৯৬৯ সালে নূর মোহাম্মাদ ভর্তি হন ইপিআর বাহিনীতে (বর্তমানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি)। তখন তার বয়স ২৩ বছর। ট্রেনিংয়ের পর পোস্টিং হয় দিনাজপুর। সেখানে ছিলেন ১৯৭০ সাল পর্যন্ত। তারপর আসেন যশোর হেড কোয়ার্টারে।

১৯৭১ সালে মার্চ মাসে পাকিস্তানিরা বাঙালিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লে সিপাহী নূর মোহাম্মদ সৈনিক মনে নাড়া দেয় স্বাধীনতা আর স্বদেশ প্রেম। তার সচেতন বিবেকবোধ মুক্তিযুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করে। যশোরে মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন ৮ নম্বর সেক্টরের অধীনে। নূর মোহাম্মদের প্রাতিষ্ঠানিক সামরিক প্রশিক্ষণ থাকায় একটি কোম্পানির প্রধান নিযুক্ত করে যশোরের সীমান্তবর্তী গোয়ালহাটি টহলের দায়িত্ব দেয়া হয়।

আরো পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত

এই বিভাগের আরো খবর