Saturday, December 6, 2025

গ্রামের বাড়িতে চির নিদ্রায় শায়িত হলেন শহীদ অগ্নিযোদ্ধা গাউছুল আজম

হাবিবুল্লাহ হোসাইন,মনিরামপুর:

সীতাকুণ্ডে অগ্নিদগ্ধ ফায়ারম্যান গাওসুল আজমের (২৪) মৃত্যুতে গোটা পরিবারসহ স্বজনদের মাঝে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। গাউসুলের না ফেরার দেশে চলে যাওয়াকে কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেন না তারা। রোববার (১২জুন) রাত ১২টায় যশোরের মনিরামপুরের খাটুয়াডাঙায় জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় অগ্নিযোদ্ধা গাউসুলকে। এর আগে ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্সের পক্ষ থেকে তাকে গার্ড অফ অনার দেওয়া হয়।

রোববার (১২জুন) ভোরে ঢাকার শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। মৃত্যুর খবর শুনে যশোরের মনিরামপুরে গ্রামের বাড়িতে শুরু হয় স্বামী, ছেলে, আবার কারও ভাই বা স্বাজন হারানো হ্দয় বিদারক আহাজারি। শুধু গাউছুলের একমাত্র সন্তান ছয় মাস বয়সী অবুঝ শিশু সিয়াম জানে না যে সে বাবাকে হারিয়েছে।

রোববার দুপুর তিনটায় ঢাকা ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্সের সদর দপ্তরে গাউসুলের গার্ড অফ অনার ও প্রথম জানাযা শেষে স্বজনরা মরদেহ নিয়ে রওনা হয় গ্রামের বাড়ি যশোরের পথে। রাত সাড়ে ১০টার দিকে লাশবাহী ফ্রিজিং ভ্যানে করে গাউসুলের মরদেহ পৌছায় গ্রামের বাড়ি মনিরামপুরের খাটিয়াডাঙায়। গাউসুলের মুখ ঝলসে যাওয়া সত্তেও শেষ দেখা দেখে মনকে সান্তনা দিতে ভিড় জমান এলাকাবাসী ও স্বজনরা।

এরপর গাউছুলের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় খাটুয়াডাঙা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে। যেখানে জড়িয়ে আছে মনিরামপুরের কৃতি সন্তান গাউছুলের শৈশবের স্কুল জীবনের সৃতি। সেই স্কুল মাঠেই ফায়ার সার্ভিসের বিভাগীয় ও যশোর জেলার কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে দেওয়া হয় গার্ড অফ অনার। ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সংগঠনের ব্যাক্তিবর্গ। এরপর কয়েক হাজার মানুষের উপস্থিতিতে রাত সাড়ে ১১টায় পড়ানো হয় গাউসুলের শেষ জানাযা। জানাযা শেষে গাউসুলের মরদেহ পুনরায় নিয়ে যাওয়া হয় বাড়িতে। সেখানে রাত ১২টায় পারিবারিক কবরস্থানে চির নিদ্রায় সায়িত করা হয় অগ্নিযোদ্ধা গাউসুলের নিথর দেহ।

 

স্বামীর অকাল মৃত্যুতে নির্বাক হয়ে গেছেন স্ত্রী কাকলী। বিলাপ করতে করতে মা আছিয়া বেগম অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছেন। আর বাবার বিরামহীন কান্নায় ভারী হয়ে গেছে গোটা পরিবেশ।
গাওসুল আজমের ৫ মাস ১০ দিন বয়সী ছেলে সিয়াম। অবুঝ শিশুটি জানে না এই বয়সেই সে পিতৃহারা হয়ে গিয়েছে।

গাওসুলের দাদা আব্দুস সামাদ জানান, ভোর সাড়ে তিনটার দিকে তারা জানতে পারেন তার নাতি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে চলে গিয়েছেন না ফেরার দেশে।

ফায়ার ফাইটার গাউসুলের পরিবারে গাউছুলই ছিলেন একমাত্র উপার্জনক্ষম। গাউছুলের বাবার চাষের জমিও তেমন নেই। ফলে বাবা হারানো শিশু সিয়ামকে সু-শিক্ষায় শিক্ষিত করে মানুষ করা নিয়ে ভাবিয়ে তুলছেন পুরো পরিবারটিকে।

নিহতের চাচা আকবর আলী বলেন, গাউসুল দেশের জন্য কাজ করতে গিয়ে আজ নিজেই শহীদ হয়ে গেলেন। অপরকে বাঁচাতে গিয়ে সে নিজেই চলে গেলেন না ফেরার দেশে। গাউছুলের ছোট্র ছেলেটি যেন মানুষের মতো মানুষ করতে পারে সেজন্য সরকারের কাছে সহোযোগিতা চান তিনি।

মমিরামপুর উপজেলা চেয়ারম্যান নাজমা খানম বলেন, নিহত গাউসুলের পরিবারের পাশে থেকে পিতৃহারা শিশু সিয়ামকে সু-শিক্ষায় শিক্ষিত করার পাশাপাশি সার্বিক সহোযোগিতা করে যাবো। তার মৃত্যুতে আমরা গভীর শোকাহত।

খাটুয়াডাঙ্গা গ্রামের বাবা আজগর আলী ও মা আছিয়া বেগমের দুই ছেলেমেয়ের মধ্যে গাওসুল ছোট। তিনি ২০১৬ সালে খাটুয়াডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেন। ২০১৮ সালে তিনি ফায়ার ম্যান হিসেবে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সে যোগ দেন। এরপর একই ইউনিয়নে (দুর্বাডাঙ্গা) গ্রামের কাকলীর সঙ্গে তার বিয়ে হয়। গাউসুল বর্তমান কর্মস্থল ছিলো বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ থানা। কিন্তু ছয়মাসের ডেপুটেশনে কর্মরত ছিলেন চট্টগ্রামের কুমিরা ফায়ার স্টেশনে। আর সেখানেই এই ভয়াবহ দূর্ঘটনার মধ্যে দিয়ে তার কর্মজীবনে সমাপ্তি ঘটলো।

প্রসঙ্গত, গত ৪ জুন রাত ৮টার দিকে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে কন্টেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে সেখানে ছুটে যান গাওসুলসহ তার সহকর্মীরা। সেখানেই তার গাড়িতেই আগুন ধরে যায়। এতে তার সহকর্মীদের মৃত্যু ঘটলেও গাওসুল আজম গুরুতর ঝলসে যান। রাতেই তাকে ঢাকার শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিট হাসপাতালে আনা নেওয়া হয়। রবিবার (১২জুন) ভোরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি পাড়ি জমান না ফেরার দেশে।

ভিডিও দেখতে এই লিংকে ক্লিক করুন

এএন-০১

আরো পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত

এই বিভাগের আরো খবর