Saturday, December 6, 2025

টিআরএম চালুর দাবীতে ফুঁসে উঠেছে ভবদহ বিল পাড়ের দুর্গত মানুষ

শফিয়ার রহমান, মণিরামপুর: টিআরএম চালুর দাবিতে ফুসে উঠেছে ভবদহ বিল পাড়ের দুর্গত মানুষ। আকাশ বৃষ্টি ও উজানের ঢলে বাড়ি-ঘর হারানো দুর্গত মানুষ অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে ও দাবি আদায়ে পথে নেমেছেন।

রোববার ভবদহ বিলপাড়ের হাজার হাজার বানভাসি নারী-পুরুষ বন্যাকবলীত মনিরামপুর উপজেলার পাঁচাকড়ি স্কুল মাঠে পানিতে নেমে মানববন্ধন করেন। পরে অতিদ্রুত দুর্গত মানুষকে বাঁচাতে গণমাধ্যম কর্মীদের সামনে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন। এসময় জরুরী ভিত্তিতে মানুষকে মানবিক সহায়তা প্রদান, অতিদ্রুত টিআরএম বাস্তবায়ন, আমডাঙ্গার রোজি খাল খনন ও হরি, টেকা, মুক্তেশ্বরীসহ অন্যান্য নদী খনন সম্বলিত ৪ দফা দাবি বাস্তবায়নের ওপর জোর দেয়া হয়।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, এবারের আকাশ বৃষ্টি ও উজানের ঢলে জলাবদ্ধতায় ভবদহ বিলপাড়ের হাজার হাজার পরিবার পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। যশোর ও খুলনা জেলার মণিরামপুর, কেশবপুর, অভয়নগর, তালা, ফুলতলা ও ডুমুরিয়া উপজেলার ২৭ বিলের পানি ভবদহ স্লুইসগেট দিয়ে নিষ্কাসিত হয়। কিন্তু ভবদহ স্লুইচ গেট সংলগ্ন নদীতে পলি জমে তলদেশ উঁচু হওয়ায় বিলের পানি নিস্কাশিত না হওয়ায় ভবদহ বিলপাড়ের প্রায় তিনশ’ গ্রামে স্থায়ী জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।

জলাবদ্ধতার শিকার পানিবন্দি মানুষ বাড়ি-ঘর ছেড়ে রাস্তায় আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। ওই এলাকার হাজার হাজার হেক্টর কৃষি জমি, মাছের ঘের পানিতে তলিয়ে কোটি কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছে। পাউবো’র (পানি উন্নয়ন বোর্ড) আগে উভচর (এমফিভিয়েন) মেশিন দিয়ে ভবদহ স্লুইচ গেটের সামনে থেকে পলি অপসারনের কাজ করলেও বন্যা কবলিত এলাকায় টাকা অপচয় ছাড়া কোন কাজে আসেনি বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়।

হরি রিভার বেসিন পানি কমিটির সভাপতি আলহাজ্জ এড. কামরুজ্জামানের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন উপস্থিত ছিলেন মনিরামপুর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান উত্তম চক্রবর্তী বাচ্চু, নেহালপুর ইউপি চেয়ারম্যান নজমুস সা’দত, অভয়নগর উপজেলার পায়রা ইউপি চেয়ারম্যান ও পানি নিস্কাশন আন্দোলন কমিটির সেক্রেটারী বি ুপদ দত্ত, বেতনা রিভার বেসিন পানি কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহী, কপোতাক্ষ রিভার বেসিন পানি কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ ময়নুল ইসলাম, পাইকগাছা উপজেলা পানি কমিটির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক মলঙ্গী, যশোর জেলা পরিষদের সদস্য প্যানেল চেয়ারম্যান লায়লা খাতুন, সদস্য ফারুক হোসাইন প্রমুখ।

নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, ভবদহের এই সমস্যার সমাধান মুলত পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্তা ব্যক্তিরা চাননা। যে কারনে তারা বিভিন্ন সময়ে অবাস্তব প্রকল্প হাতে নিচ্ছেন। এতে সরকারের শত শত কোটি টাকার অপচয় ছাড়া কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। তারা বলেন, এ এলাকার মানুষ ও জবি বৈচিত্রকে বাঁচাতে আইডব্লিউএম (ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং)-এর স্টাডির উপর ভিত্তি করে নিকটস্থ বিলে টিআরএম সম্বলীত যে প্রকল্প প্রণীত হয়েছিল যথাশীঘ্র তা শুরু করতে হবে।

উল্লেখ্য ১৯৬১ সালে ভবদহ অ লে যশোর জেলার মনিরমাপুর উপজেলার আড়পাতা, বিল কপালিয়া, অভয়নগর উপজেলার দামুখালি, ভবানিপুর, দত্তগাতি, বারান্দি, চুমড়ডাঙ্গা ও খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার কাটেঙ্গা, চেঁচুড়ি, বরুণাসহ ২৭ বিলের পানি নিস্কাশনে স্লুইস গেট নির্মাণ করা হয়। বর্ষা মৌসুমে ২৭ বিলের আকাশের বৃষ্টির পানি ভবদহ স্লুইস গেট দিয়ে নিস্কাশিত হয়। ১৯৮৬ সালে স্লুইস গেটে পলি জমে স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হলে ১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যায় ভবদহ অ লের কুলটিয়া, মশিয়াহাটি,মহিষদিয়া, পোড়াডাঙ্গা, সুজাতপুর, ডুমুরতলা, হাটগাছা, সুন্দলীসহ কয়েক’শ গ্রামের মানুষ অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়ে। এবারের বৃষ্টি ও উজানের ঢলে ওই এলাকায় দীর্ঘমেয়াদী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।

 

আরো পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত

এই বিভাগের আরো খবর