Saturday, December 6, 2025

মণিরামপুরের মরণ ফাঁদ নামক ভবদহ

শফিয়ার রহমান, মণিরামপুর: মনিরামপুরের পূর্বা লের মানুষের মরণ ফাঁদ ভবদহ। ভবদহ সংস্কার না হওয়ার কারণে প্রতিবছর ৭/৮ মাস এলাকার মানুষ পানি বন্দি হয়ে থাকে। যে কারণে এলাকার গবাদি পশু থেকে শুরু করে বয়োস্ক মানুষও পানি বাহিত রোগসহ বিভিন্ন সমস্যা ভুগছে। স্থানীয় নেতারা সাংবাদিকদের নিয়ে নিজের মোবাইল ফোনে কোমর পানিতে নেমে অসহায় বয়োস্ক মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে পত্রিকায় ও ফেসবুকে ছেড়ে দিয়ে নাম ফুটিয়ে আসছে। বর্তমান পানি বন্দি মানুষের সরেজমিন দেখার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দৃষ্টি কামনা করেছে ভূক্তভুগিরা। পানি বন্দি মানুষের মন বুঝানো জন্য ৮০টি গ্রামের কোমর পানি সেচ পাম্পের মাধ্যমে বিল শুকানোর স্বপ্ন দেখছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও বিএডিসি (বাংলাদেশ কৃষি উন্নযন কর্পোরেশন)। ভবদহ নাম ভাংঙ্গীয়ে বছরের পর বছর ধরে সরকারী কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করছে একটি কুচক্র বলে অভিযোগ।

সরেজমিনে দেখাযায়, যশোর সদর, অভয়নগর, কেশবপুর, ডুমুরিয়া ও মণিরামপুর উপজেলার পূর্বা ল গ্রাম গুলো এক মাত্র ভবদহ কারণে প্রতি বছরে ৭/৮ মাস মানুষ পানি বন্দি হয়ে থাকতে হয়। ভবদহ কারণে মুক্তেশ্বরী ও টেকা নদিতে পানি প্রবাহিত না হওয়ার কারণে নদী দু’টিতে পলি জমে তলা ভরাট হয়ে কচুড়ি পানায় ডেকে গেছে। এ নদীতে কোন স্রোত প্রবাহিত না থাকায় পানি বন্দি মানুষ দুচিন্তায় পড়েছে। জয়পুর, ব্রা‏হ্মনডাঙ্গা, উত্তরপাড়া, চাঁপাকোনা, ঢাকুরিয়া, চান্দঁয়াসহ অনেক গ্রামের মাঠ ভরা ধান রয়েছে। ধান ক্ষেতে বাইল বের হওয়ার জন্য থোড় হয়ে দাড়িয়ে। সে জমিতে পানির মধ্যে কোন রকম ধান গাছের পাতা দেখা যাচ্ছে ।

এলাকার কৃষকের ধারণা ৪/৫ দিনের মধ্যে যদি পানি না সরে তাহলে হাজার হাজার বিঘা জমির ফসল নষ্ট হয়ে যাবে। বর্তমান ৮০টি গ্রামের মানুষ পানি বন্দি হয়ে শিশু, বয়োস্ক লোক ও গরু/ছাগল নিয়ে কতো কষ্টোর মধ্যে আছে সে কথা বুঝানো যাবে না, নিজ চোখে দেখতে হবে। যে কারণে এলাকার গরু/ছাগল ও মানুষসহ সকল প্রানী পানি বাহিত রোগসহ বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছে। এরই মধ্যে মানুষ মৃত হলে কবর ও সৎ কাজ করাটা বর্তমান বড় কষ্ট তাদের। স্থানীয় নেতারা সাংবাদিকদের নিয়ে আবার নিজের মোবাইল ফোনে কোমর পানিতে নেমে অসহয় বয়োস্ক মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে পত্রিকায় ও ফেসবুকে ছেড়ে দিয়ে নাম ফুটিয়ে আসছে।

গত ৪/৫ বছর ধরে পূর্বা লের মানুষ সামান্যা বৃষ্টি হলে, বেশি পানি বন্দি শিকার হতে হচ্ছে। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভবদহ সংস্কার করার নামে বিভিন্ন প্রকল্প খাড়া করে নাম মাত্র কাজ করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাত করে চলেছে একটি নাম ধারি চক্র। যে চক্রটি ভবদহ নাম ভাংঙ্গিয়ে টাকা আত্মসাত করে চলেছে তাদেরকে শাস্তি দিতে পারে শুধু মা মানুষের নেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এলাকার লোকজনের অভিযোগ ভবদহ সংস্কারের নামে ৪/৫ বছরে কত টাকা বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে, সে সব তথ্য নিয়ে সরেজমিন দেশ নেত্রী শেখ হাসিনাকে দেখার জোর দাবী জানিযেছে পানি বন্দি মানুষেরা।

ঘোলা জলে মাছ শিকার করার জন্য বর্তমান পানি বন্দি মানুষে মন বুঝাতে ৮০টি গ্রামের মাজা পানি নিংস্কাশনের জন্য ৩০টি এইচপি (হর্সপাওয়ার) ও ২০ টি সেচ পাম্প মাধ্যমে বিল শুকানোর স্বপ্ন দেখছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও বিএডিসি (বাংলাদেশ কৃষি উন্নযন কর্পোরেশন) যৌথ উদ্যোগে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

যপবিস-২-এর ডিজিএম (কারিগরি) আবু হেনা শফিক কামাল জানান, পাউবোর আবেদনের প্রক্ষিতে সেচ পাম্প কার্যক্রম চালাতে গত ৪ জানুযারি ২০টি সংযোগ দেওয়া হয়। পাম্প চালাতে ৭০০ কেভিএ ট্রান্সফরমা বসাতে কন্সট্রাকশন ব্যয় হয় ৭ লাখ ৬০ হাজার এবং ট্রান্সফরমার জন্য ২৫ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়। পুরো ব্যয় সমিতির পক্ষে করা হয়েছে। এছাড়া পাউবো প্রতি মাসে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করে ১৪ লক্ষ টাকা। বিএডিসি ৮ লেবারের জন্য প্রতিদিন ৪ হাজার টাকা ব্যয়সহ সেচ পাম্প পানি সরবারাহে পাউবো আওতায় প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয় টেকা নদি খনন করা হেেচ্ছ।

ভবদহ পানি নিস্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক রণজিত বাওয়ালী জানান, ভবদহ সমস্যার কারণে ৮০টি গ্রামের মানুষ জলাবদ্ধতার শিকার হয়ে মানবতার জীবন যাপন করছে। তিনি পানি উন্নযন বোর্ডের অসাধু কর্মকর্তাদের দায়ী করে বলেন, মানুষকে জিম্মি করে তারা ইচ্ছা মত ভবদহ সমস্যা সমাধানের নামে বড় বড় প্রকল্প তৈরি করে লুটপাট করে খাচ্ছে। যে কারণে যুগের পর যুগ ভবদহ পাড়ের মানুষের চোখের পানি পড়লেও ভবদহ কোন সমস্যা সমাধান হচ্ছে না। ইতি মধ্যে সেচ প্রকল্পের নামে আর একটি প্রকল্প তৈরি করে পানি অপসারণের কাজ চালাছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আবুল হাসান জানান, ভবদহ সমস্যার কারণে উপজেলার বিলকপালিয়া, কুমারঘাটা, বিল বোকড়সহ অনেক বিলে এবছর ৩ হাজার বিঘা জমিতে কোন ফসল করতে পারেনায় কৃষক। যশোর পানি উন্নযন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহিদুল ইসলাম জানান, পানি উন্নযন বোর্ড চেষ্টা করছেন, ভবদহ সমস্যা সমাধানের জন্য। ইাতমধ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহন করতে চলেছি। ভবদহ বিভিন্ন সংগঠনের নামে যে সব সংগঠন করা হয়েছে এক শ্রেনির নেতারা এখন ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে।

 

আরো পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত

এই বিভাগের আরো খবর