Saturday, December 6, 2025

ভবদহ এলাকার ৮০টি গ্রামের মানুষ জলাবদ্ধতায়

শফিয়ার রহমান, মণিরামপুর: মণিরামপুর, কেশবপুর, অভয়নগর, ডুমুরিয়া এবং ফুলতলা থানার সীমানাবর্তী স্থানে ভবদহের স্লুইগেট। যে গেট দিয়েই ভবদহের উত্তরের ২৭টি বিলের পানি বের হয়। কিন্তু ভবদহের ¯্রােত মুখে পলি ভরাটসহ নানা সমস্যার সৃষ্টি হওয়ায় ওই অ লের ৮০টি গ্রাম এখন স্থায়ী জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। আর এসব সমস্যার জন্য ভূক্তভোগী জনগণ পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দায়ী করছেন।

খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, ভবদহের উত্তরের ২৭টি বিলের ¯্রােত প্রবাহ হওয়ায় মুক্তেশ্বরী এবং টেকা নদী হয়ে ভবদহে মিলিত। জানাগেছে, ভবদহের উত্তরের এ দুটি নদীতে আদৌ কোন ¯্রােত না থাকায় উজানের পানি মানুষের বসতবাড়ি প্লাবিত হয়ে পড়েছে। যার ফলে ওই সব অ লের বাসিন্দারা জলাবদ্ধতার শিকার হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। কেবল তাই নয়, এলাকায় মৃত ব্যক্তিদের দাফন-কাফন করতেও হিমশিম খাচ্ছেন তারা। এসব ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সরকারের নীতি নির্ধারকদের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক রনজিত বাওয়ালী জানিয়েছেন, ভবদহের সমস্যার কারণে ওই অ লের ৮০টি গ্রামের মানুষ জলাবদ্ধতার শিকার হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তিনি জানান, তার নিজ গ্রাম ডুমুরতলা গ্রামের ১৪৮টি পরিবার স্থায়ী জলাবদ্ধতার শিকার হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ডের অসাধু কর্মকর্তাদের দায়ী করে বলেন, মানুষকে জিম্মী করে তারা ভবদহের সমস্যা সমাধানের নামে বড় বড় প্রকল্প তৈরী করে লুটপাট করে চলেছেন। যে কারণে যুগের পর যুগ ভবদহ পাড়ের মানুষের চোখের পানি পড়লেও ভবদহের মূল সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। ইতিমধ্যে সেচ প্রকল্পের নামে প্রকল্প তৈরী করে পানি অপসারণের কাজ চালিয়েছেন।

অপরদিকে, লিকেজ দিয়েই আবার সেই পানি প্রবেশ করানো হচ্ছে। ফলে ভবদহের স্থায়ী সমাধানের কোন সম্ভব্যনাই দেখছেন না তিনি। তবে এই মূহুর্তে এলাকায় ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির মশিয়াহাটি আ লিক কমিটির আহবায়ক শিক্ষক উৎপল বিশ্বাস জানিয়েছেন, ভবদহের সমস্যার স্থায়ী কোন সমস্যা সমাধান হচ্ছে না। সম্প্রতি অতি বৃষ্টিপাতের ফলে এলাকায় জল বেড়ে যাওয়ায় গ্রামের ভিতরে উজানের পানি ঢুকে পড়েছে। এছাড়া মুক্তেশ্বরী ও টেকা নদীতে আদৌ কোন স্রত না থাকায় সহসা পানি কমার কোন সম্ভাবনা দেখছেন না এলাকাবাসী। এরফলে এলাকার মানুষ মারা গেলে সৎকার এবং কবরস্থ করতে হিমশিম খাচ্ছেন জনগণ।

দীর্ঘ দেড় বছর পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুললেও মণিরামপুর অংশে ২৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানিবন্দি হয়ে থাকায় সেখানে পাঠদান সম্ভব হচ্ছে না। পানির সাথে যে সব পরিবার যুদ্ধ করে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন তাদের অধিকাংশ বাড়ি এবং রাস্তার সাথে বাঁশের সাঁকো তৈরী করে নিয়েছেন। স্থায়ী জলাবদ্ধ হয়ে পড়ার কারণে গবাদি পশু বলতে কিছুই নেই এসব পরিবারের। চরম কষ্টে রয়েছেন খাদ্য এবং বিশুদ্ধ খাবার পানি নিয়ে। তবে এ অবস্থায় জীবন যাপন করলেও ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার গুলোর খোঁজ খবর নিচ্ছেন না কেউ।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আবুল হাসান জানিয়েছেন, ভবদহ সমস্যার কারণে মণিরামপুরের বিলকপালিয়া, কুমারঘাটা, বিল বোঁকড়, কড়ামারা এবং হরিনা বিলের এ বছর ৩ হাজার বিঘা আবাদযোগ্য জমিতে কোন ফসল করতে পারেননি চাষিরা। ফলে চরম ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন এ অ লের কৃষকরা। স্থায়ী জলাবদ্ধতার কারণে ঘের ব্যবসায়ীরাও ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। সম্প্রতি অতি বৃষ্টিপাত এবং ভবদহ সমস্যার কারণে ¯্রােত না থাকায় বিল নদীর একাকার হয়ে পড়েছে। ফলে বিলে মৎস্য চাষি ঘের মালিকরা চরম পরিস্থিতি অতিক্রম করছেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কুমার ঘোষ।

ভবদহ সংলগ্ন মনোহরপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাষ্টার মশিয়ূর রহমান, কুলটিয়া ইউপি চেয়ারম্যান শেখর চন্দ্র রায়, নেহালপুর ইউপি চেয়ারম্যান নাজমুস সাহাদাত এবং হরিদাসকাটি ইউপি চেয়ারম্যান বিপদ ভঞ্জন পাড়ে জানিয়েছেন, সম্প্রতি অতি বৃষ্টিপাত সহ ভবদহ সমস্যার কারণে এলাকার জনসাধারণ চরম মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এসকল পরিস্থিতির জন্য এলাকার জনপ্রতিনিধিরাও পানি উন্নয়ন বোর্ডের অসাধু কর্মকর্তাদের দায়ী করছেন।

তবে এসব অভিযোগকে অস্বীকার করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড। যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহিদুল ইসলাম জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড বরাবরই চেষ্টা করছেন ভবদহের সমস্যার সমাধানের জন্য। ইতিমধ্যে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করতে চলেছেন। ভবদহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠনের নামে যে সব সংগঠন করা হয়েছে তার এক শ্রেণীর নেতারা এটাকে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছেন।

 

আরো পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত

এই বিভাগের আরো খবর