Saturday, December 6, 2025

কেশবপুরে সন্ত্রাসীদের দাপটে আতঙ্কে মানুষ, বাদীরা ঘরছাড়া, আসামিরা প্রকাশ্যে

কেশবপুরে ভয়াভয় রুপ ধারণ করেছে সন্ত্রাসী চক্র। জমি দখল, ঘের দখল, যৌন হয়রানি, মাদক ব্যবসা ও মাদক গ্রহণ, চাঁদাবাজি, কুপিয়ে জখম,  খুন ও গুমের হুমকি ধামকি সহ সমাজের অপরাধ জগতের এমন কাজ নেই যা তারা করছেন না।  তাদের ভয়ে অনেকে এলাকাছাড়া, আবার কেউ কেউ ব্যবসা বাণিজ্য গুটিয়ে দেশান্তরি হয়েছেন। সাংবাদিক, নাগরিক কমিটির নেতৃবৃন্দরাও পার পাচ্ছেন না। চক্রটি কেশবপুরবাসীর জন্য ভয়ানক এক আতঙ্ক। চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে  ভুক্তভোগীরা একের পর এক থানায় অভিযোগ দিচ্ছেন।  মামলা হচ্ছে একের পর এক কিন্তু অপরাধীরা থেকে যাচ্ছে ধরা ছোয়ার বাইরে। চক্রটি শহরজুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন আর মামলার বাদীরা অনেকেই ঘরছাড়া। বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন স্থানীয়রা। অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় এক প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধির ছত্রছায়ায় থাকায় পুলিশ এ্যাকশান নিতে গেলেই ওই নেতা বাধা হয়ে দাড়াচ্ছেন। কেশবপুরবাসী এ সন্ত্রাসীদের হাত থেকে রক্ষা পেতে পুলিশের উর্দ্ধতন মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
পৌর শহরের সাহাপাড়া এলাকার অলোক সাহার ছেলে অনিক সাহা। পেশায় একজন মুদি ব্যবসায়ী। কেশবপুর বাজারের হাসপাতাল রোডে রয়েছে তার দোকান। এছাড়াও তিনি কেশবপুর উপজেলা হিন্দু যুব মহাজোটের সক্রিয় সদস্য। সাম্প্রতি তিনি কেশবপুর পৌরশহরের আতঙ্ক সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যদের হামলার শিকার হয়ে থানায় মামলা করেন। মামলায় বাহিনী প্রধান জামালসহ আরো ৫জনকে আসামি করা হয়।
মামলায় অনিকের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে একলাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিল ওই চক্র । একপর্যায়ে গত ২৭ আগস্ট দুপুর আড়াইটায় জামাল ও কেশবপুরের মধ্যকুল গ্রামের শামীম হোসেন, একই গ্রামের মকবুল হোসেন সরদারের ছেলে সাইফুল ইসলাম , মৃত মজিদ দফাদারের ছেলে জুয়েল হোসেন, বায়সা গ্রামের মুকুল হোসেনের ছেলে মাসুদ হোসেন , আলতাপোল উপজেলা এলাকার কামরুজ্জামানের ছেলে মাহি রহমান সহ  অজ্ঞাত ৮-১০ জন তার দোকানে হাজির হয়।মামলায় আরো উল্লেখ করা হয় তাদের কাছে হকিস্ট্রিক, লোহার রডসহ বিভিন্ন অস্ত্রছিল। দোকান বন্ধ পেয়ে অনিকের বাসার সামনে চলে যায় তারা। দুপুর তিনটায় তাদের মধ্যে শামীম ০১৩২১৫৮২১৬৩ নাম্বার থেকে কল করে কৌশলে অনিককে ফোন করে ডেকে আনে। এরপর জামাল সেই চাঁদার একলাখ টাকা দিতে বলে। চাঁদার টাকা না দেওয়ায় অনিককে প্রথমে মোটরসাইকেলে তুলে অপহরণের চেষ্টা করে। এরপর অন্য আসামিরা অনিককে লোহার রড দিয়ে আঘাত করে গুরুতর জখম করে। এ হামলায় অনিকের ডান হাত ভেঙ্গে যায়। অনিকের চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে আসলে জামাল গং চাদার একলাখ টাকা নাদিলে হত্যার হুমকি দিয়ে চলে যায়। পরে পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে।এ ঘটনায় ২৯ আগস্ট কেশবপুর থানায় অনিক একটি মামলা করেন। যার নং-১৩/১২৭। হিন্দু যুব মহাজোটের জেলা শাখার নেতৃবৃন্দ জড়িতদের আটকের দাবিতে প্রেসক্লাব যশোরের সামনে মানববন্ধনও করেন। কিন্তু এখনো কেউই আটক হয়নি। মামলার পর এখন প্রাণভয়ে এলাকাছাড়া হয়েছেন অনিক  আর চক্রের প্রধান জামাল বুক ফুলিয়ে শহর দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
এ বিষয়ে কেশবপুরের  বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের একটি মামলার বাদী মিজানুর রহমান শিমুল বলেন,  তার কাছে ২ লাখ টাকা চাঁদা চাওয়া হয়। এরমধ্যে ৩০ হাজার টাকা নেয় জামাল গং।  এছাড়াও তার কাছ থেকে মোটরাইকেল, ব্লাংক চেক ও স্টাম্পে সই করিয়ে নেয়। পরে মেয়র সহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।  এরপর থেকে তিনি কেশবপুর ছাড়া। কেশবপুর গেলে হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান।
কেশবপুর উপজেলার ব্যবসায়ি মফিদুল ইসলাম বলেন, চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে মামলা করে তিনি এলাকা ছাড়া। তিনি জীবন নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এ বিষয়ে তিনি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

কেশবপুরে সন্ত্রাসীদের দাপটে আতঙ্কে মানুষ, বাদীরা ঘরছাড়া, আসামিরা প্রকাশ্যে এদিকে,  আরেক ভুক্তভোগি  যুগান্তরের কেশবপুর উপজেলা প্রতিনিধি ও উপজেলা নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান বলেন, আমরা যেখানে নাগরিক অধিকার নিয়ে কাজ করছি, সমাজের বিভিন্ন অন্যায় নিয়ে কাজ করছি সেখানে আমাদের উপর হামলা চালানো হচ্ছে। শেখ হাসিনার সরকারের সময় এ ধরনের আচরণ আমরা প্রত্যাশা করিনা।
এ বিষয়ে কেশবপুর উপজেলা নাগরিক কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবু বকর সিদ্দিকী বলেন, কেশবপুরে হঠাৎ ভয়াভয় রুপ ধারণ করেছে কিশোর গ্যাং। এখনই এর লাগাম টানার দরকার। অন্যথায় কেশবপুরের যুব সমাজ ধংস হয়ে যাবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। একই সাথে বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেন।এ বিষয়ে কেশবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ বোরহান উদ্দীন বলেন, তারা সন্ত্রাসরোধে নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন। অনিক সাহার উপর হামলার ঘটনায় মামলা হলেও  আসামীদের আটক করতে পারেননি বলে তিনি স্বীকার করেন। তবে, আটক অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
এদিকে,  স্থানীয়রা জানান, আসামিদের মুল আড্ডাখানা হচ্ছে কেশবপুর পৌরসভার মুল গেটের বিপরীতে চক্রবাক ক্লাবে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সন্ত্রাসীদের আনাগোনা ওই ক্লাবে। এছাড়া তারা বাসস্টান্ড, সাবেক সুচিত্রা হলের সামনে, খ্রিষ্টান মিশনের পেছনের একটি ঘেরে  দিনরাত অবাধ চলাচল থাকলেও পুলিশ তাদের খুজে পাচ্ছেনা এ বক্তব্য মানতে রাজী নয় সচেতন মহল।

সূত্রঃ গ্রামের কাগজ

আরো পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত

এই বিভাগের আরো খবর