Saturday, December 6, 2025

উজানের ঢলে বিপর্যস্থ ভবদহ বিলপাড়ের মানুষ, মৃত ব্যক্তির দাফন-সৎকারে ব্যাঘাত

শফিয়ার রহমান, মণিরামপুর
মঙ্গবার ভোরে মণিরামপুর উপজেলার আ¤্রঝুটা গ্রামে রোকেয়া বেগম (৬৫) নামের এক বৃদ্ধা হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছে। মৃতের বাড়ির উঠানে কোমর পানি থাকায় বাধ্য হয়ে ওই বৃদ্ধার শেষ গোসল ঘরের মধ্যে করাতে হয়েছে। পারিবারিক কবরস্থানেও পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় দাফনকার্য্য অন্যত্র করতে হয়েছে।
ঘটনাটি ঘটেছে অভিশপ্ত নামক ভবদহ এলাকা মণিরামপুর উপজেলার আ¤্রঝুটা গ্রামে। মৃত রোকেয়া আ¤্রঝুটা গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের স্ত্রী। এর আগে ভবদহ বিলপাড়ের দুই নারীর মধ্যে একজন নৌকায় উঠার সময় পড়ে গিয়ে এবং অন্য জন টিউবওয়েল পানি নিয়ে ফেরার সময় পা পিছলে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয়।
এভাবে অভিশপ্ত ভবদহের করাল গ্রাসে জীবন-যাপন বিপর্যস্থ হয়ে ভবদহ বিলপাড়ের মানুষ। খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকটের পাশাপাশি গো-খাদ্যেরও চরম সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়াও কেউ মারা গেলে দাফন-সৎকারের সমস্যা তো রয়েছে।
অভিশপ্ত ভবদহে স্থায়ী সমস্যার কারণে প্রায় চার দশক ধরে জলাবদ্ধতার শিকার যশোরের মণিরামপুর-কেশবপুর, খুলনার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা থানার ৮০টি গ্রামের বাসিন্দা। এ চারটি উপজেলার ৮০টি গ্রামের অধিকাংশ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ভবদহ এলাকা সংলগ্ন প্রায় সবকটি বিল ছাপিয়ে পানিতে বসতবাড়ি স্থায়ী ভাবে জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। এসব পরিবার বাড়িতে পানিবন্দি অবস্থায় থাকলেও খোঁজ খবর নিচ্ছেন না কেউ বলে ভূক্তভোগিদের অভিযোগ।
ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির সদস্য সচিব চৈতন্য পাল জানান, ভবদহের সমস্যার কারণে মানুষ যে অবস্থায় ছিলো, হঠাৎ ক’দিনের বৃষ্টিতে জল বেড়ে যাওয়ায় বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে মানুষের জীবনযাত্রা। এই মুহুর্তে আমডাঙ্গা খাল ¯্রােত ধারা সৃষ্টির জন্য যা করনীয় তাই করার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সংগঠনটি। গতকাল মঙ্গলবার ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটি মশিয়াহাটি হাই স্কুলের এক মিটিং করা হয়েছে। পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক রনজিত বাওয়ালী জানান, এই মুহুর্তে ভবদহ অঞ্চলের মানুষ বাঁচাতে ভবদহের ২১ ভেল্টের কপাট খুলে দেওয়ার বিকল্প নেই। এছাড়া আমডাঙ্গা খাল জল ধারা তৈরী করতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।
ওই অঞ্চলের স্থায়ী জলাবদ্ধতার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দায়ী করে রনজিত বাওয়ালী বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ভবদহের সমস্যাকে জিইয়ে রেখে ব্যবসা বাণিজ্য করে চলেছেন। এর সাথে এলাকার কিছু নামধারী নেতা ও জনপ্রতিনিধি জড়িত থাকার অভিযোগ করেন তিনি। সমস্যা সমাধানে দ্রুত টিআরএম (টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট) চালু, আমডাঙ্গা খাল খনন এবং শ্রী-হরি নদীর স্লুইচগেটের দক্ষিণ অংশের পলি অপসারণের দাবী জানিয়েছেন তিনি।
যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহিদুল ইসলাম জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড এ মুহুর্তে ২১ ভেল্টের মধ্য থেকে কয়েকটি ভেল্টের কপাট খুলে দিয়েছে।
এদিকে বাড়ি-ঘর পানিতে নিমজ্জিত থাকায় গত ৫ অক্টোবর উপজেলার পাঁচকাটিয়া গ্রামের পলাশ রায়ের স্ত্রী (২৩) পা পিছলে গুরুত্বও আঘাত পেয়ে মারা যান। গত ৮ অক্টোবর উপজেলার নেবুগাতি গ্রামের নিলু বাইনের স্ত্রী বৃদ্ধা যমুনা বাইন (৮৯) নৌকায় উঠার সময় পড়ে গিয়ে মারা যান। মঙ্গলবার উপজেলার আ¤্রঝুটা গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক গাজীর স্ত্রী রোকেয়া বেগম (৬২) মৃত্যু হলে এলাকায় পানিতে তলিয়ে থাকায় নিজ পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করতে পারেননি স্বজনরা। তার দাফন অন্যত্রে করা হয়েছে বলে জানাগেছে।

আরো পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত

এই বিভাগের আরো খবর