‘২০০৭ সালে ব্যবসায়ের কাজে দেশের বাইরে গিয়ে তাজিকিস্তানের এক ক্রীড়া সংগঠকের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল। তিনি ব্যবসার পাশাপাশি ফেন্সিংয়ের সঙ্গেও জড়িত। আর তার মাধ্যমেই ফেন্সিংয়ে আমার পথ চলা শুরু। তখন তিনি মস্কোতে ফেন্সিং বিশ্বকাপে আমাদের দাওয়াত দিল। ওখানেই অনেকের সঙ্গে পরিচয় হলো, আর খেলাটাও আমার ভালো লাগলো। এরপরই দেশে এসে শুরু করলাম ফেন্সিং নিয়ে কাজ। ছেলে-মেয়ে পাই না। ইনুস্ট্রুমেন্ট নাই। কোচ নাই। নতুন খেলা সবাই ভয় পায় শরীরে লাগবে। এভাবেই অনেক ঝড়-ঝাপটা পার করে আজকের বাংলাদেশ ফেন্সিং এসোসিয়েশন।’বাংলাদেশে ফেন্সিং প্রতিষ্ঠার গল্প এভাবেই ‘ডেইলি বাংলাদেশ’ এর কাছে বলছিলেন বাংলাদেশ ফেন্সিং অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) কামরুল ইসলাম। সাফ গেমসে সোনাজয়ী বাংলাদেশ দলের সদস্যরা। ছবি: ডেইলি বাংলাদেশ সাউথ এশিয়ান গেমস (এসএ)-২০১৯ এ ফাতেমা মুজিবের সোনা জয়ে পর শিরোনামে আসে ফেন্সিং। এ ইভেন্টে বাংলাদেশের ঘরে এসেছে একটি সোনার পাশাপাশি তিনটি রুপা ও সাতটি ব্রোঞ্জ। যার হাত ধরেই দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ফেন্সিং। যার নেতৃত্বেই ছোট একটা অ্যাসোসিয়েশন হয়েও সবাইকে চমকে দিয়ে এসএ গেমসে এগারটি পদক পেয়েছিল বাংলাদেশ। সেই ক্রীড়া সংগঠক অবসরপ্রাপ্ত মেজর কামরুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে সরিয়ে নতুন অ্যাডহক কমিটি ঘোষণা করেছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। সেলিম ওমরাও খান নামে এক ব্যক্তিকে করা হয়েছে নতুন সাধারণ সম্পাদক। যার সঙ্গে ফেন্সিং তো দূরের ব্যাপার, সম্পর্ক নেই ক্রীড়াঙ্গনেরও। তাকে চেনেন না তেমন কোনো ক্রীড়া সংগঠক বা কোনো ক্রীড়া সাংবাদিকও। পুরনো কমিটি ভেঙে দেওয়ার খবরে বিস্মিত কামরুল ইসলাম বলেন, হুট করেই শুনলাম আমাকে সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কোনো কিছুই বুঝলাম না, জানলাম না।ফেন্সিংয়ের পেছনে গত ১৪ বছর ধরে আছে আমার পরিশ্রম ও চেষ্টা। বন্ধু-বান্ধবদের সাহায্য-সহযোগিতায় একটু একটু করে এগিয়ে নিয়েছি খেলাটিকে। এসএ গেমসে ফেন্সিংয়ে সোনা জয়ের পর খেলাটি সবার চোখে পড়ে। এখান থেকে আমাকেই সরিয়ে দেয়া হলো! খুব কষ্ট নিয়ে ফেন্সিংয়ের সাবেক সাধারণ সম্পাদক যোগ করেন, কারো পছন্দ না হলে আমাকে ডেকে বললেই সরে যেতাম। এভাবে সরিয়ে দিয়ে অপমান করার দরকার ছিল না। ১৬ আগস্ট জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের ওয়েব সাইটে ক্রীড়া পরিষদ সচিব মাসুদ করিম স্বাক্ষরিত সরকারি প্রজ্ঞাপনে ২৭ সদস্যের অ্যাডহক কমিটি প্রকাশ করা হয়েছে। নতুন এ কমিটি স্বাক্ষরিত হয়েছে ১২ আগস্ট, যা অফিসিয়ালি কাউকে জানানো হয়নি। তবে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছে নবগঠিত বাংলাদেশ ফেন্সিং অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা। যেখানে ডাকা হয়নি গত কমিটির, যারা বর্তমান কমিটিতে আছেন তাদের কাউকেই। গত কমিটির আট জনের জায়গা হয়েছে বর্তমান কমিটিতে তাদের মধ্যে একজন সিলেক্টেড সদস্য মাহাজাবিন হাশিম। শুধু পদোন্নতি পেয়ে সদস্য থেকে সহ-সভাপতি হয়েছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতর্কিত সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ। এছাড়া একই পদ যুগ্ম সম্পাদক পদে বহাল আছেন রেজাউর রহমান সিনহা, সদস্য পদে আছেন বোরহান উদ্দিন ও এএফএম আজিজ রাজু। এছাড়া গত কমিটির এক নম্বর সহ সভাপতি এ টি এম সাইদুল আলম ও তিন নম্বর সহ সভাপতি লে. কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) হারুন উর রশীদ চৌধুরীকে অবনতি দিয়ে সদস্য করা হয়েছে। সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) কামরুল ইসলামকে করা হয়েছে বর্তমান কমিটির চার নম্বর সহ-সভাপতি। এছাড়া নতুন কমিটির বেশিরভাগ মানুষই ক্রীড়াঙ্গনের বাইরের। আছেন বহুল আলোচিত প্রফেসর নিম চন্দ্র ভৌমিক। শোনা যাচ্ছে, বাংলাদেশ ফেন্সিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শোয়েব চৌধুরী ক্রীড়া পরিষদের সচিব মাসুদ করিমের বন্ধু ও ক্লাসমেট। তাই শোয়েব চৌধুরী তার নিজের ইচ্ছা মত কমিটি তৈরি করিয়ে নিয়েছেন। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব মাসুদ করিমের এ কমিটি দেওয়া নতুন কিছু নয়। ২০১৭ সাল থেকেই জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিবের চেয়ার আগলে আছেন এ অতিরিক্ত সচিব। চালাচ্ছেন নিজের খেয়াল খুশি মতই। বেশিরভাগ অ্যাডহক কমিটিতেই রয়েছে ক্রীড়াঙ্গনের বাইরের মানুষ। এ বিষয়ে ক্রীড়া সংগঠকরা মনে করছেন, এসব বিষয় বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনকে পেছনে ঠেলে দিচ্ছে। আর এভাবে চলতে থাকলে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে আর ক্রীড়া সংশ্লিষ্ট মানুষ থাকবে না।
অনলাইন ডেস্ক







